আমি যা বলতে চাই... চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদে থাকার অধিকার নেই। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী ও বিভাগীয় সদরের প্রধান হাসপাতাল হিসেবে যে সেবার মান থাকা প্রয়োজন তা এখানে নেই। বাথরুমে পানি সরবরাহ নেই। স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ। চারদিকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, বিছানার চাদর নেই।
টয়লেটের যে অবস্থা তাতে নানা ধরনের ইনফেশনের আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি ওষুধ-স্যালাইনও রোগীদের বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে, এটা কাম্য নয়।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চমেক হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ ও অন্তঃবিভাগ আকস্মিক পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ড. মিজানুর রহমান প্রথমে রেডিওথেরাপি বিভাগের আউটডোরে গিয়ে রোগীদের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি যান নতুন ভবনের টিকিট ঘর (১)-এ।
সার্জারি বিভাগের একজন রোগীর টিকিট পরীক্ষা করেন। সেখান থেকে যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৫ নম্বর শয্যায়। কথা বলেন ফটিকছড়ির চা-বাগান থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশু সুজিতের মা নিতা দাশের সঙ্গে। বিছানার চাদর না থাকা, ওষুধপত্র, চিকিৎসাসেবা, খাবার এসব প্রসঙ্গে জানতে চান। এ সময় তিনি একজন সেবিকার উদ্দেশে বলেন, 'আপনারা যদি মায়ের স্নেহ দিয়ে এসব শিশুর সেবা না করেন, পরিষ্কার বিছানার চাদর না দেন, সময়মতো ওষুধ না দেন তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়।
চারদিকে এত দুর্গন্ধ, আবর্জনা। বাথরুমে পানি নেই, মলমূত্রে একাকার, খাবারের উচ্ছিষ্টের স্তূপ। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা ছুটে এসে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানান, তাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছু অবৈতনিক কর্মী আছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
সেখান থেকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের (মেডিসিন ইউনিট) কলাপসিবল গেটের কাছে যান কমিশন চেয়ারম্যান। কিন্তু প্রহরীর দেখা নেই। ১০ মিনিট পর খোলা হয় ফটক। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রোগীর বিছানা। কোনোটি ছেঁড়া, কোনোটির চাদর নেই।
১৬(এ) শয্যার কাছে গিয়ে সেবিকার খোঁজ করলেন। দেখা মেলে না। সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. দেবদাস দেবসহ কর্তব্যরত কয়েকজন চিকিৎসক ছুটে এলেন। তারা জানালেন, তাদরে ওয়ার্ডে ৬৬ শয্যা হলেও রোগী আছে আড়াইশরও বেশি। প্রতি পালায় ৪ জন করে সেবিকা সবার দেখাশোনা করেন।
এরমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন একজন সেবিকা। মিজানুর রহমান জানতে চাইলেন, ‘কেমন আছেন?’। সেবিকার উত্তর ‘ভালো। ’ প্রতিউত্তরে মিজানুর রহমান বললেন, ‘বাচ্চাতো ভালো নেই। বিছানার চাদর দেননি কেন? চারদিন মেশিন নষ্ট।
বিছানার চাদর আসেনি। সেবিকার জবাব।
রোগীর কাছে জানতে চাইলেন কোন কোন ওষুধ বাইওে থেকে কিনে এনেছেন। রোগী অনেক ওষুধ বের করে দিলেন। মিজানুর রহমান ওষুধগুলো হাতে নিয়ে সেবিকার উদ্দেশে বলেন, এসব ওষুধ তো সরকার সরবরাহ করে! কিনতে হলো কেন? তখন সেবিকা জবাব দেন, নতুন রোগীদের কিছু ওষুধ কিনতে হয়।
পরে সরকারি ওষুধ দেওয়া হয়।
বাথরুম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, এ হাসপাতাল যখন তৈরি করা হয় তখন প্রতি ওয়ার্ডে ৬৬ বেডের জন্য বাথরুম তৈরি করা হয়েছিল। তখন মিজানুর রহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, তার মানে এ নয় যে বাথরুমে পানি থাকবে না। আসলে অজুহাত হাজারটা দাঁড় করানো যায়। আপনাদের টয়লেট নিশ্চয় ভালো।
যে কটা শয্যা আছে সে কয়টা তো ঠিকমতো রোগীরা পাচ্ছে না।
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর শয্যায় টেকনাফ থেকে এসে ভর্তি হয়েছে নুরুল বশর (২৩)। তিনি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রশ্নের জবাবে জানান, হ্যাঁ ওষুধ কিনেছি। ৩৭ (এ) নম্বর শয্যায় নোয়াখালীর মাইজদী থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন আমেনা খাতুন (৭০)। তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়ার পর যান ৩৮ নম্বর শয্যার আনোয়ারার রোকেয়া বেগমের কাছে।
এ সময় অধ্যাপক ডা. আনিসুল ইসলাম মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানান, রোকেয়া বেগম ভারতে অস্ত্রোপচার করে এসেছেন কিছু দিন আগে। বর্তমানে তার মস্তিস্ক থেকে পানি বের হচ্ছে। আমরা তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।
এরপর চেয়ারম্যান ছুটে যান ওয়ার্ডের বাথরুম পরিদর্শনে। স্যাঁতসেঁতে দুর্গন্ধে ভরা বাথরুমে ঢোকার সময় নাকে রুমাল চেপে ধরেন তিনি।
সেখানে দেখতে পান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ভাঙা বেসিন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট, মলমূত্র আর পানিবিহীন কল।
এরপর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেবার বেহাল দশা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ইত্যাদি ব্যাপারে তীব্র অসন্তোষের কথা জানান। তিনি বলছেন, রোগী বাড়ছে এটা সত্য। তাই বলে আবর্জনা-মলমূত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে এটা হতে পারে না।
এখানে বাথরুমের যে পরিবেশ তাতে রোগীদের ইনফেকশন হবে। সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।
চিকিৎসকেরা রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেবে, চিকিৎসা করবে। কিন্তু প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সুপারিশমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
##### ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।