আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরাভূত (আপনি যদি আওয়ামি / বিএনপি এর কট্টর সমর্থক হয়ে থাকেন তবে এই গল্পটি আপনার জন্যে নয়)

আমি লেখক খারাপ হতে পারি কিন্তু ছেলে ভাল ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পরাজয় হয়েছে। পুর্ব বাংলার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ডিসট্রিক্ট ইলেভেন। বাঙালির সকল মানবিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের জীবনকে পশুর জীবনে পালটে দেয়া হয়েছে। এমনই সময়ে এক রহস্যময় নিউক্লিয়ার বিস্ফোরনে করাচি শহর সম্পুর্ন রুপে ধ্বংস হয়ে যায়। করাচি ধ্বংসের বিশৃঙ্খলা কাজে লাগিয়ে হুসেন মুহম্মদ এরশাদ পুনরায় বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক কম্যুনিটির সমর্থন নিয়ে পাকবাহিনীর নেতৃত্বে ন্যটো কোয়ালিশন ফোর্স দ্রুত আবার বাংলা পুনর্দখল করে নেয়। পরাজিত এরশাদ নিজের বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন। এখান থেকেই আমাদের আজকের গল্প শুরু। আগের পর্বঃ Click This Link আঁধার নেমেছে। পুরানো এই দোতলা বাড়িটায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

তাই সন্ধ্যা নামার পর থেকেই চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসে। তানজিম আহমেদ সোহেল ওরফে সোহেল তাজ (প্রাক্তন মুজিব সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহ্মদের পুত্র) ফস করে একটা মোমবাতি জালাল। এটাই শেষ মোমবাতি। এটা ফুরিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হবে। দরকারি টুকিটাকি জিনিস কিনতে বাহারকে অনেক আগেই বাজারে পাঠানো হয়েছে, ছেলেটা এখনো ফিরছে না।

ছেলেটার জন্যে হালকা দুশ্চিন্তা হচ্ছে, ধরা পরে যায়নি তো!! ঘরের এক কোনে আন্দালিব পার্থ দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার শরীর অর্ধেকটা চাদর দিয়ে ঢাকা। ছেলেটা কোমরে গুলি খেয়েছে। পার্থর কপাল ভালো গুলিটা আটকে না থেকে শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। সোহেল হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে যদ্দুর সম্ভব জোড়াতালি দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করেছে।

ছেলেটার গায়ে এখন ভীষণ জ্বর। বেশির ভাগ সময়ই অচেতন থাকে। ওকে দ্রুত একটা ডাক্তার দেখান দরকার। কিন্তু সোহেলরা কিছুতেই একজন ডাক্তার যোগাড় করতে পারছে না। পাশের ঘরে আছেন এম (খালেদা জিয়া) ও তার পুত্র তারেক রহমান।

এম এর শরীর কিছুটা সেরে উঠেছে। টাস্কফোর্সের ইন্টারোগেশন সহজ কথা নয়। এই ইন্টারোগেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এমন অনেকেই পরে চলৎশক্তি হারিয়েছেন, কেউ বা মানসিক ভারসম্য হারিয়ে উন্মাদ হয়ে গেছেন। এম প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টার ইন্টারোগেশনের পরেও টিকে আছেন, শুধু ড্রাগন লেডির পক্ষেই এমনটা সম্ভব। পাঁচ বছর পর আবার তারেককে ফিরে পাওয়া গেল।

ছেলেটার চেহারা অনেক বদলে গেছে। পাঁচ বছর আগে কুমিল্লার কাছে ধরা পরেছিল তারেক। পরবর্তিতে খবর ছড়িয়ে পরেছিল পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর সময় ক্রসফায়ারে তারেকের মৃত্যু হয়েছে। পুরোটা আসলে ছিল পাক টাস্কফোর্সের কারসাজি। এতদিন পর তারেককে ফিরে পেয়ে সোহেল এই দুর্দিনেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।

বিদ্রোহ এখনও মরেনি। তারেক যোদ্ধা হিসেবে যেমন তেমন, কিন্তু রণকৌশলে এই ছেলের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া কূটনৈতিক হিসাব নিকাশেও তারেক সিদ্ধ হস্ত। গত দুইরাত আগে সোহেলের নেতৃত্বে টাইগার স্কোয়াড টঙ্গির কাছাকাছি একটা গোপন মিলিটারি কনসেন্ট্রেশন ক্যম্প থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের নেতা এম ও তার পুত্র তারেক রহমানকে উদ্ধার করে আনে। সেই একই রাতে ন্যটোর স্পেশাল ফোর্স ডিসট্রিক্ট ইলেভেনে হামলা করে।

ঢাকায় ঢুকার মুখেই সোহেলের বাহিনি বাধার সম্মুখিন হয়। দূর থেকে শহরের উপর পাক খেয়ে উঠা কালো ধোঁয়ার কুন্ডুলি ও ভেসে আসা মেশিনগানের বিরতি গর্জন থেকে কারোর আর বুঝতে বাকি থাকে না। ওই মুহূর্তে শহরে ঢুকার আর কোন উপায় ছিল না। সবরকম রেডিও কন্ট্রাক্ট বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে, সোহেল অনেক চেষ্টা করেও ওদের মিশন সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। পরের দুইদিন সঙ্গিসাথি নিয়ে এখানে সেখানে লুকিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে ওরা।

দলের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্য বাতাসে ভেসে আসা টুকরো টুকরো খবর থেকে ওরা জেনেছে ন্যটো আবার ডিসট্রিক্ট ইলেভেন দখন করে নিয়েছে, এরশাদ আত্মহত্যা করেছেন, আদালতের আদেশে গৃহবন্দি থাকা মুজিব পরিবারকে কিছু বাঙালি নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। কাজটা বাঙালির হাত দিয়ে হলেও এর পেছনে যে ন্যটোবাহিনি জড়িত সেটা সবাই জানে। ইনভেসনের পর থেকেই রেডিওতে টানা কুরআন শরিফ পাঠ চলছে, আর একটু পর পর নিউজ বুলেটিনে বলা হচ্ছে, “ডিসট্রিক্ট ইলেভেনের উপর মিত্রবাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়েছে। এরশাদ সহ অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীর পতন ঘটেছে।

ডিসট্রিক্ট ইলেভেনে জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহী দলের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া সর্বোপরি ডিসট্রিক্ট ইলেভেনে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ডিসট্রিক্ট ইলেভেনের অধিবাসীদের ঘরের বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের কোন সদস্য বা তথাকথিত মুক্তিবাহিনীর কোন সদস্যের খোঁজ পেলে সঙে সঙে মিত্রবাহিনীর কাছে রিপোর্ট করতে আদেশ দেয়া যাচ্ছে। ” *** আওয়ামীলীগ ও মুক্তিবাহিনী নিধনের লক্ষে পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ ও FIA এর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের অধিনায়ক মামুন আল আজমি (নিহত আলবদর নেতা গোলাম আজমের পুত্র) ময়মনসিংহ ক্যন্টন্মেন্টের রেকর্ড রুমে বসে আছে।

বিশাল বড় হলঘর জুড়ে সাজানো প্রায় ছাদ স্পর্শ করা অসংখ স্টিলের ফাইল র‍্যাক। মামুন এই মুহূর্তে রয়েছে রেকর্ড রুমের রেস্ট্রিক্টেড সেকশনে। এখানকার প্রতিটি ফাইলই টপ সিক্রেট। এমনিতেএইসব রেকর্ডে এক্সেস পাওয়া মামুনের জন্যে অসম্ভব। কিন্তু ডিসট্রিক্ট ইলেভেনে অভ্যুথ্যানের পর এইসব নিয়ম ভেস্তে গেছে।

মুক্তিবাহিনী ক্যন্টন্মেন্ট হামলা করার পর দায়িত্যে থাকা সবাই সব কিছু ফেলে পালিয়ে যায়। মাত্র গতকালই কোয়ালিশন ফোর্স আবার ময়মনসিংহ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে এখানে চেইন অভ কমান্ডের বালাই নেই। রেকর্ড রুমে সবার অবাধ বিচরণ। মামুন অনেকক্ষণ ধরে বিশেষ একটা ফাইল খুঁজছে।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ এই সময়ে ঢাকা বিভাগে FIA ও ISI এর এই অঞ্চলে একটিভ এস্যেটদের (স্পেশাল এস্যাসিন) একটা ক্রসলিস্ট সে তৈরি করেছে। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর লিস্ট থেকে তিনটি নাম সে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। এই মুহুর্তে মামুন এই তিনজন এস্যেটের ১৯৭৯ সালের টার্গেট লিস্টটা খুঁজছে। মুক্তিবাহিনী দখল নেয়ার পর অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে গেছে। মামুন যে ফাইলটা খুঁজছে সেটা অক্ষত পাওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।

প্রায় চার ঘণ্টা পর মামুন আল আজমি রেকর্ড রুম থেকে বের হয়ে এল। তার সারা শরীর কাঁপছে। কপালে ঘাম জমেছে। মামুনের সন্দেহই সত্যি হল। এম মিথ্যে বলেনি।

মামুনের বাবাকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করেনি। গোলাম আজম ১৯৭৯ সালে ময়মনসিংহে একজন ISI এস্যেটের হাতে নিহত হয়েছেন। *** পাকিস্তানের যখন এই অবস্থা তখন আমরা তৎকালীন বহিঃবিশ্বের পরিস্থিতির দিকে একটু নজর দেই। সোভিয়েত আর আমেরিকার মধ্যেকার উত্তেজনা তখন চরম পর্যায়ে পৌচেছে। কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে নিউক্লিয়ার ওয়্যারের সম্ভবনা এতটা জোরাল ভাবে আর দেখা যায়নি।

অন্যান্য দেশগুলোও অতিসাবধানে নিজের নিজের মিত্র বেছে নিয়েছে। কল্পনা করা যেতে পারে পুরো বিশ্ব এখন দুইটা ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে এশিয়ান রাজনীতিতেও। ইন্ডিয়ার বর্তমান সিপিআই সরকার সবসময়েই কম্যুনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়ার আজ্ঞাবহ। কিন্তু ইন্ডিয়ার সাথে চিনের দন্ধ এখন তুঙে।

আবার মার্কিন মদদপুস্ট পাকিস্তান সরকারের সাথে ইন্ডিয়ার চিরকালিন বিরোধ তো লেগেই আছে। পাকিস্তানের সাথে চিনের সুসম্পর্ক আর আগের পর্যায়ে নেই। কারন এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম হুমকি হচ্ছে এই চিন। আর মার্কিনীদের গুড সাইডে থাকতে গিয়ে পাকিস্তানকে তাই চিনের বন্ধুত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছে। চিন ছারাও উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি নিউক্লিয়ার মিসাইল তৈরির ঘোষণা দিয়ে মার্কিনীদের মাথাব্যথার কারন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবী এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার হাতে যা পরিমান নিউক্লিয়ার মিসাইল মজুত আছে তা দিয়ে সবমিলিয়ে পৃথিবীকে মোট ৩০০ বার ধ্বংস করা সম্ভব। মানবজাতি এত ভয়ঙ্কর সময়ের মুখোমুখি আর কখনো হয়নি। মানব সভ্যতা যেন আলোর নেশায় মাতাল পতঙ্গের মত এক নিশ্চিত বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলছে। এমনই সময় করাচির আল হাবিব নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে সন্ত্রাসি হামলা হল।

করাচি শহরের অর্ধেকটা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেল। আনুমানিক ১৩ লক্ষ মানুষ মারা গেল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই ঘটনার প্রভাব হল অভাবনীয়। এমনিতে যতই শত্রুতা থাকুক পাকিস্তানের এমন দুর্দিনে নিকটস্থ প্রতিবেশি ভারত সাহাজ্যের হাত না বাড়িয়ে পারল না। চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে! পাকিস্তানের সবচে পুরানো বন্ধু চিন এই সময় পাকিস্তানের সাহায্যার্থে এগিয়ে এল।

পরবর্তীতে ইন্ডিয়া ও চিনের সম্মিলিত সহযোগিতায় করাচি পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের লক্ষে মোট ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা ও চুক্তি চূড়ান্ত হল। এই চুক্তিটি শুধু পাকিস্তানের কল্যাণের স্বার্থেই নয় বরং ইন্ডিয়া ও চিনের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখল। এই ঘটনা থেকে বিশ্বের কাছে দুইটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। একঃ মার্কিনীরা রাশিয়ানদের বা ফ্রান্স জার্মানির শত্রু নয়। তাদের সবার কমন শত্রু একটাই, সন্ত্রাস।

সন্ত্রাস দমনে বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলো একে অপরের সাথে হাত মেলাল। বিশ্বের অন্যতম সন্ত্রাসি জাতি বাঙালিকে নির্মূল করার লক্ষে জাতি সংঘে নতুন বিল পাশ হল, বির দর্পে ন্যটোবাহিনি বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। পৃথিবীব্যপি সর্বত্র সন্ত্রাস নিধনের মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতে লাগল। আর দুইঃ পৃথিবীর মানুষ নিউক্লিয়ার ডিজাস্টারের ভয়াবহতা আবার নতুন করে উপলব্ধি করল। হিরোশিমার পর এই প্রথম একসাথে ১৩ লক্ষ পোড়া বিকৃত লাশ দেস্খে পৃথিবীর মানুষ শিউরে উঠল।

সকল দেশে সকল দেশে নিউক্লিয়ার উইপন বিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত জোরদার হয়ে উঠল। এই আন্দোলন এক সময় এতই শক্তিশালী হয়ে উঠল যে এক সময় এর জের ধরেই আমেরিকা ও রাশিয়া সহ বিশ্বের প্রধান প্রধান নিউক্লিয়ার অস্ত্রধারী রাষ্ট্রগুলো তাদের স্টার ওয়্যার প্রোগ্রাম বাতিল করতে বাধ্য হল। বলা যায়, করাচির ত্যগের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেল। *** অনেকক্ষণ ধরেই তারেকের কোন সারা শব্দ নেই। সোহেল পাশের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল, তারেক রেডিওটার উপর ঝুঁকে পরে মাউথ পিসে কিযেন বলছে।

সোহেল অবাক হয়ে বলল, “তারেক, কি করছ?” সোহেলের প্রশ্ন শুনে তারেক ঘুরে দাঁড়াল। সোহেল লক্ষ করেনি তারেকের কাছেই মেঝেতে একটা নাইন এমএম বেরেটা পরে রয়েছে। তারেক পিস্তলটা হাতে তুলে নিল, তার পর সোজা সোহেলের বুকে গুলি করল। সুজা বাহিরে পাহারায় ছিল । গুলির শব্দে শুনে সে ছুটে এল।

দরোজার কাছে আসতেই মাথায় গুলি খেয়ে সুজার দেহটা ছিটকে পড়ল। পাশের ঘরের এক কোনে আন্দালিব পার্থ শুয়ে আছে। তার জ্বরটা বেরেছে। গুলির শব্দ শুনে সে কম্বল সরিয়ে মাথা উচিয়ে উঁকি দিল, উঠে যাবার ক্ষমতা নেই। তারেক পিস্তল হাতে দৃপ্ত পদক্ষেপে পার্থের সামনে এসে দাঁড়াল।

তারপর পার্থর বিস্মিত বিহ্বল চোখ দুটির ঠিক মাঝখানে পিস্তল তাক করল। এই সময় খালেদা জিয়া এসে পুত্রের হাত চেপে ধরলেন, “কি... কি করছিস তুই?” তারেক দৃঢ় হাতে মাকে ঠেলে সরিয়ে দিল। তারপর মায়ের বিস্ফারিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে পার্থের মাথায় গুলি করল। “তারেক, বাবা... তুই তুই কি করছিস?” এম এর মুখে কথা আটকে যাচ্ছে। তার মাথা কাজ করছে না, মনে হচ্ছে তিনি একটি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখছেন।

“কি করছি বুঝতে পারছ না? পার্থকে মেরে ফেললাম। সোহেল আর সুজাকেও মেরেছি। ” তারেক সহজ ভাবে বলল। “কিন্তু... কিন্তু কেন?” এম প্রস্নটা শেষ করতে পারলেন না। “ওদেরকে আর আমার প্রয়োজন নেই।

টাস্কফোর্সকে খবর দেয়া হয়ে গেছে। আমি না মারলেও ওরা পুলিশের হাতে মারা পড়তই। ” তারেক জবাব দেয়। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে এম বললেন,“তুই কিভাবে এটা করতে পারলি?” “কিভাবে পারলাম?” তারেক যেন কিছুটা উদাস হয়ে যায়। “শেষ কবে তুমি ঘরের জানালাটা খুলে বাহিরে তাকিয়েছ মা? কবে বাহিরের দুনিয়াটাকে দেখার চেষ্টা করেছ? বুঝার চেষ্টা করেছ? তুমি কি দেখেছ ডিসট্রিক্ট ইলেভেনের জীবন কেমন? তোমরা তথাকথিত জননেতারা কখনো ভেবেছ তোমাদের মিস প্লেসড আইডিয়ালিজমের কারনে তোমরা দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছ? ৭১ এ তোমাদের ভুলের জন্যেই আজ বাঙালির এই করুন দশা।

” “কি বলছিস তুই এসব পাগলের মত?” এম আর্তনাদ করে উঠলেন। “পাগল তোমরা মা, যারা এখনো স্বাধীনতার নেশায় অন্ধ হয়ে আছ। তোমরা স্টাব্লিস্ট সিস্টেমকে ভাঙতে এতই ব্যস্ত ছিলে যে সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে নিজের উন্নতি করার কথা তোমাদের কখন মনে হয়নি। ” “তোর কি তাই মনে হয়? আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যে?” “তা নয়তো কি? দেখ একই জিনিসকে আমরা অনেক ভাবে ব্যখ্যা করতে পারি। জাতিগত মুক্তির মুল প্রেরণাটা আসলে কি? ব্যক্তি উন্নয়ন ছাড়া আর কিছুই নয়।

” “তুই সত্যি পাগল হয়ে গেছিস। মিলিটারি ক্যম্পে ওরা তোর ব্রেইন ওয়াস করে দিয়েছে। ” “না মা, ওরা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। ওরা আমাকে নতুন করে বুঝতে শিখিয়েছে। আমি দুঃখিত যে তুমি এখনো অন্ধ রয়ে গেছ।

” এম তার ছেলের কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তারেক ধির পায়ে মায়ের কাছে এসে দাঁড়াল, তারপর বলল “আমরা এক নতুন পাকিস্তানের জন্ম দেব মা। রুপে বর্ণে ঐশ্বর্যে ভরপুর এক নতুন পাকিস্তান। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা। শুধু একটাই দুঃখ, তুমি সে পাকিস্তান দেখে যেতে পারবে না।

” খালেদা জিয়ার বাম চোখ দিয়ে উত্তপ্ত এক টুকরো শিসা ঢুকে গেল। তারেক একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। তারপর মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আপন মনে শিস দিতে লাগল। আর মিনিট দশেকের মধ্যেই পুলিশ এসে পরবে। *** সোহেল... সোহেল... চোখ খুল... সোহেল কে যেন ডাকছে... কে ডাকে...?? বাবা?? বাবা ডাকছে??? সোহেল... চোখ খুলে তাকাও... জলদি... কে... কে... বাবা তুমি কোথায়??? সোহেল চোখ খুলে তাকায়... কে কথা বলে?? সোহেল... সোহেল... এই তো ভাল ছেলে।

এখন চট করে উঠে বস। তোমার বাম বুকে গুলি লেগেছে... ভাগ্য ভালো অল্পের জন্যে হার্টে লাগেনি। গুলিটা পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তোমাকে জলদি রক্তপরাটা বন্ধ করতে হবে। ... কে কথা বলে?? সোহেল এদিক অদিক তাকায়... কেউ নেই... আমি কথা বলছি... সোহেল তুমি সময় নষ্ট কোর না... ইতিমধ্যে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে... তুমি... তুমি কে?? আমি কে তা ভেবে তুমি সময় নষ্ট কর না... তোমার ক্ষতটা বন্ধ করতে হবে... এখানে কি হয়েছে...??? তারেক বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

সে সবাইকে মেরে ফেলেছে। এম... এম কেমন আছে?? এম বেঁচে নেই সোহেল... আমি দুঃখিত... এম বেঁচে নেই... সোহেল হাতরে হাতরে সুই সুতা খুঁজে বের করে। তারপর এক রকম ঘোরের মধ্যে সে বুকের ক্ষতটা সেলাই করে। তারপর কাধটা ভালো করে পেঁচিয়ে বাধে। রহস্যময় কণ্ঠটি বলে উঠে, তোমার এখানে থাকা নিরাপদ না... তোমাকে এক্ষুনি এখান থেকে বের হতে হবে... আমি কোথায় যাব?? আমি বলে দেব... তুমি ভেব না... তুমি শুধু আমার কথা মত কাজ করে যাও... সামনের দরোজায় দুইজন পুলিশ আছে।

তুমি পাশের ঘরে যাও। জানালা খুলে পাইপ বেয়ে নামতে হবে, পারবে না? সোহেল পাশের ঘরে যায়। মেঝে জুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত... তার সহযোদ্ধাদের রক্ত... সোহেল সময় নষ্ট কোর না... সোহেল একজন প্রশিক্ষিত যোদ্ধা... প্রবল কষ্ট সহিষ্ণু এই মানুষটি বুকে গুলি খাওয়ার পরেও আহত শরীর নিয়ে জানালা খুলে পাইপ ধরে ঝুলে পড়ল। পাইপ ছেঁচড়ে সোহেলের দেহটা নিচে নেমে এল... সোহেলের হাতের তালু জলে গেল... শেষ পর্যন্ত আর সে পাইপ ধরে রাখতে পারল না, মাটি থেকে ছয় ফুট অপরে থাকতেই পাইপ ছেরে দিয়ে ধপাস করে মাটিতে পরে গেল। ।

সোহেল... তুমি ঠিক আছ তো?? বুকের ব্যথাটা ঠোট কামড়ে গিলে নিয়ে সোহেল বলল হা ঠিক আছি। মুখে বলার দরকার নেই... তুমি মনে মনে ভাব্লেই আমি বুঝতে পারব... তোমাকে এখন গলির মাথায় যেতে হবে... ওখানে তুমি একটা ভ্যান দেখতে পাবে... তুমি ভ্যানে উঠে বসবে... ভ্যনের ইগ্নিশনে চাবি নেই, কিন্তু তুমি তো হট ওয়্যার করতে জানই... তুমি কে?? তুমি কিভাবে আমার সাথে কথা বলছ... সব বলব... তুমি এখন দাঁড়িয়ে থেক না... পা চালাও... মিনিট বিশেক পর নবীনগরের পথ ধরে সোহেলের ভ্যনকে ছুটে যেতে দেখে গেল। তুমি কে সেটা তো বললে না? তুমি কিভাবে আমার মাথার ভেতরে কথা বলছ?? আমি রুমি। শাফি ইমাম রুমি... রুমি... ব্ল্যক লেপার্ডের লিডার?? হা আমি সেই রুমি... তুমি... তুমি বেঁচে আছ?? আমি বেঁচে আছি, আবার নেই... মানে?? ব্যপারটা বুঝানো একটু কঠিন... কি হইয়েছিল তোমার?? ভৈরবের কাছে আমি পুলিশের হাতে ধরা পরি...আমাকে ইস্লামাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়... সেখান থেকে করাচি... ওরা তোমাকে করাচি নিয়ে গিয়েছে... হুম্ম... ওরা আমাকে রেডিয়েশন এরিয়ার ভেতরে পাঠায়... অখানেই আমার নশ্বর দেহের মৃত্যু ঘটে... আমি এখন এক কালেক্টিভ কনশাস্নেসের অংশ... মানে?? আমি এখন দেহহিন... অবিনশ্বর... এক অসিম কালেক্টিভ কনশাসনেস... এখানে আমরা সবাই এক... সবাই সংযুক্ত... এখানে আমরা সব কিছু দেখতে পাই... বর্তমান ও অতিত... আমরা দেখতে পাই একটা কিছু কেন ঘটে... কিভাবে ঘটে... আমরা কালেক্টিভ কনশাসনেস... আমি কিছি বুঝতে পারছি না... তুমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে... এখন তোমার অনেক কাজ... তুমি কিভাবে আমআর সাথে কথা বলছ?? আমি ইথার ব্যবহার করছি... এখানে আমার সাথে আরও অনেকেই আছে... আমার আগে যারা এসেছিল... শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান...এখানে আমরা সবাই এক... আমার বাবা ... আমার বাবা্‌, কি ওখানে আছে...? আমি বাবার সাথে কথা বলতে পারব?? হা তোমার বাবা এখানে আছেন... তুমি তার সাথেও কথা বলছ... এখানে আমরা সবাই এক... এক অভিন্ন শক্তির অংশ... এখানে সকল আত্মারা ফিরে আসে... এখান থেকেই নতুন আত্মার জন্ম হয়... তুমি আমার সাথেই কেন কথা বলছ? আর কেউ তোমাকে শুনতে পায় না কেন? আমরা সবাইকেই ডাকি... কিন্তু যে আমাদের ডাক শুনতে চায় শুধু সেই আমাদের শুনতে পায়... তুমি আমাকে কেন ডাকছ?? তুমি আমার কাছে কি চাও?? বাঙালি জাতির সাথে চরম অন্যায় করা হয়েছে...অনেক বড় সত্য গোপন করে যাওয়া হয়েছে... তোমাকে এই সত্য পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে... কি সত্য? আমি তোমাকে দেখাচ্ছি... সোহেল দেখতে পায়... তার চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসে... আমাকে এখন কি করতে হবে?? আমি বলছি... তোমাকে প্রথমে ফরিদপুর যেতে হবে... সেখানে ক্যপ্টেন আবু তাহের নামে একজন সৈনিককে খুঁজে বের করতে হবে... রুমি ওরফে কালেক্টিভ কনশাসনেস বলে যায়... সোহেল মন দিয়ে শোনে... করাচি ট্র্যাজেডির জন্যে বাঙ্গালিরা দায়ি নয়। পৃথিবী যখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখিন তখন যুদ্ধ এড়াতে কিছু মানুষ এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা আঁটলেন।

তারা তাদের পরিকল্পনার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন পাকিস্তানকে। এরশাদ যখন আল হাবিব পাওয়ার প্ল্যান্টে বোমা হামলার প্ল্যন করলেন, এই নিউজ অনেক আগেই পাকিস্তান ইন্টিলিজেন্স পেয়েছিল। তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগালেন। এরশাদকে কোন বাঁধা না দিয়ে তাকে তার পরিকল্পনা মত কাজ করতে দিলেন। হাবিব নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টটি ধ্বংসের সুযোগ নিয়ে তারা করাচিতে ব্যপক পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে দিলেন।

আসলে নিউক্লিয়ার রিএক্টরের বিস্ফোরণে করাচি ধ্বংস হয়নি। করাচি ধ্বংস হয়েছে সুপরিকল্পিত নিউক্লিয়ার বোম্বিং এর ফলে। করাচির ত্ম্যগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বিশ্বশান্তি। EPISODE CREDIT: হারানো ছায়া, নাজিম উদ দৌলা, rudlefuz (End of Season 1) rudlefuz এর কথাঃ এটা ছিল আমার প্রথম বর্ষপূর্তি পোস্ট। এই এক বছর অনেকেই আমার সাথে ছিলেন, আমি ভালো লিখলে প্রশংসা করেছেন, খারাপ লিখলেও প্রশংসা করেছেন আপনাদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

আপনারা উৎসাহ না দিলে কখনই লেখালিখি চালিয়ে যয়া সম্ভব হত না। ভবিষ্যতেও আপনাদের সাথে পাব আশা রাখছি... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।