আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধানমন্ডি লেকে সকাল-বিকালঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

ধানমন্ডি লেকে সকাল-বিকালঃ পূবাকাশে আলোর আভা। শীতল বাতাস বয়ে যায় বনের গাছগুলোর পাতার ফাঁক দিয়ে। পাতাগুলো কেঁপে ওঠে। পাখিরা কোলাহলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সূর্য ধীরে ধীরে এগুতে থাকে।

রাস্তায় ডিজেল-পেট্রোলের গন্ধ ছড়াতে থাকে। বেড়ে যায় শব্দের ঝংকার। মুহূর্তের মধ্যে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। লোকজন ছুটতে থাকে যার যার গন্তব্যস্থলে। ব্যস্ত হয়ে পড়ে নগরী।

তারপরেও একশ্রেণীর "নিয়ম মেনে চলা মানুষ" প্রকৃতির "স্নিগ্ধ সকাল" উপভোগ করার জন্য বেড়িয়ে পড়েন নগরীর সবুজ শ্যামল ধানমন্ডি লেকের সবুজ উদ্যানে। আর যারা সকালের কর্ম ব্যস্ততার কারণে সকালে আসতে পারেন না, তারা আসেন বিকেলে। "অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু / চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উচ্ছল পরমায়ু"। আমাদের এই নগরীর বাসিন্দারাও তাই চান। তবে এদের বয়স বেশির ভাগই চল্লিশের ওপর।

ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী লোক নেই তা নয়। তবে এদের সংখ্যা কম। পঞ্চাশ পার করেছে এমন সংখ্যাও কম নয়। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের সংখ্যাও যেন সমানে সমান। সকালের চেয়ে বিকেলে মহিলাদের সংখ্যা দেখা যায় বেশি।

বয়স বেশি হলেও ধানমন্ডি লেকে কিম্বা রমনা উদ্যানে এসে যেন সবাই আবার তাদের পুরনো যৌবন ফিরে পান। তাদের পোশাকেও থাকে তারুণ্যের ছাপ। পড়নে ট্রাওজার আর পায়ে কেডস। আপনিও আসুননা জীবনকে একটু উপভোগ করে নিতে! যারা ওখানে নিয়মিত যাননা-তারা আসুননা-দেখি ওখানে কি হচ্ছে- কয়েকজনকে দেখা যায় একসঙ্গে মেরাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যেন সামনে তারা অলিম্পিক মেরাথন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

আবার কাউকে দেখা যায় এক, দুই, তিন এভাবে গণনা করে ওঠ-বস করতে। কেউ ছোট মেয়েদের দড়ি খেলার দড়ি নিয়ে খেলায় মেতে আছেন। আর বড় একটি অংশ কানে মিউজিক লাগিয়ে একাকি কোন কথা না বলে শুধু হাঁটছেন। হাঁটাহাঁটির কাজটা সকালের চেয়ে বিকেলেই বেশি হয়ে থাকে। যখন কারো শরীরচর্চা শেষ হয়ে যায় তিনি কোন বড় বৃক্ষের নিচে শীতল ছায়ায় বসে কিংবা লেকের পাশে বসে বাদাম খাচ্ছেন নয়তো বাসা-বাড়ি থেকে আনা নাস্তা করছেন।

প্রতিদিন সকালে কিংবা বিকেলে কেউ একাকি, কেউ তার প্রতিবেশী, কেউ তার নাত-নাতনীকে নিয়ে আসেন ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিনের স্বাস্থ্য রক্ষার কাজটি করতে। তবে বুড়োবুড়ি জুটিরও সন্ধান মিলে না - তা নয়। অনেক বৃদ্ধ জুটি একসঙ্গে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটছেন। হাঁটা শেষ হয়ে গেলে একসঙ্গে কোন বৃক্ষের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন-দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। আমি কল্পনায় হারিয়ে যাই-আমার মা-বাবাকে নিয়ে......তারাও কি সুযোগ পেলে অমন সুন্দর জুটিবব্ধ হয়ে পার্কে হাটাহাটি করতেন! কেউ পাঁয়ে হেঁটেই চলে আসেন আবার কেউ গাড়ি নিয়ে আসেন।

নিয়মিত এখানে হাটার সুবাদের অনেকেই ব্যক্তিগত পরিচিত কিম্বা মুখ চেনা পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। এমনি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রতিদিনের কাজের বিবরণ। মিঃ বদিউর রহমান। একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা, বহুল আলোচিত প্রাক্তন এন বি আর চেয়ারম্যান। তিনি ডায়াবেটিস রোগী।

চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন সকালে কখনো একা, কখনো কাউকে নিয়ে হাঁটার জন্যই তিনি এখানে আসেন। বাসায় অনতি দূরে। সকালে হাঁটার আনন্দই আলাদা, হাঁটার সঙ্গে মুক্ত বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। আগের চেয়ে তিনি অনেকটা সুস্থ আছেন বলে মন্তব্য করেন। চাকরিজীবী সাজেদুর রহমান জানান, কর্মব্যস্ততা আর অলসতার কারণে আগে কখনোই সকালে হাঁটার অভ্যাস ছিল না।

মেদভুরি বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন সকালে এসে হালকা ব্যায়াম করার পর একটু ভাল আছেন, মেদভুরি অনেকটা কমে গেছে। তিনি জানান, প্রতিদিনের এই শারীরিক পরিশ্রমের কারণে রাতের ঘুম বেশ পরিপূর্ণ হয়। ইন্দিরা রোড থেকে আসা গৃহবধূ রাশিদা বেগম বলেন, প্রতিদিন বিকেলে হাঁটার কারণে অনেক ভালো আছি। সকালে সবার জন্য নাস্তা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বিকেলের সময়টাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, মাঝে-মধ্যে হকার/ ভিক্ষুকদের ঝামেলায় পড়তে হয়।

তা না হলে এখানে আর কোন সমস্যা হয় না। নগরীর মধ্যে এই লেকের পরিবেশ খুব চমৎকার। সচিবালয়ের এক যুগ্ম সচিব হারুনুর রশীদ বলেন, প্রতিদিন বিকেলে অফিস শেষে সরাসরি এখানে এসে আধাঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে তারপর বাসায় যাই। সপ্তাহে পাঁচদিন হাটাহাঁটির কাজটি একাই করি। দম আটকানো এই নগরীতে বন্দি হয়ে থাকলে আয়ু অনেক কমে যাবে।

তাই মুক্ত বাতাসে স্বস্তির নিঃস্বাস ছাড়তে মাঝে-মধ্যেই তিনি তার পুরো পরিবারকে নিয়ে আসেন খোলা আকাশের নিচে। ধানমন্ডি লেক শুধু হাটাহাটির জন্যই চমতকার যায়গা নয়। বহিরাগত কিছু বখাটেদের কথা বাদ দিলে সব বয়সী মানুষের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা সময় বিনোদন, বেড়ানোর জন্যও চমতকার যায়গা নিঃসন্দেহে। বেশ কয়েকটা স্পটেই আছে ভালো স্নাক্স খাবারের সুব্যবস্থা। ধানমন্ডি লেকের "স্নিগ্ধ সকাল" যারা উপভোগ করতে চান তাদের জন্যে আছে কিছু সংগঠন- এদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধদের "শতায়ু সংঘ" একটি।

আমিও এই সংঘঠনের সদস্য হয়েছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.