বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম বিশ্বব্যাংক বিশ্বের মধ্যে ‘সবচেয়ে অকার্যকর’ একটিতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা ব্যবসায় বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস এর একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটির ‘ব্যাপক অনিয়মের’ কথা তুলে ধরে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকে ‘নিয়মতান্ত্রিক চ্যুতি’ রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সদ্য বিগত প্রেসিডেন্ট রবার্ট জেলিকের প্রতি অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সাময়িকীটি বলছে, “অতিরাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী এ প্রতিষ্ঠান কার্যত একটি ক্রমবিস্তৃত প্রায় জাতিরাষ্ট্র হয়ে উঠছে। ২০১১ সালে এর তহবিলের পরিমাণ ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যার উপর যোগানদাতা সরকারগুলোর কোনো নজরদারি নেই বললেই চলে।
”
“গত কয়েক সপ্তাহের অনেক ও তার আগের পাঁচ বছরের শতাধিক সাক্ষাৎকার এবং হাজার পৃষ্ঠার একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দশকের বেশি সময় ধরে নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং এর সমস্যাগুলো আরো বাজে রূপ ধারণ করেছে। ”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ড. জিম ইয়ংকে এমন একটি সংস্থার শীর্ষ পদের জন্য বেছে নিয়েছেন যা বর্তমানে ‘বিব্রতকর’ অবস্থায় আছে এবং জবাবদিহিতা হারাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “ওই সমস্ত সমস্যা মোকাবেলা করার খুব সামান্যই সুযোগ’ পাবেন কিম। অন্যথায় পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য তাকে তৈরি থাকতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক এক পরিচালকের কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “শরণার্থীরাই আশ্রম শিবির চালাচ্ছে। ”
সমস্যাগুলোর বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ফোবর্স সেগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছে- দর্শনগত, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন এ সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা লক্ষ্যস্থির করতে ব্যর্থ হয়েছেন তখন দুর্নীতি একে আঁকড়ে ধরেছে।
“অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, জেলিক বাজেট সংকোচন বাস্তবায়ন করলেও কিছু কর্মকর্তা বাজেটের বাইরেই কাজ করছে যা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে দিচ্ছে না। আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের স্বার্থে এ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাজ করেছেন অথবা ব্যাংকের মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে আরো পাকা পোক্ত করেছেন।
”
কেন সমস্ত অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয় না?
“সৌভাগ্য: ব্যাংক সূত্র ২ বিলিয়ন ডলারে বেশি পরিমাণের কথা জানিয়েছে যা সম্ভবত সাম্প্রতিক কম্পিউটার গোলযোগের সময়ে পাচার হয়ে গেছে। ”
ফোবর্স ম্যাগাজিনের ১৬ জুলাই সংখ্যার ওই প্রতিবেদন এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন প্রতিষ্ঠানটির ওয়াশিংটন কার্যালয় থেকে এক বিবৃতি দিয়ে ‘দুর্নীতির নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ থাকার কথা বলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করা হলো।
ব্যাংকের ভেতরে সাংস্কৃতিক সংকটের শেকড় আরো গভীরে প্রোথিত।
“ভেতরের এবং বাইরে সবাই বলেন, বিশ্বব্যাংক তার সুখ্যাতির ঝুঁকি নিয়ে এতটাই আচ্ছন্ন থাকে যে নেতিবাচক কোনো কিছু সামনে এলেই তাকে মোকাবেলা না করে যান্ত্রিকভাবে চেপে যায়। ”
ফোবর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় অনেক বড় আদর্শিক কথা বলে সংস্থাটি প্রথমে জাপান ও ইউরোপকে পুনর্গঠনে সহায়তা করে এবং পরে সারা বিশ্বে এর বিস্তৃতি ঘটে।
১৯৯৪ সালে প্রতিবেদককে টোকিওতে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জাপান এই ব্যাংকের সাহায্যের একজন গ্রহীতা ছিল। একইভাবে যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপও চমৎকারভাবে পুরস্কৃত হয়েছে।
সমস্যাগুলো সম্ভবত শুরু হয়েছে পৃথিবীর দ্ররিদ্রতম অঞ্চলগুলোতে তার ব্যবসা বিস্তৃত করার পর।
৫০ বছরের অভিজ্ঞতার পর ব্যাংকের কর্তারা ১৯৯০ এর দশকে উপলব্ধি করেছেন যে দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই মানেই প্রকল্পে অর্থ ঢেলে দেওয়া নয়। এর চেয়ে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা অনেক কার্যকর।
বাংলাদেশ সফর যারা করেছেন তাদের সবার মাথায়ই একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে উঠত, “দরিদ্র দেশগুলোর নীতিমালা নিয়ে যে সংস্থাটি এত বুলি আওড়াতো নিজের দায়িত্ব বুঝতে তার এত সময় লাগলো কেন?”
ফোবর্স সাংবাদিক রিচার্ড বেহার গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বব্যাংক নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন এবং প্রায়ই জেলিক ও তার দলের উপেক্ষার হয়েছেন। তিনি ব্যাংটির ঋণ কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরেছেন।
“এর অর্থায়ন, অনুদান ও ঋণদানের প্রক্রিয়াগুলো অবিশ্বাস্যরকম জটিল। কিন্তু, মূলত এটা দাতা দেশগুলো থেকে সম্মিলিত পুঁজি এবং বন্ড বিক্রির মাধ্যমে স্বোপার্জিত আয় থেকে পরিচালিত হয়। ”
“মাঝে মাঝে আইএমএফ- যা সরকারগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে- এর সঙ্গে মিলে গেলেও বিশ্বব্যাংকের ভুমিকা অন্ততপক্ষে শুধুমাত্র বাঁধ, রাস্তা, বিদ্যালয়, এমনকি মৎস্য খামার নির্মাণের মতো প্রকল্প পরিচালনা বলে মনে করা হত।
যদিও এটা গত ২০ বছর আগেই ওই সমস্ত সীমার আওতার বাইরে চলে গেছে।
“আইএমএফ-এর থেকে ভিন্ন বিশ্বব্যাংক সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের সঙ্গে কাজ করে। প্রকল্পের সংখ্যা ও র্অ বরাদ্দের পরিমাণ যত বাড়তে থাকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। কারণ, এটার কাজ নিরীক্ষা করে দেখার মত কেউ নাই। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।