[শবে বরাত সম্পর্কিত ইতিহাসের সবচেয়ে দলীল সমৃদ্ধ ধারাবাহিক পোস্ট]
========================================
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়। ” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেনঃ
২য় পর্বের পরঃ
দলীলঃ ০৪
বিশ্ববিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর, তাফসীরুল খাযিন এর ৪র্থ খন্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(انا انزلناه فى ليلة مباركة).. وقيل هى ليلة النصف من شعبان عن عائشة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب اخرجه الترمذى .. (فيها) اى فى تلك الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل (كل أمر حكيم) وقيل هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وينسخ الاحياء من الاموات وروى البغوى بسنده ان النبى صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموتى وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাত্রিতে উহা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে (শবে বরাত) উল্লেখ করা হয়েছে।
কেননা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শা’বানের রাতে (১৫ই শা’বান রাতে) পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই রাতে বনী ক্বলব গোত্রের বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ অধিক সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। এই হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি তিনি বর্ণনা করেন।
পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে ওই মুবারকময় রাতে প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা তথা সিদ্ধান্ত করা হয়। আর ফায়ছালার তথা তালিকা প্রস্তুত করার রাত দ্বারা বুঝানো হয়েছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শা’বানের রাত (শবে বরাতকে)।
আর এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং জীবিত ও মৃত্যুদের তালিকাও ওই রাতে প্রস্তুত করা হয়। কেননা এ উক্তির সমর্থনে প্রখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তাফসীরে বাগবী’ এর মধ্যে পূর্ণ সনদের মাধ্যমে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এক শা’বান তথা মধ্য শা’বান থেকে পরবর্তী মধ্য শা’বান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এবং এমনকি একজন ব্যক্তি কখন বিবাহ করবে তার কি সন্তান হবে, তার সেই বৎসরে কখন মৃত্যুবরণ করবে তার নামের তালিকাও প্রস্তুত করা হয় শবে বরাতে। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা ১৫ই শা’বানের রাতে (শবে বরাতে) মহান আল্লাহ পাক তিনি যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আর ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন তথা কার্যকর করার জন্য তালিকা অর্পণ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতার হাতে।
(তাফসীরে মাদারিক)
উল্লেখ্য যে, যদিও কেউ কেউ ليلة مباركة দ্বারা ليلة القدر বুঝে থাকেন মূলত তা নয়, বরং ليلة القدر দ্বারা শবে বরাতের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার রাতকে বুঝানো হয়েছে।
দলীলঃ ০৫
সূরা ক্বদরের তাফসীরে, বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খন্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فقيل له (للحسين بن الفضل) فما معنى ليلة القدر قال سوق المقادير الى المواقيت وتنفيذ القضاء المقدر.
অর্থ: “হযরত হুসাইন ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল ‘লাইলাতুল ক্বদর’-এর অর্থ কি? তিনি উত্তরে বলেন, পূর্বে স্থিরীকৃত সিদ্ধান্তসমূহ নির্ধারিত সময়ের দিকে পরিচালনা করা এবং পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তের যথার্থ বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে ক্বদর রাতের অর্থ। ”
কাজেই উল্লিখিত দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠল যে, অর্ধ শা’বানের রাত হচ্ছে ليلة التجويز তথা বণ্টনের বা সিদ্ধান্তের রাত। আর লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে ليلة التنفيذ তথা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রাত।
দলীলঃ ০৬
১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরুল বাগবী”-এর ৬ষ্ঠ খন্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(انا انزلناه فى ليلة المباركة) ... وقال اخرون هى ليلة النصف من شعبان اخبرنا عبد الواحد المليحى انا ابو منصور السمعانى ثنا ابو جعفر الريانى ثنا حميد بن زنجوية ثنا الا صبغ بن الفرج اخبرنى ابن وهب اخبرنى عمرو بن الحارث ان عبد الملك بن عبد الملك حدثه ان ابن ابى ذئب حدثه عن القاسم بن محمد عن ابيه او عمه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ينزل الله جل ثناءه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناء او مشركا بالله (فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل (كل امر حكيم)
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ এক বরকতময় রাত্রিতে নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অন্যান্য অসংখ্য, মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা বলেন, লাইলাইতুম মুবারাকা তথা বরকতপূর্ণ রাত হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত (শবে বরাত) এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল ওয়াহিদ মালীহী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু মানছুর সাময়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, হযরত আবু জাফর রাইইয়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুমাইদী ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আছবাগ ইবনে ফারজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন ইবনে ওহাব, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আমর ইবনে হারিছ, অবশ্য যা বর্ণনা করেছেন আব্দুল মালেক ইবনে আব্দুল মালেক। তিনি ইবনে আবু যিব, তিনি কাসিম ইবনে মুহম্মদ উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে কিংবা চাচা থেকে, তিনি হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ ই শা’বানের রাতে (শবে বরাতে) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর সমস্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন, তবে ওই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করেন না- যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে এবং যারা আল্লাহ পাক-উনার সাথে শরীক করেছে। অর্থাৎ হিংসুক ও মুশরিক ব্যতীত সবাইকে শবে বরাতে ক্ষমা করে থাকেন। ”
অতঃপর পরবর্তী আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل كل امر حكيم.
অর্থ: “ওই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে ভাগ্য বণ্টন হয় অর্থাৎ যাবতীয় হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।
”
এখানে-
فيها يفرق كل امر حكيم
(প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয় ওই মুবারক রাতে)
১ম পর্ব।
২য় পর্ব।
ধারাবাহিক চলবে =>...................... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।