তাশফী মাহমুদ নিউইয়র্ক, ২১ জুলাই (এনা) : বিজনেস ক্লাসের টিকিট লাগবে হুমায়ূন পরিবারের। তা না হলে তারা লাশের যাবেন না। এমন ফতোয়া দিয়ে বিব্রত করেছিলেন জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। আর এ দাবি পেশ করেছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেনের কাছে। লাশের সাথে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় যাবেন ৬ জন।
হঠাৎ করে ৬টি টিকিট সংগ্রহ করাই যেখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমন পরিস্থিতিতে সবগুলো টিকিট বিজনেস ক্লাসের লাগবে বলে উল্লেখ করেন মাজহার। বিষয়টি জানাজানি হবার পর আমেরিকার বাঙ্গালী কম্যুনিটিতে এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, টিকিট দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ সময়ের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের লাশসহ পরিবারকে বিজনেস ক্লাসে ঢাকায় পাঠাতে কারোই আপত্তি নেই। তবে এটিতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়, এত স্বল্প সময়ে বিজনেস ক্লাসে ৬টি টিকিট সংগ্রহ করা কী সহজ-এমন মন্তব্য সচেতন প্রবাসীদের।
গত বছরের মধ্য সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্যে সপরিবারে হুমায়ূন আসেন নিউইয়র্কে। তখন থেকেই সাথে রয়েছেন মাজহারুল ইসলাম। নিউইয়র্কে লেখক পরিবারের সাথে ভাড়াটে বাসাতেও বাস করেন মাহজার। সে বাসার ভাড়া কে দিয়েছে তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে লেখকের চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে মিডিয়ার উপর তিনি মাঝেমধ্যেই ফতোয়া জারি করেছিলেন।
লেখকের চিকিৎসার প্রকৃত তথ্য তিনি এবং লেখক পত্নী মেহের আফরোজ শাওন ছাড়া কেউ জানেন না বলেও দাবি করেছেন একাধিকবার। তাই অন্য কারো উদ্ধৃতি দিয়ে যেন কোন সংবাদ মিডিয়ায় পরিবেশন করা না হয় সে ফতোয়া দেন মাজহার। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ২৪ ঘন্টা আগে উত্তর আমেরিকার বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত ঠিকানা পত্রিকায় ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হুমায়ূন’ শীর্ষক সংবাদকেও তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এভাবেই মাজহারুল ইসলাম হুমায়ূনের চিকিৎসার প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখতে চেয়েছিলেন কী জন্যে-এ প্রশ্ন এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ঢাকার ওয়েবসাইট পত্রিকা এবং কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মাজহারুল ইসলাম।
চিকিৎসারত অবস্থায় জননন্দিত এই লেখককে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। এ সুবাদে লেখকের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতেন রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন। তিনি মাঝেমধ্যে হাসপাতালেও গমন করেন। তাকে উদ্ধৃত করে কোন সংবাদ দিলেও ক্ষেপে যেতেন এই মাজহার। নিউইয়র্কে মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা খোঁজ-খবর রাখতেন চিকিৎসার।
তার বরাত দিয়েও কোন সংবাদ পত্রিকায় দেয়া চলবে না বলে জানিয়েছিলেন বার্তা সংস্থা এনাকে। এভবে লেখক হুমায়ূনের চিকিৎসা সম্পর্কিত অনেক কিছুই এই মাজহার এক অজানা কারণে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন এবং বিশ্বজিৎ সাহা বলেছেন, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যে বিশ্বে সবচেয়ে উত্তম স্থান হচ্ছে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার হাসপাতাল। সেখানে হুমায়ূনের চিকিৎসা শুরু হলেও পরবর্তীতে ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে কেন স্থানান্তর করা হয়েছিল সেটি জানতে চান প্রবাসীরা। এ নিয়ে লেখক দম্পতির কাছে থেকে সঠিক তথ্য জানতে সক্ষম না হলেও অপর একটি সূত্র মাজহারের কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, আর্থিক কারণে স্ল্যোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখা নাকি সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়টি এখন প্রবাসে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ‘ইকনোমি ক্লাসে ভ্রমণে অনাগ্রহী মাজহারুল ইসলাম। তাহলে এর আগে আর্থিক কারণে হুমায়ূনের চিকিৎসা স্থল পরিবর্তন করা হয়েছিল কেন?’-এ জিজ্ঞাসা অনেকের। একজন লেখকের চরম সংকটে সার্বক্ষণিকভাবে পাশে থাকার জন্যে প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের প্রশংসাও করছেন অনেকে।
দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরলে লেখক আর্তচিৎকার করে বলতেন যে, ‘কুসুম, ওরা আমাকে ফেরে ফেলবে, এক্ষুণি এখান থেকে বাসায় নিয়ে চলো আমাকে’।
জীবন সম্পর্কে অনেক বেশী আত্মপ্রত্যয়ী লেখক হুমায়ূনের এ আকুতির নেপথ্যে কী কাজ করছিল তা কী ভেবে দেখা উচিত নয়-এ প্রশ্নও প্রবাসীদের। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।