ফুটবলের উন্নয়নে নাকি অনেক অর্থ লাগে! ভালো মানের মাঠ অথবা স্টেডিয়াম ছাড়া নাকি ফুটবলে বেশি দূর যাওয়া যায় না। এমন ধারণা যাদের, তাদের আফগানিস্তানের ফুটবল নিয়ে একটু পড়াশোনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। সত্যিকারের কোনো ভৌত সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই যে একটি দেশ ফুটবলে তরতর করে ওপরের দিকে উঠে যেতে পারে, তার অন্যতম সার্থক উদাহরণ এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। দেশটির ঘরোয়া ফুটবল লিগের যাত্রাও নাকি শুরু হয়েছে মাত্র গত বছর। যুগের পর যুগ গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত আফগান জাতি প্রমাণ করেছে কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কেউ ফুটবল খেলাটাতে বলার মতো উন্নতি করতে পারে।
উন্নতি করতে পারে তখনই, যখন কোনো জাতি সত্যিকার অর্থে খেলাটিকে ভালোবাসে, যদি সত্যিকার অর্থে তাঁরা তা খেলতে জানে। ফুটবল খেলতে প্রতিভা থাকতে হয়। আফগানিস্তানে সেই প্রতিভা আছে যথেষ্টই।
কাল ছিল আফগানিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় এক দিন। দক্ষিণ এশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় আফগানিস্তান কাল শিরোপা জয় করেছে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে।
কাল আফগানিস্তান কেবল একটি শিরোপাই জয় করেনি, জয় করেছে অনেক কিছুই। আফগানরা জয় করেছে বিশ্ববাসীর হূদয়। সারা বিশ্ব এখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিবাদ-সংকুল দেশটির দিকে। শুধু প্রতিভা আর ইচ্ছাশক্তির জোরে একটি দেশ যে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে, তা আফগানিস্তান বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে বেশ জোরের সঙ্গেই।
আফগানিস্তানে ফুটবল-চর্চাটা একেবারে নতুন কিছু নয়।
ফুটবলটা তারা খেলে অনেক আগে থেকেই। ১৯৫৪ সালে আফগানিস্তান এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসির সদস্যপদ লাভ করে। সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত এশিয়ার বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতায় নিয়মিতই অংশ নিত আফগানরা। তবে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের মাধ্যমে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী এক গৃহযুদ্ধের সূচনা হলে অন্য আর সবকিছুর মতোই ফুটবলটাও চলে যায় মানসপটের আড়ালে। পুরো আশির দশক আফগানিস্তান অনিয়মিত হয়ে পড়ে ফুটবলের বিভিন্ন আসরে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে দেশটিতে তালেবান দখলদারির দামামা বেজে উঠলে খেলাধুলা পরিণত হয় অসম্ভব এক বিষয়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবানরা আফগানিস্তান পুরোপুরি দখলে নিয়ে নিলে সেখানে খেলাধুলা পরিণত হয় নিষিদ্ধ এক বিষয়ে। স্টেডিয়ামগুলো হয়ে যায় জঙ্গি তালেবানদের বধ্যভূমি। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই পাঁচটি বছর আফগানিস্তানে ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ। ফুটবল স্টেডিয়ামসহ অন্যান্য খেলার মাঠ তালেবানরা ব্যবহার করত বিচারালয় ও বিচারের রায় কার্যকর করার জল্লাদখানা হিসেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।