আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবরের গল্প

হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন। কষ্টে আমার মত অনেকের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। যখন তখন চোখে জল এসে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে তার কবর নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া। রহস্যময় হুমায়ুন তার মৃত্যুটাকেও রহস্যময় করে যেতে ভোলেননি।

দুই বিপরীতমুখী পরিবারের কাছে নিজের লাশটি রেখে গেলেন একখণ্ড শক্ত দড়ীর মত। এবার হবে দড়ি টানাটানি খেলা! নিজের সমগ্র জীবন সৌন্দর্যের চর্চা করে এবার তার শখ হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুন্দর একটি খেলা দেখার! এ এক বৈপরীত্য হুমায়ুন নিজের মতে করে ভালবেসেছেন! এই দোদুল্যমানতাই হুমায়ুনের জীবন, তার সাহিত্যের রসদ। কখনো হিমু, কখনো মিসির আলির মাধ্যমে খেলেছেন লজিক আর এন্টি লজিকের নিপুন খেলা। এই খেলা তো তার কল্পনার খেলা নয়, নিজ জীবনের সিদ্ধান্তের দোদুল্যমানটার খেলা। হিমু, মিসির আলি যেমন তার বাক্তিত্ত্বের দুই বিপরীত মেরু তেমনি তার ভালবাসার বৈপরীত্য হচ্ছে শাওন আর গুলতেকিন।

হুমায়ুন দুজনকেই অসম্ভব ভালোবাসতেন কিন্তু জানতেন তার সীমাবদ্ধটা। প্রকৃতি প্রেমিক হুমায়ুন ভালই বুঝতেন প্রকৃতির নিয়ম। দুজঙ্কে একসঙ্গে তিনি ভালবাসতে পারবেন না। তিনি তা করেনও নি। তবে আমার মনেহয় হুমায়ুনের মনের গভীরে কোথাও একটা ব্যাথার মত সারাক্ষন অবস্থান করতেন গুলতেকন, নুহাশ, শিলা, নোভা এবং বিপাশা।

প্রচণ্ড মানসিক শক্তি দিয়ে তিনি এই বিষয়টিকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন...কিন্তু তা তার বুকের অজানা প্রকোষ্ঠে অবশ্যই ছিল তার ক্যানসার এর মতই প্রবল। আজ মৃত্যু হুমায়ুন আর তার জীবনব্যাপি বয়েবেড়ানো বৈপরীত্যকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যে আমাদের কদর্যতা তার শৈল্পিক বৈপরীত্যের সারল্যকে আঘাত করেছে ভিশন জোরে। হুমায়ুন খুব কষ্ট পাচ্ছেন আমি নিশ্চিত। শাওন কিংবা শিলা কেউই চাননা হুমায়ুন কষ্ট পান, তবে তারা কেন একটু ছাড় দিচ্ছেন না! আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন আমি দেখি নানক যাচ্ছেন হুমায়ুনের লাশের সুরাহা করতে। বেচারা হুমায়ুন! জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে কত তফাত! আজিবন আপোষহীন, খেয়ালি একজন মানুষের লাশ কত অসহায়! কত নির্ভরশীল! আজিবন রসিক হুমায়ুন তার মৃত্যু দিয়েও আমাদের সঙ্গে রসিকতা করে গেলেন! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।