খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... দক্ষিণ এশিয়াকে গতিশীল করতে রিওজিনাল কোঅপারেশন ট্রিটি বাস্তবায়নে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সার্ক সৃষ্টির দুই যুগের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য সার্কের ভুমিকা এ অঞ্চলে ক্রমাগত অস্পষ্ট হচ্ছে। অতচ সার্ক শক্তিশালী হলে এ অঞ্চল ঘীরে ইউরোপের মতো আরেকটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয় সৃষ্টি করা সম্ভব হতো ।
প্রকৃতি প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার ও তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদের পরিধি ও বিস্তৃতির ব্যাপকতায় এ অঞ্চলে বিশ্ব শাসকদের তীক্ষè দৃষ্টি রয়েছে।
যার প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ব্যবসায়িক ও পারস্পরিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি। অন্যদিকে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় চীন পৃথিবীর বৃহদ অর্থনৈতিক শক্তিতে দ্রুত উন্নতি করছে । ভাবা হচ্ছে সামনের শতাব্দীতে চীনের করায়াত্ত্বে চলে যাবে বিশ্ব। পাশাপাশি ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও ক্রমাগত উন্নতির ফলে এ অঞ্চলের গুরুত্ব বাড়ছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে ।
উদ্যোগ ও সমন্বয়হীনতার কারনে দারিদ্র পীড়িত এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছেনা।
এমন কথা আমরা হরহামেশাই শুনি থাকি। কিন্তু দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নই যথেষ্ট। আগে কেউ না মানলেও এখন কিন্তু সবায় স্বীকার করে নিচ্ছে।
দারিদ্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সমষ্টিগত উদ্যোগ। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণের কৌশল ও উৎপাদনের অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করার সময় এসেছে।
কারন এ অঞ্চলে মোট দেশজ উৎপাদন ও চাহিদার প্রার্থক্য নেহায়তই সামান্য। কিন্তু সামান্য ব্যবধানটুকু পুরণ না করার কারনে দিন দিন ব্যবধানের পরিধি ডালপালা মেলে বিস্তৃত হচ্ছে। যার ফলে এ অঞ্চলে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
জ¦ালানী অ¯িহরতায় ভুগছে এ অঞ্চল। জ¦ালানী ঘাটতিতে রয়েছে সার্কভুক্ত দেশসমুহ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান।
একমাত্র শ্রীলংকার বিদ্যুতের অব¯হা ভালো। শ্রীলংকায় চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন বেশি।
আঞ্চলিক বিদ্যুৎ নিয়ে সার্ক অঞ্চলজুড়েই কথা হচ্ছে। সার্ককে অভিন্ন বিদ্যুৎ অঞ্চলে রুপান্তরের ভাবনা ও সার্ক গ্রীড নিয়ে গবেষনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন সার্ক অঞ্চলে অভিন্ন বিদ্যুতের ব্যব¯হা করা গেলে গোটা অঞ্চলের অর্থনীতির আমুল পরিবর্তন আনা সম্ভব ।
এ অঞ্চলকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন অভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন ব্যব¯হা । বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল ও অভিন্ন গ্রিড বা সঞ্চালন লাইন বসানোর প্রাকসম্ভব্যতা যাচাই বাছাইয়ের জন্য অভিন্ন সার্ক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা কমিশন গঠন প্রয়োজন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জ¦ালানী বিশেষঙ্ঘদের সমন্বয়ে বিদ্যুতের দ্রুত উন্নয়নে একযোগে কাজ করার মানসিকতাই সার্ককে দ্রুত অর্থনৈতিক গতিশীল অঞ্চলে পরিণত করতে পারে ।
সবার আগে সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিদুৎ উৎপাদনের উপযোগীতার ¯হানগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
প্রাকসম্ভব্যতায় প্রডাক্টিভ এরিয়া বা উৎপাদন অঞ্চল নিণর্য়ে কারিগরি দিকসমুহ চিহ্নিত বা খুজে বের করতে হবে। উৎপাদন ও সঞ্চালন লাইন বসানোর কৌশলগত রুট প্রণয়নও জরুরি। অভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৌশল প্রণয়নে টেকনিকেল বা কারিগরি কমিটি গঠন করে কারিগরিদিকসমুহ পর্যবেক্ষনসমেত দ্রুত গবেষনা ও গবেষনালদ্ধ ফলাফল এ অঞ্চলের নেতৃত্ববৃন্দকে পৌছে দেয়ার বা অবহিত করার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গোটা বিষয়টিকে একিভুত করে তা প্রস্তাবনা আকারে পরবর্তী সামিটে উপ¯হাপনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ইতিমধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে কৃষি গবেষনা ও বাস্তবায়ন অবকাঠামো বিদ্যমান রয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্হ্য নিয়েও রয়েছে অভিন্ন আয়োজন। কিন্তু সব কিছুর মুলে বিদ্যুৎ । সেই বিদ্যুৎ নিয়ে অভিন্ন কোন চিন্তা নেই সার্কের কাঠামোতে। বিদ্যুৎবিহীন সভ্যতা কল্পনাকেও হার মানায়। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা ও বিতরণের কৌশলকে মুল এজেন্ডা হিসেবে সার্কে অন্তভুক্ত করা সময়ের দাবি।
অন্যথায় সার্ক শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এ ফোরামের কোন গুরুত্ব থাকবেনা।
সম্প্রতি এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী বিশেষঙ্ঘরা কৌশলগত পত্র বা স্ট্রাটেজিক পেপার প্রণয়ন করেছেন। যা বিভিন্ন দেশে সভা সেমিনার সিম্পোজিয়ামে উপ¯হাপিত হয়েছে । এই কৌশলপত্রের মুল প্রতিপাদ্য হলো সার্ক অঞ্চলে অভিন্ন বিদ্যুৎ ব্যব¯হা প্রণয়ন ও আশু করনীয় সম্পর্কীত।
গবেষনা প্রতিবেদনে নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে।
বিশেষক্স্ঞদের মতে নেপালে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। ভুটানের জল ও বায়ু ব্যবহার করে আরো অত্যন্ত প্রায় ৩০ থেক ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে ।
অতচ এ অঞ্চলে মোট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সর্বমোট ঘাটতির পরিমান মাত্র ৩০ হাজার মেগাওয়াটের একটু বেশি। যা ভুটান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে পুরণ করা সম্ভব।
ভারতে প্রতিদিনকার ১ লাখ ১০ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে উৎপন্ন হচ্ছে ৯৫ হাজার মেগাওয়াট। ভারতে বিদ্যুৎ ঘাটতির দৈনিক পরিমান প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট । বাংলাদেশের চাহিদা ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোন কোন দিন সর্বোচ্চ ৭ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপন্ন হচ্ছে গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি ১ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট। নেপালে দৈনিক বিদ্যুতের প্রয়োজন ৭০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান সর্বোচ্চ ৬০০ মেগাওয়াট।
ঘাটতি ১শ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট। ভুটানের দৈনদিন্ন বিদ্যুতের পরিমান ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫শত থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট। শ্রীলংকার বিদ্যুতের চেহারা এ অঞ্চলে সবচেয়ে আশাপ্রদ। শ্রীলংকার প্রতিদিনকার চাহিদা ২ হাজার মেগাওয়াট আর উৎপন্ন হচ্ছে চাহিদারও বেশি।
পাকিস্তানে বিদ্যুতের নিত্যদিনকার চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
বিশেষঙ্ঘদের মতে, বাংলাদেশে কয়লার মজুদ বিবেচনা করলে অতিরিক্ত ৯ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাহিদা পুরণসহ গোটা সার্ক অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। যদি বাংলাদেশে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আঞ্চলিক গ্রিডে যোগ করে সার্ক অঞ্চলে পৌছে দেয়া যায় তাহলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তিতে দিকপাল হয়েই থাকবে।
নেপাল ও ভুটান সার্ক অঞ্চলের জন্য আর্শীবাদ।
নেপাল ও ভুটানের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন করা গেলেই গোটা দক্ষিন এশিয়ার বিদ্যুতের চাহিদা পুরন করেও অতিরিক্ত বিদ্যুত নতুন নতুন শিল্প ¯হাপনে ব্যবহার করা যাবে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনে নেপাল ও ভুটান এ অঞ্চলে বিদ্যুতের হতাশাজনক চেহারা পরিবর্তনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। নেপাল ও ভুটানের প্রকৃতি প্রদত্ত বায়ু ও জলকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করে, উৎপাদিত বিদ্যুতকে অভিন্ন গ্রিডে যোগ করে সঞ্চালনের ব্যবস্হা করতে পারলেই বিশেষ অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তোলা সম্ভব বলে অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানী এক্সপার্টদের বিশ্বাস।
ভারতের ট্রিলিয়ন টনের বেশি প্রাকৃতিক কয়লার মজুদ রয়েছে। ভারতে অনায়াসেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।
বাংলাদেশে রয়েছে গ্যাস ও কয়লা। যৌথ বিনিয়োগে বর্ডার লাইনের এ দু‘দেশে বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। যা অভিন্ন গ্রিডে যোগ করে সার্কভুক্ত দেশসমুহে পৌছে দেয়া যায়। আর এর জন্য প্রয়োজন সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের পলিটিকেল কমিটমেন্ট। গ্লোবালাইজেশনের যুগে পারস্পরিক সহযোগীতার দ্বার উম্মোচন করতেই হবে।
অন্যথায় একক চিন্তায় কোন দেশ টিকে থাকতে পারবেনা।
সার্ককে বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত করতে চাইলে আঞ্চলিক সহযোগীতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুতের স্বাবলম্বি ও আ¯হা অর্জনেও এ অঞ্চলকে ভাবতে হবে। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে দারিদ্র ও অন্ধকারের হাতছানি চিরতরে দুর করা গেলেই স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন সম্ভব হবে। তখনই সার্ক জি-৭, ওপেকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্হায় পরিণত হবে।
কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের মধ্য দিয়েই গোটা অঞ্চলকে বিদ্যুতের অভিশপ্ত অব¯হা কাটিয়ে উঠতে হবে। দারিদ্রতা দূরিকরনে বিদ্যুৎ কার্যকর ভুমিকা পালনে সক্ষম। এ অঞ্চল বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হোক ও বিদ্যুতের আলো দারিদ্রতার অন্ধকারকে মুছে দিবে এমন প্রত্যাশাই সার্কভুক্ত দেশের বিদ্যুত বঞ্চিত মানুষজনের।
হাসান কামরুল : ভূতত্ত্ববিদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।