স্কুলের সময়টুকুর বাইরে এই বয়সের আর দশটা ছেলেমেয়ে ব্যস্ত থাকে ভিডিও গেমস নিয়ে। কিংবা বুঁদ হয়ে থাকে কার্টুন চ্যানেলে, দাপিয়ে বেড়ায় বাড়ির আঙিনা। কিন্তু এই ৮ বছর বয়সে মুশির খান খেলছে ক্রিকেট। ভিডিও গেমসে বা ভাইবোনদের সঙ্গে বাড়ির আঙিনার ক্রিকেট নয়। মুশির খেলছে পেশাদার ক্রিকেট! ৮ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের কাঙ্গা লিগে খেলে গড়েছে টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারের রেকর্ড।
চোখ কপালে তোলার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তবে বাকি আছে আরও। পরশু কাঙ্গা লিগের ম্যাচে স্পোর্টসফিল্ড ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ক্যাথলিক জিমখানার বিপক্ষে এই মুশির নিয়েছেন ৫ উইকেট! বলার অপেক্ষা রাখে না, টুর্নামেন্টের ৬৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড এটিই! বেঙ্গল ক্রিকেট ক্লাবের শিবাজি পার্কে তিন-চার গুণ বেশি বয়সী ব্যাটসম্যানদের বাঁহাতি স্পিনে বোকা বানিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছে ৭৮ রানে। পরে ব্যাট হাতেও ৬৫ মিনিট (৫০ বলে ২) উইকেটে থেকে দলকে ড্র করতে সাহায্য করেছে। সাবেক ক্রিকেটার ড. হোরমাসজি ডোরাবজি কাঙ্গার স্মরণে মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী এই টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে ১৯৪৮ সাল থেকে।
গত মাসে একটি প্রীতি ম্যাচে যুবরাজ সিংকে আউট করে হইচই ফেলে দিয়েছিল মুশির। এবার কাঙ্গা লিগের রেকর্ড। তবে কীর্তি যত বড়ই হোক, আসলে তো সে ‘পিচ্চি’। ম্যাচের পর প্রতিক্রিয়া শুনুন, ‘এখন আব্বা নিশ্চয়ই আমাকে চিকেন ফ্রাই খাওয়াবে!’ তার আব্বা, নওশাদ খান আবার এই স্পোর্টসফিল্ড দলের অধিনায়ক ও কোচ। ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভাই শুধু নয়, মুশিরের এই চমক-জাগানিয়া পারফরম্যান্সের পেছনে আছে এই বয়সেই অনেক অধ্যবসায়।
ভোর ৫টায় শুরু হয় তার দিন। আজাদ ময়দানে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে অনুশীলন। এরপর স্কুল, আনজুমান-ই-ইসলাম স্কুলে পড়ছে চতুর্থ শ্রেণীতে। পরে ইংরেজি ও অঙ্ক শিক্ষকের কাছে পড়া। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আবার অনুশীলন।
নটায় ঘুমাতে যাওয়া। মুম্বাইয়ের উপকণ্ঠ কুরলায় ট্যাক্সিনে’স কলোনির সমবয়সীদের সঙ্গে তাই ছুটোছুটি, দাপাদাপি করা হয়ে ওঠে না তার।
তবে ওসব মাথায়ও নেই মুশিরের। সাড়ে চার ফুট উচ্চতার বিস্ময় বালক ছাড়িয়ে যেতে চান সবাইকে। স্বপ্ন তার, ‘টেন্ডুলকারের মতো ব্যাটসম্যান হতে চাই, বোলার হতে চাই ভেট্টোরির মতো।
’ পরশুর ম্যাচের প্রতিপক্ষ অধিনায়ক, ৪০ বছর বয়সী দীপক ঠাকুর মুশিরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎটা দেখতে পাচ্ছেন এখনই, ‘মনে আছে, অনেক দিন আগে আমি শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে খেলেছিলাম। তখনই আমরা বলাবলি করতাম, এই ছেলে ভারতের হয়ে খেলবে। মুশিরকে নিয়েও একই কথা আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। ’
কাঙ্গা লিগে সবচেয়ে কম বয়সে খেলার রেকর্ডে মুশির ভেঙেছে তার ভাইয়েরই রেকর্ড। ২০০৭ সালে ১০ বছর বয়সে কাঙ্গা লিগ খেলে রেকর্ড গড়েছিল বড় ভাই সরফরাজ খান।
সেই সরফরাজ, ২০০৯ সালে ১২ বছর বয়সে হারিস শিল্ডের ম্যাচে ৪২১ বলে ৪৩৯ করে যে গড়েছিল স্কুল ক্রিকেটের রেকর্ড। কে জানে, নওশাদ খানের দুই ছেলে হয়তো একদিন দাপিয়ে বেড়াবে বিশ্ব ক্রিকেট! ওয়েবসাইট। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।