আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধানমন্ডি লেকের মেয়েটি এবং একটি পোড়া চিঠির গল্প !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! দুপুর বেলা ধানমন্ডি লেক পাড়ে প্রেমিক প্রেমিকার জুটি একটু বেশি দেখা যায় । এই সময়ে লোক জনের ভিড় একটু কম থাকে । কাম কাজে সুবিধা হয় । লোকজন বেশি থাকলে কাম কাজে অসুবিধা । কিছু কিছু ফাজিল পোলাপাইন বেশ ঝামেলা সৃষ্টি করে ।

তাই এই ভর দুপুর বেলাই তারা উত্তম সময় হিসাবে বেছে নেয় এই লেক পাড়ে আসার জন্য । আমি যদিও একাই আসি এই লেক পাড়ে তবুও আমারও এই ভর দুপুরেই ভাল লাগে আসতে । এই সময়ে আসলেই ভিড় একটু কম থাকে বিকেল বেলার তুলনায় । হাত পা ছড়িয়ে বসা যায় । আর কদিন থেকে যে পরিমান গরম পরতেছে, এই গাছ গাছালির ছায়ার বসে থাকতে খুবই ভাল লাগে ।

বাতাসও হয় প্রচুর । একটা লম্বা ঘুম দিতে পারলে মন্দ হয় না । কিন্তু ঘুম দেওয়ার উপায় নাই ! আর একটা কারন অবশ্য আছে এই সময়ে আসার । প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিদের লুলামী দেখতেও কিন্তু খারাপ লাগে না । একে অন্যের সাথে এমন সব আচরন করে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই ! গত কালকের কথা ।

আমি লেকের এই পাড়ে বসে বসে হাওয়া খাচ্ছি । আর আমার থেকে একটু দুরে বসা এক জুটির লুলামী দেখতেছি । ছেলেটার বয়স একটু বেশি । সেই তুলনায় মেয়েটার বয়স একটু কমই । যদিও স্কুল ড্রেন ছিল না তবুও মনে হচ্ছিল স্কুলেই পড়ে মেয়েটা ।

অবশ্য নাও পড়তে পারে ! মেয়েদের বয়স বোঝা কার সাধ্য ! প্রাইভেট টিউশনী ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছে মনে হয় । মানুষ রকিং চেয়ারে যেভাবে হেলান দিয়ে বসে মেয়েটিও তেমনি ছেলেটির গায়ে হেলান দিয়ে বসেছে । আর আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছে ! কি আনন্দ !! হিউম্যান রকিং চেয়ার ! আমি ছেলে-মেয়ের রকিং চেয়ার খেলা দেখতেছি হঠাৎ একটা চিত্‍কার কানে এল । ঠিক একটা না । বেশ কয়েকজন একসাথে চিত্‍কার করে উঠছে ।

আমি একটু এদিক ওদিক লক্ষ্য করতেই দেখতে পেলাম চিত্‍কারগুলো আসতেছে লেকের ও পাশ থেকে । এবং তারা সারি সারি বসে থাকা জুটিদের উদ্দেশ্য করেই চিত্‍কার করতেছে । নাহ ! পোলাপাইন ফাজিলই রয়ে গেল । কিছুক্ষন সহ্য না করতে পেরে দেখলাম বেশ কয়েক জোড়া উঠে চলে গেল ! অবশ্য বেশির ভাগই তাদের লুলামী চালিয়ে গেল ! সেই সাথে ছেলে গুলোও ফাজলামীও চলতে লাগলো ! এই সব দেখতে দেখতেই সময় চলে যায় ! একেবারে যে খারাপ যায় তা কিন্তু না ! কিন্তু আজকে আমার মনোযোগ কোন জুটির দিকে না । আজকে আমি একটা একাকী মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি ।

মেয়েটা বসে আছে আমার থেকে হাত দশেক দুরে । আমি যে বেঞ্চে বসে আছি ঠিক তার পাশের বেঞ্চেই মেয়েটা বসে আছে ! যথন প্রথমে আসি তখন থেকেই মেয়েটা বসা ছিল । প্রথমে অতটা লক্ষ্য না করলেও একটু পরে মেয়েটিকে আমি লক্ষ্য করা শুরু করলাম । প্রথমে মেয়েটাকে একা বসে থাকতে দেখে মনে হয়েছিল মনে হয় কারো আসার অপেক্ষায় আছে । একটু পরেই তার সেই বিশেষ মনুষটি চলে আসবে ! তারপর শুরু হয়ে যাবে রকিং চেয়ার খেলা ! কিন্তু একটু পরেই লক্ষ্য করলাম মেয়েটা কাঁদছে ।

খুব চেষ্টা করছে নিজের কান্না আটকানোর কিন্তু পারছে না । লেক পাড়ে মানুষ সাধারনত রিল্যাক্স হতে আসে । আড্ডা অথবা একটু আধটু লুলামী করতে আসে । কিন্তু কাঁদতে আসে আমি এই প্রথম দেখলাম । মেয়েটির ব্যাপারে আমার তখনই কৌতুহল জন্মালো ।

একটু ভাল করে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে । মেয়েটা আহামরী সুন্দরী না । সাধারন চেহারা । খাড়া নাক আর বড় বড় চোখ । চুলও খুব বেশি লম্বা না ।

গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা । মেয়েটি তখনও কেঁদেই চলেছে । আমি উঠে গিয়ে মেয়েটিকে একটা টিস্যু পেপার দিয়ে আসলাম । প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়েটি হয়তো নিবে না । কিন্তু নিল ।

আমি আগের জায়গায় ফিরে এলাম আবার । বাদাম চিবুতে লাগলাম ! এই মেয়েটি কাঁদছে কেন ? কি কারন হতে পারে ? বয়ফ্রেন্ড প্রবলেম ? ফ্যামিলি প্রবলেম ? মানি প্রবলেম ? কে জানে ? দেখলাম কিছু সময় পরে মেয়েটা একটু ধীর স্থির হল । সামলে নিল কান্নাটা ! আমার টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো । তারপর আমার দিকে তাকালো । যদিও মুখ দিয়ে কিছু বলল না তবুও কেন জানি মনে হল মেয়েটি আমাকে ধন্যবাদ দিল চোখ দিয়ে ।

আমিও নিরব স্বাগতম জানালাম । মেয়েটি আবার উদাস হয়ে গেল । সোজা লেকের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন একভাবে ! ঝাঁপ মারবে না তো ? নাহ ! ঝাঁপ দিলে সমস্যা নাই । এই পানিতে ডুববে না ! মেয়েটা হঠাৎ নিজের ব্যাগের ভিতর হাত দিল । পলিথিন দিয়ে মোড়ানো কিছু একটা বের করে আনলো ।

তারপর মেয়েটি বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে একটু লেকের পানির দিকে এগিয়ে গেল । ব্যাগটা তখনও বেঞ্চের উপরেই রয়েছে ! হাটু গেড়ে বসে মেয়েটি পলিথিন থেকে একটা কাগজ বের করল । কয়েকটা কাগজ এক সাথে ভাজ করা । এতো দুর থেকে পরিস্কার বোঝা না গেলেও আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটার হাতের ঐটা একটা চিঠি । প্রেমের চিঠি ? অন্তত ভাজ দেখে তো তাই মনে হল ।

অনেক দিনের যত্ন করা ছিল মনে হচ্ছে । আমি ভাবছি মেয়েটা কি করবে এই কাগজ গুলো দিয়ে । আমাকে মোটামুটি অবাক করে দিয়ে মেয়েটি কাগজটা মাঝখান দিয়ে ছিড়ে ফেলল । তারপর আবার মাঝ বরাবর আরেকবার টান দিল । এরপর আরো কেয়ক টুকড়ো ! এরপর আবার পলিথিনের ব্যাগের ভিতর হাত দিল ।

এবার বেরিয়ে এল একটা সবুজ রংয়ের কার্ড । প্রেমিক প্রেমিকারা বিশেষ দিনে যেই টাইপের কার্ড আদান প্রদান করে কার্রটা সেই রকম ! হয়তো তার মনের মানুষ কোন বিশেষ দিনে তাকে দিয়েছিল ! কিন্তু মেয়েটা কার্ডটা ছিড়ে ফেলছে কেন ? আমার ধারনা তাহলে ঠিক ! আগেরটা চিঠিই ছিল । কিন্তু এই ভাবে চিঠিটা ছিড়ে ফেলার কারন কি ? বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়েছে ? কে জানে ! যা ভেবেছিলাম তাই । সবুজ রংয়ের কার্ডটাও মেয়েটি ছিড়ে ফেলল । তারপর একের পর চিঠি আর কার্ড বের হতে থাকলো ।

মেয়েটি আস্তে আস্তে সব গুলো ছিড়ে ফেলতে লাগলো । আমি বসে বসে মেয়েটির কাগজ ছেড়া দেখতে লাগলাম । কাগজ গুলো ছেড়ার সময় মেয়েটার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে দেখলাম । তবুও কেমন যেন একটা অব্যক্ত আনন্দ মেয়েটির চোখে লেগেছিল । যেন সব কিছু পেছনে ফেলে আবার নতুন কিছু শুরু করতে যাচ্ছে ! সব কার্ড আর চিঠি যখন ছেড়া শেষ তখন মেয়েটি সব কাগজ গুলো একসাথে জড় করলো ।

তারপর আবার নিজের ব্যাগের কাছে ফিরে এল । কিছু একটা খুজছে ব্যাগের ভিতর । কিন্তু ব্যাগের ভিতর থেকে মেয়েটি যখন মুখ তুলে তাকালো তখন খানিকটা হতাশ মনে হল । কিছু একটা ভুলে গেছে মনে হয় । কি ভুলে গেছে ? জিজ্ঞেস করবো ? নাহ ।

কি দরকার ? মেয়েটি আবার খুজতে লাগলো ! কিছুক্ষন খোজার পরে এবার মেয়েটার মুখটা একটু উজ্জল হয়ে উঠলো ! পেয়েছে ! কি পেয়েছে ? নতুন কোন চিঠি ? তার বয়গ্রেন্ডের দেওয়া নতুন কিছু ! যেটা সে ছিড়ে ফেলতে চায় ! ধ্বংশ করে ফেলতে চায় ! কিন্তু মেয়েটা যখন ব্যাগ থেকে হাত বের করলো তখন দেখলাম আসলে মেয়েটার হাতে একটা দিয়াশলাই ! আচ্ছা ! কেবল ছিড়েই ক্ষান্ত না মেয়েটা ! সব কিছু পুড়িয়ে নিশ্চিন্ত করে দিতে চায় ! একেবারে নিজের জীবন থেকে দুর করে দিতে চায় ! মেয়েটা আবার সেই ছেড়া কাগজ গুলোর কাছে গেল ! আবার হাটু গেড়ে বসে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলো ! একবার ! দুবার ! তিনবার ! কিন্তু মেয়েটা যতবারই কাঠিতে আগুন জ্বলায় ততবারই নিভে যাচ্ছে ! হায় রে ! বেকুব মেয়ে আর কারে কয় ! আসলে মেয়েটা যেদিকে বসে আসে সেই দিক থেকে বাতাস আসছে ! একটু ঘুরে বসবে তো ? তা না ! কাঠির পরে কাঠি নষ্ট করছে ! -এই যে শুনুন ! মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -আমাকে বলছেন ? -জি ! -বলুন ! -এই ভাবে কাঠি নষ্ট করে লাভ নাই ! আপনি আগুন জ্বালাতে পারবেন না ! -মানে ? -মানে হল এই যদি আগুন জ্বালাতে চান তাহলে পুরা দিয়াশলাই ফাঁকা হয়ে যাবে তবুও আপনি আগুন জ্বালাতে পারবেন না ! -তাহলে ? -দেখছেন বাতাস আসছে বিরীত দিক থেকে ! আপনি ঘুরে বসুন ! নিজের শরীর দিয়ে বাতাস আটকান ! মেয়েটা কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো ! তারপর আমার কথা মত ঘুরে বসলো ! এবার বেশ কাজ হল ! প্রথম বারেই আগুন জ্বালাতে সক্ষম হল মেয়েটা ! আস্তে আস্তে আগুন জ্বলে উঠলো ! মেয়েটা কিছুক্ষন সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে ! আবারও মেয়েটার চোখ চকচক করছে ! মু্ক্তির একটা আনন্দ যেন আমি মেয়েটার চোখে দেখতে পারছিলাম । সব কিছু জিবন থেকে দুর করে দেওয়ার আনন্দ ! সব কষ্ট থেকে মুক্তির আনন্দ ! আমারও পুরানো কথা মনে পড়ে গেল ! আমার প্রথম গার্ল ফ্রেন্ড কে আমি খুব চিঠি লিখতাম ! সেই কম যায় না ! আমাকে চিঠি লিখে ভাষিয়ে দিত ! কে কাকে বেশি চিঠি লিখতে পারে ! কি আবেগ থাকতো সেই চিঠি গুলোতে ! এক বছরের মাথায় সে আমাকে ছেড়ে চলে যায় ! অবশ্য কিছু দোষ আমার নিজেরও ছিল ! ছেষ্টা করলে হয়তো সম্পর্কটা টিকে যেত ! কিন্তু আমাদের দুজনের কেউই তা করে নাই ! যেদিন সব কিছু শেস হয়ে যায় আমিও বাড়ির ছাদে তার সব চিঠি গুলো এভাবে পুড়িয়ে ফেলেছিল ! তখন এক আশ্চার্য আনন্দ কাজ করছিল মনের ভিতর ! একটা মুক্তির আনন্দ ! মেয়েটিও এখন সেই আনন্দ উপভোগ করছে ! আগুনর তেজ না কমা পর্যন্ত মেয়েটা বসে বসে আগুন টা দেখলো ! তারপর ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেল ! আসে পাশের অনেকেই মেয়েটাকে দেখছিল ! প্রথম নজরে দেখলেই মনে হবে মেয়েটা হয় এখানে নেশা করছে ! একটু ভাল করে দেখলে অবশ্য ভুল ভাঙ্গবে ! আমি নিভু নিভু আগুনটার দিকে এগিয়ে গেলাম । পা দিয়ে নিভিয়ে দিলাম সম্পূর্ন ! তখনই আমার নজর গেল ছাইয়ের ভিতর একটা কাগজের দিকে ! কাগজটা সম্পূর্ন পোড়ে নাই ! যদিও এটা দেখা ঠিক হবে তবুও কৌতুহল দমাতে পারলাম না ! একটু ফু দিয়ে ছাই সাড়িয়ে আধপোড়া কাগজটা তুলে নিলা ! একটা চিঠির চার ভাগের এক ভাগ ! তাও আবার কিছুটা অংশ পোড়া ! হাতে গোনা কয়েকটা লাইন পড়া যায় । তবুও আবার পুরা লাইন না ! প্রিয় মিতু, আমি জানি আমাকে খুব বেশি ঘৃনা কর........ তোমাকে ভুলে থাকি নি একটুও সময় আমি তো...... তোমার সব গুলো চিঠি আমি খুব আ.........। কিন্তু আমার যে কিছুই করার ছিল..... আমাকে কে ক্ষমা করা যা....... যেখানেই থাকি কেবল তোমার....।

এই কয়টা লাইনই পড়তে পারলাম ! মিতুর জন্য ছেলেটা কি বলতে চেয়েছিল ! কোন কি ভুল করছিল ! অথবা মিতুকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিল ? ঠিক মত বোঝা যাচ্ছে না ! তবে মনে হচ্ছে ছেলেটা মিতু যথেষ্ঠ ভালবাসে ! কোন একটা কারনেই মিতুতে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু মিতু প্রতি ভালবাসা হারাই নি ! কোন একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মনে হয় ! আমাদের মত ! কিন্তু কি সেই কারন ? মিতু কি বুঝতে চাই নি ? কি জানে ? আজ আর লেক পাড়ে বসতে ভাল লাগছে না ! মিতু বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে হচ্ছে ! ছেলেটার চিঠিটা মিতু এভাবে কেন পুড়িয়ে ফেলল ! আমি পোড়া কাগজটা নিয়েই হাটতে লাগলাম !! ছেলেটার কষ্ট যেন খানিকটা আমার নিজের ভিতরেও অনুভুত হচ্ছে !! Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.