করযোগ্য হোক আর নাই হোক, যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের হিসাব থাকলেই কর দিতে হবে। উৎসে কর হিসেবে সুদ থেকে এই অর্থ কাটবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সঞ্চয়ী হিসাব, মেয়াদি আমানত, স্থায়ী আমানতসহ সব ধরনের আমানতের সুদের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে। এর মানে হলো, আমানতের জন্য হিসাবধারীকেই কর দিতে হবে।
সাধারণ সঞ্চয়ী আমানত খোলা হলেও সুদের ওপর কর দিতে হবে।
কেননা, নিয়মিত সঞ্চয় না করলেও সাধারণ সঞ্চয়ী আমানতে গ্রাহকের ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ রাখতে হয়। বছর শেষে সেই আমানতের ওপর সুদ হবে। আর সেই সুদের ওপর উৎস কর দিতে হবে।
আগে থেকেই ব্যাংক হিসাবধারীদের ওপর উৎসে কর কর্তনের নিয়ম থাকলেও চলতি অর্থবছর কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেই—এমন হিসাবধারীদের ওপর উৎসে কর হার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে পুরো বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বাজেট প্রস্তাবে টিআইএন আছে—এমন হিসাবধারীদের যেকোনো আমানতের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর বহাল রাখা হয়। আর যাদের টিআইএন নেই, তাদের সুদের ওপর ১৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করা হয়।
কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসে।
তাই সংশোধিন অর্থ আইন অনুযায়ী, টিআইএনধারী হোক আর নাই হোক, এক লাখ টাকার কম যেকোনো ধরনের আমানতের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। শর্ত হলো, বছরের কোনো সময় আমানতের পরিমাণ এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না।
আর এক লাখ টাকার বেশি আমানতের সুদের ওপর টিআইএন নেই—এমন ব্যক্তির উৎসে কর কাটা হবে ১৫ শতাংশ হারে। টিআইএনধারীদের জন্য অবশ্য ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন হবে।
আবার আমানতের বিপরীতে সুদের টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর করার আগেই তা কেটে রাখা হবে। অর্থাৎ সুদের টাকা ওই ব্যক্তির হিসাবে যাওয়ার আগেই উৎসে কর কাটা হবে। এতে প্রকৃত সুদের হার কম-বেশি এক শতাংশ কমে যাবে আমানতকারীর।
এনবিআরের কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, হিসাবে সুদের অর্থ জমা করার সময় উৎসে কর না কেটে উত্তোলনের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে তা কেটে রাখে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক ব্যাংকও এটা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে সুদের অর্থ জমা না দিয়ে নিজস্ব হিসাবে ধরে রাখে। পরে ত্রৈমাসিক রিটার্ন দাখিলের সময় তা সমন্বয় করা হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসে করের ত্রৈমাসিক বিবরণী দাখিল করতে হয়।
ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্তসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী তিন লাখ টাকা আয়ের জন্য ১০ শতাংশ, পরের চার লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ এবং পরবর্তী তিন লাখ টাকার ২০ শতাংশ আর বাকি অর্থের জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
কিন্তু আয়কর আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তির টিআইএন নেই, তার করযোগ্য আয় নেই। তাই টিআইএন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর করযোগ্য ব্যক্তিদের টিআইএন না থাকলে সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব এনবিআরের।
অথচ করযোগ্য নন এমন ব্যক্তির এক লাখ টাকার বেশি আমানত থাকলে, তাকেও কর দিতে হবে এবং তা সর্বনিম্ন হারে নয়, বরং যেসব করদাতার বার্ষিক আয় পাঁচ থেকে নয় লাখ টাকা, তাদের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আরোপযোগ্য করের হারে।
বর্তমানে কম-বেশি ৮০ শতাংশ ব্যাংক হিসাবধারীর আমানতের পরিমাণ এক লাখ টাকার নিচে। সাধারণত, এরা নিম্ন আয়ের মানুষ।
বাংলাদেশের করব্যবস্থাকে বলা হয় ‘প্রগ্রেসিভ’। এর মানে হলো, যাঁরা বেশি আয় করেন তাঁরা বেশি কর দেবেন।
কিন্তু ব্যাংক আমানতের ওপর উৎসে কর কর্তনের এই বিধানটি প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘার্ষিক বলে মনে করছেন খোদ কর কর্মকর্তারা।
কর কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, যাঁদের টিআইএন নেই তাঁদের ওপর ঘোষণা দিয়ে কর কর্তন বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের মৌলিক দর্শনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
সরকারের দিক থেকে যুক্তি হলো, টিআইএনধারী লাখ লাখ মানুষ নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করছেন না। অথচ তাঁদের অনেকেরই করযোগ্য আয় আছে। তাঁরা ব্যাংকে নিয়মিত লেনদেনও করছেন।
ব্যাংকের সুদে ১৫ শতাংশ হারে কর কর্তনের মধ্য দিয়ে তাঁদের কিছুটা দণ্ডারোপ করা হবে। যাঁরা এই দণ্ড এড়াতে চান, তাঁরা টিআইএন প্রদর্শন করবেন। আবার এই কর সমন্বয় করতে হলে তাঁকে বছর শেষে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে।
কিন্তু লাখ লাখ হিসাবধারী রয়েছেন, যাঁরা করযোগ্য নন। উৎসে কর কেটে নেওয়া কর ফেরত দাবি করতে হলে তাঁদের টিআইএন নিতে হবে।
আবার টিআইএন নিলে প্রতিবছর বার্ষিক বিবরণী জমা দিতে হবে।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।