আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমানতের গুরুত্ব

সকল মানুষকে আল্লাহ তা"য়ালা পরিপূর্ণভাবে দ্বীন বুঝার এবং পালন করার তৌফিক দিন। **** আমানত শব্দের অর্থঃ- গচ্ছিত রাখা, জমা রাখা । খিয়ানত এর বিপরীত শব্দ । সাধারণত কারো কাছে কোন অর্থ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয় । যিনি গচ্ছিত দ্রব্য যথাথভাবে হিফাজতে রাখেন এবং প্রকৃত মালিক চাওয়া মাত্র তা ফেরত দেন তাকে আমীন (বিশ্বস্ত) বলা হয়।

রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি ও বেসরকারি দাফতরিক কাজকর্ম, শিক্ষকতা, সমাজের নেতৃত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য, মজুরি, শ্রম-মেহনত, দেশপ্রেম ইত্যাদি সবই আমানত। সুতরাং আমানত শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়। অনেকে অর্থ সম্পদের মধ্যে আমানতটি সীমিত রাখে, যা সম্পূর্ণ ভুল। বরং মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথে আমানত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই প্রতিটি ব্যক্তি একজন আমানতদার।

আমানতদার ব্যক্তি সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় ও সুখ্যাত। আমানতদারি এমন এক মহৎ গুণ, যার ওপর জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। >> নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে প্রত্যার্পণ কর । {সূরা নিসা,আয়াত-৫৮} >> হে মুমানগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও তোমাদের উপর ন্যস্ত আমানতের খেয়ানত করো না । অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান ।

{সূরা আনফাল,আয়াত-২৭} >> হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও । আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে, তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করোনা । {তিরমিযী,আবু-দাউদ) রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন : মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘যখন দু’পক্ষ মিলে যৌথ কোনো কাজ করে, আমি তখন তাদের (সঙ্গে) তৃতীয় পক্ষ হই। যে পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে খেয়ানত তথা বিশ্বাসঘাতকতা না করে। ’ -সুনানে আবুদাউদ, হাকেম এ হাদিসে রাসূল (স.) আরও বলেন : মানুষের চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্য থেকে যে গুণটি সবচেয়ে আগে অদৃশ্য হয়ে যাবে, তাহলো আমানতদারী তথা বিশ্বস্ততা।

আর শেষ অবধি যা রয়ে যাবে, তা হচ্ছে নামাজ। এমন অনেক নামাজী আছে, যারা কোনো কল্যাণই অর্জন করতে পারে না। আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (স.) বলেছেন : ‘তোমরা খেয়ানত করো না কেননা খেয়ানত কতই না শাস্তি ও তিরস্কারযোগ্য। - আবু দাউদ ও তিরমিযী হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে, ‘তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জওয়াব দেবে, ইয়া পরওয়ারদেগার! কিভাবে তা ফিরিয়ে দেব ? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে।

তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপ আকারে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে, যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আন। অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পর্বত অপেক্ষা বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে।

কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, তখনি উক্ত জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে। হাদিসে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে শাহাদতবরণ করেন, কিন্তু সে মানুষের আমানত না বুঝিয়ে মারা যান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, মালিকের কাছে আমানত ফেরত দাও। কিন্তু সে মালিককে খুঁজে পাবে না।

তখন আমানতের বোঝা তার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ লোক বান্দার অধিকার নষ্ট করার কারণে জাহান্নামের ভাগী হলো। আমানতদারীর নমুনা: ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) খিলাফতের প্রশাসনিক ক্ষমতার ন্যায় রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পদকে এক বিরাট আমানতরুপে গণ্য করতেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন বলে প্রথম দিকে তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে কোন বেতন-ভাতাই নিতেন না। কিন্তু পরবর্তী কালে খিলাফতের কাজে সার্বক্ষনিক ব্যস্ততার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ায় তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায় নামমাত্র ভাতা গ্রহণ করতে শুরু করেন।

এতে তার পরিবারের ভরণ-পোষনের কাজ কোন প্রকারে চলে যেত। এই পরিস্থিতিতে তার স্ত্রী এই বরাদ্দ থেকে কিছু খাদ্য জমিয়ে একদিন একটি মিষ্টি খাবার তৈরী করেন। খলিফা অবাক হয়ে স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তার স্ত্রী নিয়মিত বরাদ্দ হতে কিছু কিছু খাদ্য বাচাবার কথা খুলে বলেন। শুনে খলিফা মন্তব্য করেনঃ যে পরিমাণ খাদ্য বাচিয়ে এ মিষ্টি তৈরী করা হয়েছে, তা আমাদের না হলেও চলত। কাজেই ভবিষ্যতে বায়তুল মাল (সরকারী কোষাগার) হতে ঐ পরিমাণ খাদ্য কম আনা হবে।

রাষ্ট্রীয় তহবিলের আমানতদারীর ব্যাপারে তিনি কতখানি সতর্ক ছিলেন, এই ঘটনা হতে তা প্রমাণিত হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমানতের হেফাজত করার তৌফিক দিন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.