আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনমজুর হাশেমের 'আত্মহত্যা': দারিদ্র বিমোচনের নামে দরিদ্র নিধন আর কতদিন?

মাথা নীচু, দু’হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আমগাছে ঝুলছেন যে মানুষটি তিনি কোন রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি না, তিনি কালো টাকার মালিক ছিলেন না, কোটি কোটি টাকার ট্যাক্স ফাকি দেন নাই, ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করেন নাই। এইসব করেন নাই বলেই হয়তো তিনি আমগাছে ঝুলছেন। কয়েক হাজার টাকার ক্ষুদ্র ঋণ না নিয়ে তিনি যদি কায়েক হাজার কোটি টাকার বৃহৎ ঋণ নিতে পারতেন তবে তাকে দুটি এনজিও থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে ১হাজার ১২৫ টাকার কিস্তি দেয়ার চাপের মুখে পড়তে হতো না, নিরুপায় হয়ে গতকাল ভোরে তাকে আত্মহত্যাও করতে হতো না। সূত্র: ঋণের টাকা দিতে ব্যর্থ দিনমজুরের আত্মহত্যা ঋণের চিন্তায় আত্মহত্যা! ক্ষুদ্র নামক উন্নয়ণ ব্যাবসায়ী এনজিও দ্বীপ একবার ১৫ হাজার ২০০ এবং পরে এনজিও আশা ২৩ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ দেয় দিনমজুর আবুল হাশেম মিজি(৪৫)র স্ত্রী’র নামে যার সাপ্তাহিক কিস্তি দাড়ায় যথাক্রমে ৪৫০ ও ৬৭৫ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ১১২৫ টাকা। একজন দিনমজুরের পক্ষে এই ক্ষুদ্র ঋণের টাকা এমন কোন খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব যেখান থেকে এমন লাভ হবে যে সপ্তাহে সপ্তাহে ১১২৫ টাকা কিস্তি দিতে পারবেন? শুধু দিনমজুর বলে কথা না, বাংলাদেশে এমন কোন বৈধ ব্যাবসা খাত আছে যেখানে ১৫ হাজার(কিংবা ২৩ হাজার) টাকা বিনিয়োগ করে সংসারের খরচ সামাল দেয়ার পরও একেবারে প্রথম সপ্তাহ থেকেই নিয়মিত সপ্তাহে ৪৫০ টাকা(কিংবা ৬৭৫ ) কিস্তি দেয়া সম্ভব? রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ যারা নেন তারা কি প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঋণের কিস্তি দেন? ৫০০ কোটি টাকা ঋণ করে নিয়ে তারা কি প্রথম সপ্তাহ থেকেই ১১ কোটি টাকা((সুদের হার মাত্র ১৫%) শোধ করতে পারবেন? যদি বৃহৎ ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণের মতো নির্মম হারে সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় শুরু হয় তাহলে দেশের কয়টা আমগাছে(কিংবা সিলিং ফ্যানে) কয়জন ঋণ খেলাপি ঝুলবেন? ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়মিত খবর। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের দিনমজুর সামাদ , বরিশালের গৌরনদীর কিশোর ভ্যানচালক জসিম , ঝালকাঠির কাঠালিয়ার দিনমজুর আবদুস সালাম কিংবা টাঙ্গাইলের রসুল পুরের হাসনা বেগমের মতো প্রান্তিক মানুষদের এই নিয়মিত আত্মহত্যা দারিদ্র বিমোচন কি করছে জানি না তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নিশ্চয়ই কমাচ্ছে- দরিদ্র মানুষ লাশ হলে নিশ্চয়ই দরিদ্রের সংখ্যা কমে! কৃষি ও শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা করার বদলে উল্টো ক্ষুদ্র ঋণ ধরিয়ে দিয়ে বাজারের অনিশ্চিয়তার হাতে ছেড়ে এভাবে ক্ষুদ্র কৃষক, ভূমিহীন দিনমজুরদের যখন আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয় তখন সেটা আর আত্মহত্যা থাকে না, এটা সিস্টেমিক মার্ডার। আমরা এই হত্যার বিচার চাই, এই সিস্টেমিক মার্ডারের অবসান চাই।  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.