কুবের, মাছ কিবা?’—দূর থেকে গলা উঁচিয়ে পীতম মাঝি জিজ্ঞেস করে কুবেরকে।
‘না গো মাঝি, আর মাছ ধরমু না! হোসেন মিয়া কইছে পদ্মায় ব্রিজ কইরা দিব। আমারে নাকি ওইখানে কনটেক্টার বানাইব!’—কুবের তারস্বরে জবাব দেয়।
‘হ, কনটেক্টার না, তর মাথা!’—বলে বৈঠা বাইতে বাইতে অদৃশ্য হয়ে যায় পীতম।
কুবের হেলতে-দুলতে বাড়ি ফেরে।
ছেলে লখা এসে কুবেরের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, ‘বাপজান, আমারে ওই পারের ডিজিটাল কেওরাকান্দি ইশকুলে ভর্তি করায়া দ্যাও। আমি এই অ্যানালগ মাওয়া ইশকুলে আর পড়মু না। ’ কুবের লখার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ‘বড় হ, বাপজান। হোসেন মিয়া পদ্মায় ব্রিজ কইরা দিব, তহন তরে কেওরাকান্দি ইশকুলে ভর্তি করায়া দিমু, মাওয়া থেইকা ব্রিজে হাঁইটা হাঁইটা তুই ইশকুলে যাবি। ’
মালা কাঁচুমাচু করে বলল, ‘মাঝি, আমারে একটু গঞ্জে নিয়া যাইবা? একটু পাওটার চিকিৎসা করাইতাম।
’ কুবের হাঁক মেরে বলল, ‘চোপ্! খালি ক্যাঁ ক্যাঁ ক্যাঁ! কইছি তো, হোসেন মিয়া ব্রিজ করতেছে। ব্রিজ হউক। তহন লুলা ঠ্যাং লয়া ব্রিজ দিয়া দৌড়ায়া দৌড়ায়া গঞ্জে যাইচ!’
কপিলা দূর থেকে বলল, ‘হায় রে পুরুষ! বউয়ের লগে এই ব্যবহার কইরা পুরুষগিরি ফলাও, চুক চুক চুক!’ ঢোক গিলে কুবের চুপ মেরে গেল। পৃথিবীর এই একটি নারীর কাছেই কুবের আপাদমস্তক অক্টোপাসের মতো বাঁধা।
বিকেলে গাঙপাড়ে হাওয়া খেতে গেলে কুবের কপিলাকে কায়দা করে ধরে বলল, ‘এইবার যাইবি কই!’ আত্মসমর্পণের ঢঙে কপিলা বলল, ‘তুমি যেইখানে নিয়া যাইবা, মাঝি...!’
কুবের বলল, ‘কয়টা দিন সবুর কর।
মাটির ব্যাংক ভাইঙ্গা হোসেন মিয়া ব্রিজ বানায়া দিব পদ্মায়। তরে নিয়া জোছনা রাইতে মাঝপদ্মায় ব্রিজের ওপর হাওয়া খাইতে যামু। তুই আর আমি হাওয়া খামু!’
দিন যায়, রাত যায়, কুবেরের মাথায় একটাই চিন্তা—পদ্মায় হোসেন মিয়া ব্রিজ করে দেবে। কুবের দিন গোনে, রাত গোনে, কবে সে ব্রিজের ঠিকাদার হবে, কবে হবে, কবে হবে! ঠিকাদারির টাকা দিয়ে সে গোপীর বিয়ে দেবে, রাশুটা গোপীকে বেশ জ্বালাচ্ছে।
এদিকে ব্রিজে কাজ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে গ্রামের রূপবতীদের একে একে ময়না দ্বীপে নিয়ে যেতে থাকে হোসেন মিয়া।
একদিন শহর থেকে একজনকে ধরে এনে হোসেন ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করায়। কিন্তু ব্রিজের কাজ শুরু আর হয় না। একপর্যায়ে গাঁয়ের লোকজন হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, বিদ্রোহ করে বসে। দল বেঁধে তারা হোসেনের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। কুবের চিৎকার করে, ‘হোসেইন্না! বাইরায়া আয়! এহনো ব্রিজ বানাস না ক্যান তুই? ব্রিজ কেডা বানায়া দিব?’
হোসেন মিয়া দাঁত মাজতে মাজতে ঘর থেকে বেরোয়।
কুবেরকে ধমক দিয়ে বলে, ‘কইছি তো, ব্রিজ হোসেন মিয়া বানায়া দিব। ’ কুবের অবাক হয়ে বলে, ‘তুমিই তো হোসেন মিয়া, নাকি?’ হোসেন মিয়া কপাল কুঁচকে মুখ বিকৃত করে বলল, ‘দুনিয়ায় কি হোসেন মিয়া একজন? আমার মৃত্যুর অনেক বছর পর আর এক হোসেন মিয়া আইব। হেই হোসেনই ব্রিজ বানাইব। এহন ফুট্ সবগুলা
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।