আমি লেখক খারাপ হতে পারি কিন্তু ছেলে ভাল ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পরাজয় হয়েছে। পুর্ব বাংলার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ডিসট্রিক্ট ইলেভেন, বাঙালির সকল মানবিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের জীবনকে পশুর জীবনে পালটে দেয়া হয়েছে। এমনই সময়ে এক রহস্যময় নিউক্লিয়ার বিস্ফোরনে করাচি শহর সম্পুর্ন রুপে ধ্বংস হয়ে যায়। করাচি ধ্বংসের বিশৃঙ্খলা কাজে লাগিয়ে হুসেন মুহম্মদ এরশাদ পুনরায় বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।
এখান থেকেই আমাদের আজকের গল্প শুরু।
আগের পর্বঃ রক্তাক্ত প্রান্তর Click This Link
ইসলামাবাদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।
বেনজির ভুট্টো তার পাতলা ফ্রেমের চশমার পেছন থেকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন টেবিলের উপরে রাখা কাগজগুলোর দিকে। ওতে তার প্রেসিডেন্সিয়াল স্পিচ লেখা, আর মিনিট পনের পরেই মিডিয়া রুম থেকে এই স্পিচ সারা দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। সেই সাথে সাথে বিবিসি ও আলজাজিরা নেটয়ার্কও আজকের এই স্পিচটা লাইভ এয়ার করছে। পৃথিবী জুড়ে রাজনিতিক, নিতিনির্ধারক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের চোখ এই সেমিনারের দিকে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আজ কি বলেন তা নিয়ে চাপা কৈতুহল চলছে সবার মধ্যে। নানা রকম গুজব ও স্পেকুলেশন ছড়িয়ে পড়েছে ডিপ্লোম্যাটিক কমিউনিটি গুলোতে। অসংখ্য মানুষের জীবন নির্ভর করছে এই ভাষণের উপর,তাই যারা এই জীবনগুলোকে নিয়ে খেলা করেন, আজ তাদের সবার চোখ টেলিভিশনের পর্দায় নিবদ্ধ।
বেনজির চোখ বন্ধ করলেন। স্পিচটাতে শেস মুহুর্তে মিডিয়া এডভাইজার বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে।
কাগজগুলোতে আর একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া দরকার। কিন্তু তার ইচ্ছে করছে না। চোখ বন্ধ করেও তিনি রেহাই পেলেন না। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল করাচির দৃশ্য। আজ সকালে হেলিকপ্টার থেকে রেডিয়েশন সাইটের বেশ কিছু ক্লোজআপ ফুটেজ তোলা হয়েছে।
দেখলেই গা শিউরে উঠে। করাচির আকাশ এখনও ছাইয়ের মেঘে ঢেকে আছে, সূর্যের দেখা নেই। এই জুলাই মাসে করাচির তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। বাতাসে উড়ছে তেজস্ক্রিয় ছাই। বাড়িঘরের ধংসস্তুপ, পথঘাট, মাটি মৃত গাছপালা সব কেমন ফ্যকাসে সাদা বর্ন ধারন করেছে।
করাচি যেন একটা কংক্রিটের মহাশ্মশানে পরিনত হয়েছে। বিজ্ঞানিরা বলছেন করাচি আবার জীবন ধারনের উপযোগী হতে ১০০ বছরের বেশি সময় লেগে যাবে।
মিডিয়া এডভাইজার উঁকি দিয়ে বললেন, “ম্যডাম, আমরা তৈরি। “
বেনজির কাগজগুলো নিয়ে উঠে পড়লেন। কেন যেন তার ইচ্ছে করছে, হাতের এই কাগজে টাইপ করা কৃত্রিম বুলিগুলো ভুলে গিয়ে নিজের মন থেকে কথা বলতে।
তিনি জানেন সেটা সম্ভব নয়।
***
জুন মাসের ৪ তারিখ রাতে আওয়ামিলিগ দলনেত্রি এম (খালেদা জিয়া) ঢাকায় সিক্রেট কাউন্সিলের মিটিং এ যোগ দিতে এসে টাস্কফোর্সের হাতে ধরা পড়েন। তাকে প্রথমে তেজগাঁও ক্যন্টনমেন্টে ও পরে সেখান থেকে এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো সময়টা এম এর চোখ একটি কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল। এই দির্ঘ সময়ে কেউ এম এর সাথে কোন কথা বলেনি।
তিনি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেছেন, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সিক্রেট কাউন্সিলের বাকি মেম্বারদের কি হয়েছে। কেউ উত্তর দেয়নি।
এম এর চোখ থেকে যখন কাপড় সরানো হল তিনি নিজেকে এক নিছিদ্র অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবিস্কার করলেন। এই অন্ধকার এতই গাড় যে চোখ খুললে বা বন্ধ করলে দৃষ্টিতে কোন তারতম্য ধরা পরে না। প্রকোষ্ঠটি অত্যন্ত ছোট এবং সম্পুর্ন শব্দ নিরোধক।
এম নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া দ্বিতীয় কোন আওয়াজ পাচ্ছেন না। এই প্রকোষ্ঠের নাম তিনি আগে শুনেছেন। একে বলে আইসোলেশন বা সেন্সরি ডিপ্রাইভেসন চেম্বার। এর মাধ্যমে বন্দিকে বহির্জগতের সকল অনুভূতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এই আইসোলেটেড অনুভূতি বন্দিকে মনের দিক থেকে দুর্বল করে ফেলে।
প্রি-ইন্টারোগেশন থেরাপির জন্যে আইসোলেশন চেম্বার ব্যবহার করা টাস্ক ফোর্সের পুরানো পদ্ধতি।
এম অতি দ্রুত সময়ের হিসাব হারালেন। কতটা সময় কেটে গেছে তিনি বলতে পারবেন না। হয়তো একটা যুগ, হয়তো একটা মুহুর্ত। কে জানে!! এক সময় তার হেলুসিনেসন শুরু হল।
তিনি নিজের মৃত স্বামীকে দেখতে পেলেন। মেজর জিয়ার কাঁচাপাকা ভ্রূর নিচে অতি উজ্জ্বল একজোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে, ধিরে ধিরে চোখ দুটো রক্তে ঢাকা পরছে। কিন্তু ওই চোখের দিপ্তি কমছে না। তিনি নিজের ছেলেকে দেখতে পেলেন। তার চোখ মুখ ও ঢেকে যাচ্ছে কালচে রক্তে।
পাঁচ বছর আগে তারেক পুলিশের হাতে ধরা পরে। ও আদালতে যাবারও সুযোগ পায়নি, পুলিস ক্যম্পের ভেতরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১২ ঘন্টা আইসোলেসন চেম্বারে আটকে রাখার পর এম কে বের করে আনা হল একটা চোখ ধাধানো আলোয় আলোকিত ঘরের মাঝে। এম সাথে সাথে বমি করে গায়ের কাপড় ভিজিয়ে ফেললেন। তাকে ওই অবস্থাতে একটা লোহার চেয়ারে বসিয়ে রাখা হল দির্ঘ সময়।
ঘরে এই একটা চেয়ার ছাড়া আর কোন আসবাব নেই। ঘরের দেয়ালে উজ্জ্বল সাদা রঙ করা, আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগছে। এম এর মনে হল আবার বমি করে ফেলবেন। ঘরে লুকানো ক্যমেরার সাহাজ্যে নিশয় তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। ঠিক পাশের ঘরেই বেশ কিছু মানুষ খুব মনযগ দিয়ে টিভি স্ক্রিনে এম এর প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ করছে।
সময় কেটে যাচ্ছে। এক সময় এম নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। তিনি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে উন্মাদের মত চিৎকার করে করে উঠলেন। তার চিতকারে কেউ সারা দিল না। এক সময় তিনি ক্লান্ত হয়ে থেমে গেলেন।
তার অনেক পরে কোথাও থেকে একটা যান্ত্রিক কন্ঠ ভেসে এল, “খালেদা জিয়া। আপনাকে এখন কিছু প্রশ্ন করা হবে। আপনি প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন। ”
এম ঢুলুঢুলু চোখ তুলে বললেন “কে কে কথা বলে?”
কোন উত্তর নেই। সেই আগের যান্ত্রিক কন্ঠটি আবার শুনা গেল, “আপনাকে এখন কিছু প্রশ্ন করা হবে।
আপনি প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন। ”
প্রায় ষোল ঘন্টা বিরতিহিন ইন্টারোগেশন চলল। যান্ত্রিক কন্ঠটি তাকে একই প্রশ্ন বারবার করে গেল। এম একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিলেন না। ইন্টারোগেশনের একপর্যায়ে চরম ক্লান্তিতে এম এর চোখ বন্ধ হয়ে এল।
তার শরীর বিদ্রোহ করছে, তিনি আর জেগে থাকতে পারছেন না। কিন্তু তাকে ঘুমাতে দেয়া হল না। যতবার তিনি ঘুমিয়ে পড়তে যান ততবার চেয়ারে স্বল্প ভোল্টের ইলেক্ট্রিসিটি পাঠিয়ে তাকে জাগিয়ে দেয়া হয়। এম চেয়ারে বসেই পেচ্ছাব করে ফেললেন। কিন্তু তার ইন্টারোগেশন বন্ধ হল না।
এম এক সময় হেসে ফেলে বললেন, “আমি জানি তুমি কে। তুমি মামুন, গোলাম আজমের ছেলে। ” পাশের ঘরে সেকেন্ড অফিসার চট করে টাস্কফোর্স লিডার মামুন আল আজমির দিকে তাকাল। মামুনের চেহারা ভাবলেশহীন।
এম বলে চললেন, “তুমি কি ভেবেছ, ওরা তোমাকে টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছে দেখেই তুমি ওদের একজন হয়ে গেছ? ওদের চোখে তুমি এখনও একজন নোংরা বাঙালি।
”
এবারও মামুনের চেহারা ভাবলেশহীন। এম বলছেন, “৭১ তোমার বাবা বাঙালির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, আর এখন তুমি সরকারের কুকুর হয়েছ। নিজের বাবার হত্যাকারীর সাথে হাত মিলিয়েছ। তুমি কি সত্যি মনে কর গোলাম আজম মুক্তিবাহিনির হাতে মারা গেছে, এর পেছনে সরকারের কোন ষড়যন্ত্র ছিল না?”
মামুন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আইসলেসন চেম্বারে নিয়ে যাও। এবারে আঠার ঘন্টার জন্যে।
”
এমকে আঠার ঘন্টা আইসলেশন চেম্বারে রাখার পর পুনরায় যখন ইন্টারোগেশন কক্ষে নিয়ে আসা হল তখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাও তার নেই। এই আঠার ঘণ্টায় ভুবার তার চেতনা লোপ পেয়েছে। এই মুহূর্তে তার মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে, চোখে ঠিক মত দেখতে পাচ্ছে না।
এবার আর ঘরটি আগের মত শূন্য নয়। ঘরের একপাশে মামুন আল আজমি দাঁড়িয়ে আছে।
সে এমকে চেয়ারে বসতে বলল। তার চেহারা আগের মতই ভাবলেশহিন। স্পিকার ছারাও মামুনের কন্ঠটা যান্ত্রিক শুনাল। সে বলছে, “আমি জানি আপনি আমাদের সাথে সহযোগিতা করবেন। আপনি জানতে চান আমি কিভাবে এটা জানি?”
এম কোন কথা বললেন না।
মামুন নিজেই উত্তর দিলেন, “আমি এটা জানি কারন আপনার ছেলে তারেক জিয়া এখনও জিবিত আছেন। তাকে মেরে ফেলার যে তথ্য প্রচার করা হয়েছিল সেটি ভুল। এই মুহুর্তে তারেক পাশের ঘরে অবস্থান করছেন। আপনি আমাদের সাথে যত দ্রুত সহযোগিতা করবেন, তত দ্রুত আপনি আপনার সন্তানের সাথে মিলিত হতে পারবেন। ”
এম এবার কিছু বললেন না।
একটু হাসলেন কেবল।
***
ঢাকার বাড্ডা এলাকা।
ঘড়িতে সময় রাত ১১টা। এমন কোন রাত নয়। কিন্তু এর মধ্যেই চারপাশটা কেমন নির্জন হয়ে এসেছে।
অন্ধকার গলির এক কোনে একটা ভাঙা ল্যম্পপোস্টের নিচে একটা মাইক্রোবাস ও একটি মিনিভ্যান ঘাপটি মেরে বসে আছে। ছোট মাইক্রোবাসটির ভেতরে সামনের তিন সিটে আটজন কমান্ডো গাদাগাদি করে বসেছে। সবার পেছনে চতুর্থ সিটটা দখল করে আছে ইক্যুইপমেন্ট ব্যগ। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে সোহেল তাজ, তার ঠোঁটে একটা জলন্ত সিগারেট ঝুলছে। অনেকক্ষণ সিগারেটে টান নেয়া হয়নি।
সোহেলের পাশেই বসেছে আন্দালিব পার্থ। সে একটু পর পর নাক কুচকাচ্ছে। পাশের ডেন থেকে মড়া বেড়ালের পচা গন্ধ আসছে। পার্থর পেটের ভেতর পাঁক দিয়ে উঠছে। গাড়িটা একটু এগিয়ে সামনে ভালো কোথাও রাখলে কি হয়? কিন্তু সোহেলকে কথাটা বলার সাহস হচ্ছে না।
মুজিব সরকারের প্রেসিডেন্ট তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ মানুষটা ভীষণ গম্ভীর। তার সাথে কথা বলতেই তো ভয় লাগে। স্পেশাল অপ্স টিমে যোগ দিয়ে খুব অল্প সময়ে সোহেল একজন দুধর্স যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। টাইগার ইউনিটের লিডার সোহেল তাজ পাঁক টাস্কফোর্সের কাছে এক মুর্তিমান আতঙ্ক।
পার্থ ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাল।
টাইগার ইউনিটের বাকি সদস্যরা কোন কথা বলছে না। জাভেদ চ্যুইংগাম চিবুচ্ছে, মনি গাল চুল্কাচ্ছে। এরা সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ যোদ্ধা, পরিস্থিতির উত্তেজনা তাদেরকে স্পর্শ করছে না।
১৩ই আগস্ট জেনারেল (স্বঘোষিত) হুসেন মুহম্মদ এরশাদ ঝালকাঠি থেকে নিজেকে স্বাধীন বাংলার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার পর টাইগার ইউনিট মুক্তিবাহিনীর সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। টাইগার ইউনিটের সদস্যরা শুধুমাত্র এম অথবা এম মনোনীত অন্যকোন আওয়ামীলীগ নেতার প্রতি অনুগত।
একজন টেরোরিস্ট ও সেলফ প্রক্লেইমড সেভিওরের নেতৃত্ব মেনে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরশাদের আদেশ উপেক্ষা করে তারা এম এর হদিশ বের করার চেষ্টা চালিয়েছে। অবশেষে বহু চেষ্টার পর এম এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়া গেছে। আজ রাতে টাইগার ইউনিটের মিশন এমকে মুক্ত করে আনা।
রাত সাড়ে বারোটায় মাইক্রোবাসটি টঙ্গির দিকে যাত্রা শুরু করল।
ভোর চারটার দিকে মাইক্রোবাসটিকে গাজীপুরের জংলা পথ ধরে ছুটে যেতে দেখা গেল। বাসের একপাশের সবগুলো জানালার কাঁচ বুলেটের আঘাতে ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। বাসের পেছনে যে সিটে আগে ইকুইপমেন্ট ব্যগগুলো ছিল, সেখানে এখন এম বসে আছেন। তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন; কিন্তু তার মুখে প্রশান্তির হাসি। তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তার পুত্র তারেক।
***
এরশাদের হিসেবে কিছু ভুল ছিল। করাচি ধ্বংসের আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে তিনি এক ধাক্কায় বাংলার একটা বিশাল অংশ দখল করে নেন ঠিকই, কিন্তু এর ফলশ্রুতিতে কি ঘটতে পারে তা নিয়ে এরশাদের পরিষ্কার ধারনা ছিল না। করাচি ধ্বংস সারা পৃথিবীকে ভীষণ ভাবে নারা দিয়ে যায়। পৃথিবীর কাছে বাঙালি জাতি পাকাপাকি ভাবে টেররিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। বাঙালির স্বাধীনতার ইস্যুতে যারা সরব ছিলেন, এই ঘটনার পর তারা সবাই কেমন মিইয়ে গেলেন।
এমনকি পুর্ব পকিস্তানের স্বাধীনতার সবচে বড় সমর্থক ইন্ডিয়াও এরপর নিরব হয়ে গেল। ১৩ লক্ষ নিরাপরাধ মানুষের হত্যাকারীর সাথে বন্ধুত্য রাখা কোন কাজের কথা নয়। অহঙ্কার ও হঠাত পাওয়া ক্ষমতার আবেশে অন্ধ এরশাদ ভাবলেন, আন্তর্জাতিক সমরথন ছাড়াই তিনি দেশ স্বাধীন করে ফেলবেন। আদতে সেটা ছিল একটি মারাত্মক ভুল।
এরশাদ দ্বিতীয় ভুলটি করলেন দলে এম এর প্রভাবকে খাটো করে দেখে।
তার পরিকল্পনা ছিল এম ধরা পরবার সাথে সাথে তিনি গুপ্তহত্যার মাধ্যমে এম কে সরিয়ে দেবেন। সে অনুযায়ি দুইবার এম এর প্রান নাশের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ভাগ্যবশত দুইবারই এম প্রানে বেঁচে যান। দুইবার ব্যর্থ হবার পর এরশাদ এম এর ব্যপারে মাথা ঘামানো বাদ দিলেন। তিনি ভাবলেন তিনি জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছেন।
এখন এম পুলিসকে যাই তথ্য দিক, তাকে কিছুই থামাতে পারবে না।
করাচি ইন্সিডেন্টকে ইস্যু করে জাতিসংঘে নতুন বিল পাশ হল। রাশিয়া, ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেশ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করলেন। সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে পাক বাহিনির নেতৃত্বে ন্যটোর কোয়ালিশন ফোর্স ডিসট্রিক্ট ইলেভেন (প্রাক্তন পুর্ব পাকিস্তান) এ প্রবেশ করল।
ডিসট্রিক্ট ইলেভেনে রক্তের বন্যা বয়ে গেল।
৭১ এ ২৫শে মার্চ রাত্রির বিভীষিকা যারা দেখেছেন তারা পর্যন্ত ন্যটোর বর্বরতায় স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
এম শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। পুত্রের প্রান রক্ষা করতে গিয়ে তিনি পুলিসের কাছে মুখ খুলেতে বাধ্য হয়েছেন। অল্পদিনের মধ্যেই সরাকারের ভেতরে মুক্তিবাহিনীর যত কোভার্ট এজেন্ট ছিল সবাই একে একে ধরা পড়ল। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই বন্দি হলেন।
বেশ কিছু গোপন সেফ হাউজে অতর্কিতে হামলা চালানো হল। সারা দেশের সর্বত্র মুক্তিবাহিনি মার খেয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হল।
অক্টোবরের ২৯ তারিখে গোপালগঞ্জে শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থায় নিজের বাঙ্কারের ভেতর হুসেন মুহম্মদ এরশাদ প্রথমে তার স্ত্রি ও পরে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করলেন।
(to be continued)
আগের পর্ব Click This Link
পরের পর্বঃ পরাভূত Click This Link
EPISODE CREDIT: হারানো ছায়া, নাজিম উদ দৌলা, rudlefuz ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।