আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনেক বিপদেও যিনি হার মানেন নি, আমার সেই আপা ঈভটিজারদের কাছে হার মানলেন, তাদের থেকে বাচতে মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছাড়লেন (গল্প নয় সত্যি)

হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়। রোকেয়া আপার সাথে পরিচয় প্রায় ২০ বছর আগে। গ্রাম থেকে এসে জেলা শহরে এসে আমাদের এলাকায় নতুন বাড়ি করেছেন। খুবই কিউট চার বাচ্চা, প্রায় দল বেধে ঘুরে বেড়ায় আর দেখা হলেই কোরাস সালাম, মামা, আস-সালামু আলাইকুম, আমাদের বাসায় যাবেন না? আমি থাকতাম ঢাকায়, পড়াশুনার চেষ্টায়। কোন ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এই বাচ্চাদের সাথে পরিচয়।

বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা, আগে তো দেখিনি। জানলাম রোকেয়া আপার কথা, এক ফাকে বাসায় গেলাম। পরিচয় ও চা পর্ব। আপার আতিথেয়তা, চা-য়ের ভিন্ন মাত্রার স্বাদ, বাচ্চাদের মামা ডাক আর ছুটির অবসরের দিন গুলির একটা রুটিন হয়ে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ চা আপার বাসায়। সে থেকে প্রতিবেশী থেকে হওয়া বড় বোনের সাথে সম্পর্ক আজো রয়ে গেছে নিজের বড় বোনের মতই।

আমার নিজের ভাই-বোন অনেকগুলি, পৌনে এক ডজন। এক ভাই ছাড়া সবাই বাইরে থাকি। এই আপা নিজের মেয়ের মতই আমার বাব-মার খবর রাখতেন, যে কোন প্রয়োজনে ছুটে আসতেন সবার আগে। সময় গড়িয়েছে আনেক। এই সময়ে অনেক ঝড় সামলিয়েছেন আপা।

তার উপর দিয়ে এত বিপদ গেছে যা সিনেমা-গল্প কেও হার মানায়। বিশেষ করে এক মেয়ের দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিতসা করতে সর্বশান্ত হয়েছেন আর্থিক ভাবে, স্বামীর চাকরিতে সমস্যা হয়েছে (যার জন্য তার বেতন থেকে একটা অংশ জরিমানা হিসাবে কাটা হয়েছে আর রিটায়ারমেন্ট এর পর তার সব সুবিধা আটকে রাকাহ হয়েছে), বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সেখানে মেয়েটি নিয়মিত অত্যাচারের শিকার, ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন প্রাইভেট মেডিকেলে,তার টাকা যোগাড়.........প্রতিনিয়ত দেখেছি তাকে সংগ্রাম করতে, হাজার চিন্তা ও বিপদ মাথায় নিয়ে হাসিমুখে কথা বলতে, নিজের বিপদ ভুলে আরেকজনের বিপদে ঝাপিয়ে পড়তে। আমার দেখা জীবন যুদ্ধের একজন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তিনি। কিন্তু এবার তিনি হার মানলেন। ছোট মেয়েটি কলেজে যেত (এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে)।

পাশের পাড়ার কিছু বখাটে যুবক উত্যক্ত করতে থাকে এবং মেয়েটির পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে শুরু হয় অত্যাচার। একধিক বার মেয়ের বাবা (উনি একজন কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যাবস্থাপক হিসাবে অবসর নিয়েছেন) কে রাস্তায় ধরে অপমান করে। তার সাথে মেয়ের বিয়ে না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একবার মেয়েটির বাবাকে রাস্তায় রীতিমত মারধর করে। রাত–বিরাতে বাড়ির ঊপর এসে হুমকি দিতে থাকে।

এক রাতে যখন বাসার উপর এসে চার জন যুবক হুমকি দিচ্ছিল তখন এলাকা বাসীর সহায়তায় তাদের ধরে পুলিশে দেয়া হয় এবং তাদের দুজনের এক বছর করে জেল হয়। তারা এখন জেলে আছে প্রায় ছয়মাস..কিন্তু তাদের হুমকি অব্যাহত আছে। বলে আর মাত্র ছয়মাস...তারপর তোদের গুষ্ঠিসহ শেষ করে দেয়া হবে। উনি আর ঝুকি নেবার সাহস পাননা। গত সপ্তাহে ফোন করে বলছেন, ভাইরে আর পারছিনা।

আমরা পাশের শহরে চলে যাচ্ছি। তোর দুলাভাই য়ের বেতন শেষ (জুনে উনার এলপিআর শেষ হয়েছে, আর প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে বিচারাধীন থাকায় রায় না হওয়া পর্যন্ত উনি প্রভিডেন্ট ফান্ড-গ্রাচুইটির টাকা পাবেন না)। আপা তার বাবা থেকে বেশ ভাল সম্পত্তি পেয়েছিলেন যা সবই ব্যয় হয়েছে এক মেয়ের চিকিতসায়, ছেলেটার পড়াশুনা চলছে চলছে কয়েকজন শুভাকাংখীর দেয়া টাকায়। ফোনের ও প্রান্তে আপা কাদতে থাকেন, ভাইরে যদি পারিস কিছু করিস, বিশেষ করে তোর দুলাভাইকে যদি কোন কাজ দেয়া যায়। না হলে হয়ত তোর বোন কে হয়ত ভিক্ষার ঝুলি হাতে রাস্তায় নামতে হবে কিম্বা আত্মহত্যা করতে হবে।

এই প্রথম আমি আপাকে কাদতে শুনলাম, আমি কোন জবাব দিতে পারিনি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.