ঘুম অনেক প্রিয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য উত্তোলিত টাকা ভাগাভাগি করাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। রোববার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মাদার বখ্শ ও সোহরাওয়ার্দী হলের মাঝখানে এ সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম সোহেল রানা (সমাজবিজ্ঞান, চতুর্থ বর্ষ)। তার পিতার নাম আব্দুস সালাম।
তার বাসা রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার সাব্দী গ্রামে। প্রথমে আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনিত ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমান পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভ’মিকা পালন করে। তবে ঘটনার পরে রাতেই বিশ্ববিদ্যলয়ের মাদার বখ্শ ও সোহরাওয়ার্দী হলে পুলিশী তল্লাশী চালানো হলে দুই হল থেকে বিপুল পরিমানে দেশী অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
মৃত্যুর খবর সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসে ছরিয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য গত বুধবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা উঠায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এই চাঁদার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রোববার বিকেলে সভাপতি গ্রুপের তুহিনের (সাংগঠনিক সম্পাদক) সাথে সাধারন সম্পাদক গ্রুপের আখেরুজ্জামান তাকিমের (সহ-সভাপতি) মধ্যে কথাকাটি হয়। কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে তুহিন তাকিমকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকিম ও মশিউরের নেতৃত্বে সেক্রেটারী গ্রুপের প্রায় ৫০-৬০ জন কর্মী চাপাতি, রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে সভাপতি বিরোধী মিছিল বের করে এবং কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরন ঘটায়।
মিছিল নিয়ে তারা মাদার বখশ হলের সামনে এসে সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এ সময় সভাপতি গ্রুপের তুহিন, কৌশিক, মনির, মারুফ, লিটন, ফারুক, মাসুদ রানাস(ভাগ্নে মাসুদ), মনির ও আরিফের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মী আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, চাপাতি এবং দেশীয় অস্ত্র সহকারে হলের ভিতর অবস্থান নেয়। তৎক্ষনাত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মীমাংসার চেষ্টা করে। কিন্তু এ সময় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয় এবং তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া খেয়ে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আবারো হলের ভেতরে অবস্থান নেয় এবং সেক্রেটারী গ্রুপের কর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান নেয়।
সেক্রেটারী গ্রুপের কর্মীরা এ সময় হলের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে একযোগে হল গেট এবং হলের ছাদ থেকে সেক্রেটারী গ্রুপের কর্মীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এ সময় প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া একই সাথে ২০-২৫টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি গুলি সেক্রেটারী গ্রুপের কর্মী সোহেলের মাথায় লাগলে সে তৎক্ষনাত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে রামেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে ১২ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এদিকে সোহেলের মৃত্যুর খবরে দুপুর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা শুরু হয়। দুপুরে মুত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ছাত্রলীগের উভায় গ্রুপের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে আত্মগোপন করতে শুরু করে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে দুপুরের পর ক্যাম্পাস প্রবেশের অধিকাংশ গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ্যাম্বুলেন্স পায়নি আহতরা: সংঘর্ষের পর আহতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎকা কেন্দ্রে এ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করা হলেও ঘটনাস্থলে কোন এ্যাম্বুরেন্স পাঠায়নি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে আহত সোহেলকে এ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে অনেক বেশি বিলম্বিত হয় এবং আহতের মাথা থেকে প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণ হয়। পরবর্তী আহতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আবারো এ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হলেও প্রশাসন না করে দেয়। এতে নিহতকে ঢাকায় নিয়ে যেতে প্রায় চার ঘন্ট বিলম্ব হয় এবং ঢাকায় পৌছেই তার মুত্য ঘট্।
ে
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর চৌধূরী মো: জাকারিয়া জানান, পরিস্থতি নিয়ন্ত্রেণে আছে। যে কোন অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় রাবি শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হোসেন বিপু জানান, যেহেতু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেহেতেু ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় কোনো মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতির সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সভাপতি আহম্মেদ আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।