আমি সত্য জানতে চাই
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্ব পরিবেশ দিবস (World Environment Day,) সংক্ষেপে WED) বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৫ জুন দিবসটি পালিত হয়। এই দিবসটি আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবসের অনুগামী। এই দিবসটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স (United Nations Conference on the Human Environment) শুরু হয়েছিল। এই কনফারেন্স হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি।
এই কনফারেন্স ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতি বৎসর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে। এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের ৪০ বছর। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়।
উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়। এই সম্মেলনের দু’দশক পূর্তি উপলৰে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ে দ্বিতীয় বিশ্ব সম্মেলন, যা ধরিত্রী সম্মেলন নামে অধিক পরিচিত।
আমাদের চার পাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই পরিবেশ। এই পরিবেশই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। সৌরজগতের বিশাল বিস্তারের মাঝে ছোট্ট সবুজ গ্রহ, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর পরিবেশ ধীরে ধীরে বিপন্ন হবার পথে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের পর্বে পরিবেশের সমস্যাও বেড়েছে। পরিবেশের তোয়াক্কা না করে মুনাফার লোভে প্রাকৃতিক সম্পদের লুঠতরাজ লাগামছাড়া রূপ নিয়েছে। বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির স্বার্থরক্ষায় জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববাসীর ভবিষ্যৎ। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিপদ বাড়ছে।
প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিত আর অনিরাপদ পদ্ধতির শিল্পায়ন ও নগরায়নের প্রভাবে, ক্রমান্বয়ে মানুষ্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে প্রাণচ্ছোল এই গ্রহ। বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিমালয় পর্বতমালা ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। গত ৫০ বছরে ক্রমবর্ধমান হারে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, সেচ ব্যবহার করায় বিশ্বের ৪০ ভাগেরও অধিক জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। শিল্পোন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলি পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে কোনো আন্তর্জাতিক বিধি না মেনে সমস্যার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলির ঘাড়ে।
বাংলাদেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমির উর্বরতা এভাবেই কমেছে।
গত শতাব্দীতে কৃষি বৈচিত্র্যের প্রায় তিন চতুর্থাংশ প্রাণসম্পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ১২ ধরণের পরিবেশ দূষণের ফলে ৩০টি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয়। গত দশ বছরে দেশে পাখির সংখ্যা কমেছে এক পঞ্চমাংশ। সারাদেশে মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মাছসহ ৮০৭ প্রজাতির মধ্যে ৫৪টি বিলুপ্তপ্রায়। দেশের ১২৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ২২ প্রজাতির উভচর প্রাণীর মধ্যে ১২ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮ প্রজাতির উভচর প্রানী বিলুপ্ত হয়েছে।
২০১টি বন্য প্রজাতি বিপন্ন প্রায়।
পরিবেশ সংরক্ষণে বাংলাদেশে পরিবেশ আদালত আইন রয়েছে ৬টি বিভাগে মাত্র ৬টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ১টি পরিবেশ আদালত আছে। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম আজ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামেরই অংশ। এসম্পর্কে আরও জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
আর যার যতটুকু সাধ্য ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করতে হবে পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য রাখার। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আছে এমন অনেক বিষয় যেমন-১) গাছপালা নিধন না করা আর অন্যকে নিধনে নিরুৎসাহিত করা এবং নিজে বেশি করে গাছলাগানো আর অন্যকে গাছলাগানোতে উৎসাহিত করা। ২) গাড়ীর ক্ষতিকর/ কালো ধোয়া বন্ধ রাখার চেষ্ঠা করা এবং অন্যকে এ ব্যাপারে সচেতন করা। ৩) পাহাড় কাটা বন্ধ রাখা এবং এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা। ৪) ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা এবং বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে নিস্কাশিত না করা।
৫) বাসার ফ্রিজটি সময় সময় সার্ভিসিং করিয়ে নেয়া।
এ সবের পাশা পাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৈশ্বিক গনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রচুর পরিমানে গাছ লাগাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুসলমান গাছ লাগায়, অতঃপর তা থেকে যতটুকু অংশ খাওয়া হয় তা যে বৃক্ষরোপণ করে তার জন্য সদকা হয়ে যায়। আর যা তা হতে চুরি হয়ে যায় তাও সদকা। অর্থাৎ এতেও মালিকের সদকার সওয়াব হয়।
আর যতটুকু অংশ হিংস্র জন্তু খায় তাও তার জন্য সদকা হয়ে যায়। আর যদি পাখি খায় তাও সদকা হয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউ এন ই পি) এবছর খাদ্যদ্রব্যের অপচয় বন্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রাষ্ট্রসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর বিশ্বে ১.৩বিলিয়ন টন খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়। যা বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্যের তিন ভাগের একভাগ।
অথচ বিশ্বে প্রতি ৭জন মানুষের ১জন ক্ষুধার্ত; বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২০হাজার শিশু প্রতিবছর মারা যায় শুধুমাত্র খাদ্যের অভাবে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও সচেতন হতে হবে।
এই দিবসে আসুন আমরা সবাই মিলে সৃস্টিকর্তার আশির্বাদ প্রকৃতির এই পরম বন্ধু গাছকে নির্বিচারে নিধন না করে তাদের সুরক্ষিত করে আমাদের এই পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। তা নাহলে প্রকৃতির রোষাণলে পরে বিপর্যয় ঘটবে আমাদের পরিবেশ, বিপন্ন হবে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।