আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দলছুট নেতারা কে কোথায়?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। বড় রাজনৈতিক দল থেকে বেরিয়ে নতুন প্লাটফর্ম গড়ার চেষ্টা কোনো নতুন বিষয় নয়। অতীত অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয়-দলছুট হয়ে এখন পর্যন্ত কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। তারকা রাজনীতিবিদরাও হয়ে পড়েছেন নিষ্প্রভ। দলছাড়া হয়ে অনেকে হারিয়ে গেছেন রাজনীতির কক্ষপথ থেকে।

অনেকের নাম মুছে গেছে মানুষের মন থেকে। আবার অনেকে টিকে আছেন কোনো মতে। ড. কামাল হোসেন ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর জাতিসংঘে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন। সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। নিজ দলের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ায় বেরিয়ে যান তিনি।

এরপর রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আরও কিছু দলছুট নেতা নিয়ে গঠন করেন গণফোরাম। তার সঙ্গে এসে যোগ দেন যুবলীগের ডাকসাইটে নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু। ন্যাপ থেকে আসেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য। সিপিবি থেকে সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেননি।

সম্প্রতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য গণফোরাম থেকে বেরিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে দীর্ঘ সময় দেশান্তরী ছিলেন। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দলের সঙ্গে মতের ভিন্নতায় তিনি বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে রাজনীতির মাঠে বড় কোনো সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচন করতে পারেননি তিনি।

তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এক সময়ে ছাত্রলীগের মেধাবী মুখ ফজলুর রহমান। তিনি কাদের সিদ্দিকীর দল ছেড়ে গেছেন বিএনপিতে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা, খ্যাতিমান চিকিত্সক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নিজে ছাড়েননি কিন্তু তাকে বিএনপিছাড়া করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে তাকে ইমপিচমেন্ট করা হয়। তিনি এবং তার ছেলে তরুণ বিএনপি নেতা দলছুট হয়ে গড়েন বিকল্পধারা বাংলাদেশ।

অনেক চেষ্টা করেও রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেননি তারা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলছুট হয়ে এখন রাজনীতিতে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সরকারের অবস্থানের বাইরে একটি মন্তব্য করার জন্য তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। গত বছর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ এ মাসের ৬ তারিখ তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন দল থেকে। দলের বাইরে গিয়ে আদৌ রাজনীতি তিনি করবেন কি না, নতুন কোনো দল গড়া বা অন্য কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন কি না-তা এখন পর্যন্ত খোলাসা করে বলেননি তিনি। বিএনপির আরেক দলছুট নেতা অলি আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠজন সাবেক মন্ত্রী জাহানারা বেগম দল গঠন করেও আলাদা করে রাজনীতির বলয় তৈরি করতে পারেননি। তাদের গড়া দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) অস্তিত্ব সঙ্কটের প্রশ্নে পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে সম্পৃক্ত হয়েছে। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী বিএনপি থেকে বেরিয়ে রাজনীতির ময়দান থেকে এখন প্রায় বিস্মৃত হওয়া এক নাম।

তেমনি পরিণতির শিকার বিএনপি নেতা, সাবেক হুইপ আশরাফ আলীর। এক সময়ে বিএনপির আলোচিত নেতা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানও রাজনীতি থেকে এখন অনেক দূরে। দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক মেরুকরণের বাইরেও এরশাদের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক শক্তির জন্ম হয়েছে। সেই বলয় থেকে বেরিয়ে অনেকে বিলীন হয়ে গেছেন।

সাবেক মন্ত্রী চক্ষু চিকিত্সক আবদুল মতিন পার্টি থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টি (মতিন) গড়ে তোলেন। এক সময়ের হাইপ্রোফাইলের এই ব্যক্তি সম্প্রতি মারা যান। জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি (জেপি) করেছেন। তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। এবার জাতীয় সংসদে তার দলের কোনো অংশীদারিত্বও নেই।

জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা আরেক অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজিউর রহমান মঞ্জুর। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে তরুণ ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) হাল ধরেছেন। জাতীয় সংসদে তাদের একটি আসন রয়েছে। তবে রাজনীতির বলয়ে তাদের বড় কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়নের কিংবদন্তি নেতা মতিয়া চৌধুরী ন্যাপ হয়ে আওয়ামী লীগে আসেন।

তিনি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে বেরিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারলেও অনেকেই পারেননি। বাসদ হয়ে আওয়ামী লীগে আসা মাহমুদুর রহমান মান্না দলে সঠিকভাবে মূল্যায়িত হননি বলে অভিযোগ তুলে গঠন করেছেন নাগরিক ঐক্য। এর আগে একই মতের অন্য ক’জনকে নিয়ে এমনই একটি প্লাটফর্ম গড়েছিলেন, টিকেনি। আওয়ামী লীগ ছাড়েননি তিনি। প্রাথমিক সদস্যপদ এখনও আছে।

রাশেদ খান মেননের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি নিয়ে অনেক দিন ছিলেন হায়দার আকবর খান রনো। কিছুদিন আগে পার্টি থেকে বেরিয়ে তিনি সিপিবিতে যোগ দিয়েছেন। এখানেও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তিনি এখন খবরই পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বিএনপিতে যোগ দিয়ে অনেকটা পর্দার আড়ালেই চলে গেছেন। ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী পিডিপি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কল্যাণ পার্টি ‘কিংস পার্টি’র খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

কল্যাণ পার্টি যোগ দিয়েছে ১৮ দলীয় জোটে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।