প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ! র্যালি হবে। স্কুলের সব ছাত্রছাত্রিকে র্যালিতে থাকতে হবে। সবার হাতে একটি ব্যান্ড পড়িয়ে দেওয়া হলো। মাথায় পড়িয়া দেওয়া হলো একটি করে ক্যাপ। শুনেছিলাম ব্যান্ডপার্টির নাকি আয়োজন করা হয়েছিল, পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রিরা সবাই বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কেউই করতে চায়না এই মহান পরিবেশ সপ্তাহের র্যালি! তারপরও দাঁড়িয়ে আছে সবাই। সবার মনে একই আক্ষেপ, কোন কুক্ষনে যে আজ স্কুলে আসলাম। এলাকার প্রধান ব্যাক্তি- এমডি স্যার আসবেন। তাই সাজ সাজ রব পড়ে গেল।
কিন্তু ছাত্রদের মুখে একরাশ বিরক্তি- এখনোও শালায় আসেনা কে?
অবশেষে তিনি এলেন, একটি দামি কালো মরিস মাইনরে চড়ে। তার পিছনে আরোও চার-পাচটি গাড়ি। যেগুলো অনবরত কালো ধোয়া ছড়িয়ে দিয়া আসছে- এই পরিবেশ সপ্তাহকে স্বাগত জানাতে। তিনি নামলেন গাড়ি থেকে, সবাই তাকে স্বাগত জানালো। আর সেই মুহুর্তে তাদের গলার আওয়াজে আর প্যারেড করার শব্দে মিলেমিশে যে বিকট আওয়াজটি হল অনুভুত হল তাকে আসলে শব্দ দূষন বলে কিনা তা আমি আসলে ঠিক জানিনা।
এমডি আসার সুবাদে চরম গলায় চড়া মাইকে একটি চমৎকার বক্তৃতা হয়ে গেলো। তাতে জানা গেলো পরিবেশ সপ্তাহের প্রয়োজনীয়তা কি এবং কেন এর কার্যকরী পদক্ষেপ দরকার, কেন প্রতি বছর এই পরিবেশ সপ্তাহ পালন করা দরকার। এভাবে আরোও তিন-চারটি বক্তৃতা হয়ে গেল, যদিও মুল বক্তব্যটা একই ছিল। তাতে কি? বড় মানুষরা যা বলেন তা শোনাও অনেক মহৎ কাজ। আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না স্কুলের এই সব অভদ্র ছেলেপেলেরা এই সব মহান বানী শুনছিল কিনা।
কোনো ছেলেকে দেখলাম উহ-আহ শব্দ করছে সেটা বিরক্তিতে না প্রতিবাদে তা বুঝলাম না।
এসব মহৎ কাজে আমি সব সময় যেতে পারিনা। আজ আমার মতো এই অধমের যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে বলে আমি বড়ই আনন্দিত। ঘোষনা দেওয়া হল যে আর পাচ মিনিটের মধ্যেই র্যালি শুরু হয়ে যাবে। অপেক্ষা করতে থাকলাম।
কিন্তু বিধিবাম। ১৫ মিনিট হয়ে গেল তাও ছাড়া হলনা। সামনে কথাবার্তার আওয়াজ পেলাম। ছাত্রদের কথাবার্তার আওয়াজ। পরে বুঝলাম কথাবার্তা না, কাকে জানি গালাগাল করছে।
আমার মনে তীব্র সন্দেহ তারা স্কুল কমিটি কিংবা এমডি কে গালাগাল করছে। আমার খুব খারাপ লাগলো এই ভেবে যে তারা এখনোও বড়দের সম্মান করা শিখলোনা। আরে বাবা তারা তো নিজেরাও ব্যাস্ত। কিন্তু একটু সমস্যা হলেতো দেরি হবেই।
১ ঘন্টাও হয়ে গেল তাও কাজের কাজ কিছুই হল না।
এখন আমার নিজেরই কেমন জানি বিরক্তির উদ্রেক হচ্ছে। আমি নিজেকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করলাম। নিজেকে ধিক্কার জানালাম এই ভেবে যে এই মহান কাজেও আমি এতো বিরক্ত হচ্ছি। অবশেষে র্যালি শুরু হল। কত দেরি লাগলো র্যালি শুরু হতে তা বলে এই র্যালির মান মর্যাদার হানি ঘটাতে আমি ইচ্ছুক নই।
র্যালির সাথে পথ চলতে চলতেই আমি উপলদ্ধি করছি যে আমার নাকে প্রচুর ধুলা ঢুকছে। একপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে প্রতি পায়ের তালে তালে একটু একটু করে ধুলা উড়ছে। কিন্তু এগুলো ব্যাপার না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। যদিও ছোট বেলার পড়া একটি কবিতা এখন আমার মনে আসছে,
ছোট ছোট বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল
গড়ে তুলে মহাদেশ, সাগর অতল।
যাইহোক, আমরা হাটতে থাকলাম। আশেপাশের সবাই আমাদের দেখে সড়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউই এগিয়ে আসছেনা। কোনো কোনো ছাত্রকে দেখলাম তাদের বাসার সামনে র্যালি চলের আসার পর তারা চম্পট দিচ্ছে। এদের জন্য দুঃখ হয়। এরকম মহৎ কাজ করার সুযোগ হেলায় ফেলে দিচ্ছে।
চলতে চলতে একসময় এক পাচ তালা বাসার সামনে আসলাম। হঠাৎ দেখি উপর থেকে কে কি যেন ফালাচ্ছে। নিচে পরার পর তাকিয়ে দেখি ময়লার পলিথিন। গন্ধ ছড়ানো শুরু হল। এমডি স্যার কে দেখি একবার তাকিয়েই সামনের দিকে মুখ নিয়ে নিতে।
কিছু ছাত্র দেখি হাসাহাসি করছে। এই হাসাহাসির কোনো মানে হয়।
কোথা থেকে গানের আওয়াজ আসছে। কে বা কারা পিকনিক করছে। অদুরে কোনো একজায়গায় কিছু গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।
শুনেছিলাম এমডি স্যারই নাকি কাটিয়েছেন- তার বসার ঘরের কিছু ফার্নিচার ঘুনে খেয়ে ফেলেছে।
দেখতে দেখতে আবার স্কুলের সামনে এসে পরলাম। এবার হবে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী। এমডি স্যার সবার সহযোগীতায় তিন থেকে চারটার মতো গাছ লাগালেন। আরো লাগানোর কথা ছিল কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি চলে গেলেন তার কর্মস্থলে-একটি পেপার মিল।
যেখানে গাছের ছাল দিয়ে উন্নত মানের কাগজ তৈরি হয়।
এরপর শেষ হয়ে যায় পরিবেশ সপ্তাহের সকল কর্মসূচী। ছাত্র ছাত্রি দের একটি করে চোকোলেট হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। তাদেরকে বিমর্ষ দেখা গেল। তাদের বলা হয়েছিল সিঙ্গারা আর নিমকি দেওয়া হবে।
আমি মনে মনে বললাম, বাবারা তোমরা যদি মহৎ কাজেরও বিনিময় চাও, তাহলে তো দেশে আর কোনো মহৎ কাজ হবেনা।
অবশেষে আমি সেখান থেকে ফিরে নিজের কাজে যোগদান করলাম।
পুনশ্চঃ এরপর একবছর হয়ে গেল। আবার আসলো পরিবেশ সপ্তাহ আমি স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে আবার র্যালিতে দাড়াবার জন্য পা বাড়ালাম। তবে চরমভাবে দুঃখিত দেখলাম, এর আগেরবার যে জায়গায় গাছগুলো লাগানো হয়েছিল সেই জায়গা এখন ফাকা (গাছগুলো ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল কিনা) এবং আরও চরমভাবে পরখ করে দেখলাম আবারোও সেই জায়গাটাতেই গাছ লাগানো হচ্ছে।
র্যালি হবে। স্কুলের সব ছাত্রছাত্রিকে র্যালিতে থাকতে হবে। সবার হাতে একটি ব্যান্ড পড়িয়ে দেওয়া হলো। মাথায় পড়িয়া দেওয়া হলো একটি করে ক্যাপ। শুনেছিলাম ব্যান্ডপার্টির নাকি আয়োজন করা হয়েছিল, পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রিরা সবাই বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কেউই করতে চায়না এই মহান পরিবেশ সপ্তাহের র্যালি! তারপরও দাঁড়িয়ে আছে সবাই। সবার মনে একই আক্ষেপ, কোন কুক্ষনে যে আজ স্কুলে আসলাম। এলাকার প্রধান ব্যাক্তি- এমডি স্যার আসবেন। তাই সাজ সাজ রব পড়ে গেল।
কিন্তু ছাত্রদের মুখে একরাশ বিরক্তি- এখনোও শালায় আসেনা কে?
অবশেষে তিনি এলেন, একটি দামি কালো মরিস মাইনরে চড়ে। তার পিছনে আরোও চার-পাচটি গাড়ি। যেগুলো অনবরত কালো ধোয়া ছড়িয়ে দিয়া আসছে- এই পরিবেশ সপ্তাহকে স্বাগত জানাতে। তিনি নামলেন গাড়ি থেকে, সবাই তাকে স্বাগত জানালো। আর সেই মুহুর্তে তাদের গলার আওয়াজে আর প্যারেড করার শব্দে মিলেমিশে যে বিকট আওয়াজটি হল অনুভুত হল তাকে আসলে শব্দ দূষন বলে কিনা তা আমি আসলে ঠিক জানিনা।
এমডি আসার সুবাদে চরম গলায় চড়া মাইকে একটি চমৎকার বক্তৃতা হয়ে গেলো। তাতে জানা গেলো পরিবেশ সপ্তাহের প্রয়োজনীয়তা কি এবং কেন এর কার্যকরী পদক্ষেপ দরকার, কেন প্রতি বছর এই পরিবেশ সপ্তাহ পালন করা দরকার। এভাবে আরোও তিন-চারটি বক্তৃতা হয়ে গেল, যদিও মুল বক্তব্যটা একই ছিল। তাতে কি? বড় মানুষরা যা বলেন তা শোনাও অনেক মহৎ কাজ। আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না স্কুলের এই সব অভদ্র ছেলেপেলেরা এই সব মহান বানী শুনছিল কিনা।
কোনো ছেলেকে দেখলাম উহ-আহ শব্দ করছে সেটা বিরক্তিতে না প্রতিবাদে তা বুঝলাম না।
এসব মহৎ কাজে আমি সব সময় যেতে পারিনা। আজ আমার মতো এই অধমের যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে বলে আমি বড়ই আনন্দিত। ঘোষনা দেওয়া হল যে আর পাচ মিনিটের মধ্যেই র্যালি শুরু হয়ে যাবে। অপেক্ষা করতে থাকলাম।
কিন্তু বিধিবাম। ১৫ মিনিট হয়ে গেল তাও ছাড়া হলনা। সামনে কথাবার্তার আওয়াজ পেলাম। ছাত্রদের কথাবার্তার আওয়াজ। পরে বুঝলাম কথাবার্তা না, কাকে জানি গালাগাল করছে।
আমার মনে তীব্র সন্দেহ তারা স্কুল কমিটি কিংবা এমডি কে গালাগাল করছে। আমার খুব খারাপ লাগলো এই ভেবে যে তারা এখনোও বড়দের সম্মান করা শিখলোনা। আরে বাবা তারা তো নিজেরাও ব্যাস্ত। কিন্তু একটু সমস্যা হলেতো দেরি হবেই।
১ ঘন্টাও হয়ে গেল তাও কাজের কাজ কিছুই হল না।
এখন আমার নিজেরই কেমন জানি বিরক্তির উদ্রেক হচ্ছে। আমি নিজেকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করলাম। নিজেকে ধিক্কার জানালাম এই ভেবে যে এই মহান কাজেও আমি এতো বিরক্ত হচ্ছি। অবশেষে র্যালি শুরু হল। কত দেরি লাগলো র্যালি শুরু হতে তা বলে এই র্যালির মান মর্যাদার হানি ঘটাতে আমি ইচ্ছুক নই।
র্যালির সাথে পথ চলতে চলতেই আমি উপলদ্ধি করছি যে আমার নাকে প্রচুর ধুলা ঢুকছে। একপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে প্রতি পায়ের তালে তালে একটু একটু করে ধুলা উড়ছে। কিন্তু এগুলো ব্যাপার না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। যদিও ছোট বেলার পড়া একটি কবিতা এখন আমার মনে আসছে,
ছোট ছোট বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল
গড়ে তুলে মহাদেশ, সাগর অতল।
যাইহোক, আমরা হাটতে থাকলাম। আশেপাশের সবাই আমাদের দেখে সড়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউই এগিয়ে আসছেনা। কোনো কোনো ছাত্রকে দেখলাম তাদের বাসার সামনে র্যালি চলের আসার পর তারা চম্পট দিচ্ছে। এদের জন্য দুঃখ হয়। এরকম মহৎ কাজ করার সুযোগ হেলায় ফেলে দিচ্ছে।
চলতে চলতে একসময় এক পাচ তালা বাসার সামনে আসলাম। হঠাৎ দেখি উপর থেকে কে কি যেন ফালাচ্ছে। নিচে পরার পর তাকিয়ে দেখি ময়লার পলিথিন। গন্ধ ছড়ানো শুরু হল। এমডি স্যার কে দেখি একবার তাকিয়েই সামনের দিকে মুখ নিয়ে নিতে।
কিছু ছাত্র দেখি হাসাহাসি করছে। এই হাসাহাসির কোনো মানে হয়।
কোথা থেকে গানের আওয়াজ আসছে। কে বা কারা পিকনিক করছে। অদুরে কোনো একজায়গায় কিছু গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে।
শুনেছিলাম এমডি স্যারই নাকি কাটিয়েছেন- তার বসার ঘরের কিছু ফার্নিচার ঘুনে খেয়ে ফেলেছে।
দেখতে দেখতে আবার স্কুলের সামনে এসে পরলাম। এবার হবে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী। এমডি স্যার সবার সহযোগীতায় তিন থেকে চারটার মতো গাছ লাগালেন। আরো লাগানোর কথা ছিল কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি চলে গেলেন তার কর্মস্থলে-একটি পেপার মিল।
যেখানে গাছের ছাল দিয়ে উন্নত মানের কাগজ তৈরি হয়।
এরপর শেষ হয়ে যায় পরিবেশ সপ্তাহের সকল কর্মসূচী। ছাত্র ছাত্রি দের একটি করে চোকোলেট হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। তাদেরকে বিমর্ষ দেখা গেল। তাদের বলা হয়েছিল সিঙ্গারা আর নিমকি দেওয়া হবে।
আমি মনে মনে বললাম, বাবারা তোমরা যদি মহৎ কাজেরও বিনিময় চাও, তাহলে তো দেশে আর কোনো মহৎ কাজ হবেনা।
অবশেষে আমি সেখান থেকে ফিরে নিজের কাজে যোগদান করলাম।
পুনশ্চঃ এরপর একবছর হয়ে গেল। আবার আসলো পরিবেশ সপ্তাহ আমি স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে আবার র্যালিতে দাড়াবার জন্য পা বাড়ালাম। তবে চরমভাবে দুঃখিত দেখলাম, এর আগেরবার যে জায়গায় গাছগুলো লাগানো হয়েছিল সেই জায়গা এখন ফাকা (গাছগুলো ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল কিনা) এবং আরও চরমভাবে পরখ করে দেখলাম আবারোও সেই জায়গাটাতেই গাছ লাগানো হচ্ছে।
(অনেক দিন আগেই আমার সামহোয়ার ইন ব্লগে আগমন। কিন্তু যেদিন এই একাউন্ট খুলি দেখি যে আমাকে ওয়াচে রাখা হয়েছে। যাইহোক, আমি এখন জেনারেল(সেইফ নয় এখনোও)
আমি কয়েকদিন আগে এই আর্টিকেল লেখেছিলাম পোস্ট করার জন্য। কিন্তু ব্লগে লগিন করে দেখি আমি ওয়াচেই আছি। তাই আর দেওয়া হয় নাই।
আজ দিলাম। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।