আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নিশির সাথে ব্রেকআপ করেই ফেললাম । শালার প্রতিদিন প্যানপ্যানানী আর ভাল লাগে না ।
সব কিছুর একটা লিমিট থাকে , লিমিট ক্রস করলেই সেটা আর সহ্য হয় না ।
এটা করলা কেন ?
কেন করলা ?
কেন করবা না ?
তুমি বদলে গেছ !
তুমি এটা !
তুমি সেটা !
তুমি ... ব্লা ব্লা ব্লা ।
শালার সব দোষই আমার ?
প্রেম করেছি বলে তো আর নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা বিষর্জন দেই নি ।
কিন্তু নিশির সাথে প্রেম করে এমন একটা স্টেজে পৌছেছি যে সেখানে আমার ইচ্ছার কোন মূল্যই নেই ।
নিশি যা বলবে তাই ! আর প্রতিদিন হাজারটা কৈফৎ দিতে দিতে আমি ক্লান্ত ।
ঘটনার সূচনা খুব সাধারন ভাবে । গত দুই দিন আমার কোন কাজ ছিল না । আমি ওকে ফোন করে বললাম যে যদি দেখা করতে চাও দেখা করতে চাও তবে আমি আসতে পারি ।
নিশি বলল যে না সে দেখা করতে পারবে না । তার ব্যস্ততা আছে । যাক ভাল কথা । মানুষের কাজ থাকতেই পারে ।
আজ আমার কাজ ছিল অনেক গুলো ।
মোটামুটি সারাদিনই বিজি থাকবো ।
আর সন্ধ্যা বেলা টিউশনী আছে । নিশি দুপুর বেলা ফোন করে বলল যে আজ দেখা করবে ।
-শোন আজ সন্ধ্যায় একটু দেখা করতে হবে । জরুরী ।
-না সোনা আমার কাজ আছে আজ ।
-না দেখা করতেই হবে ।
-নিশি বোঝার চেষ্টা কর । আমার টিউশনী আছে । দুদিন যাই নি আজকে ফোন করেছে ।
যেতেই হবে ।
-তুমি আসবে না ?
নিশির গলায় কেমন একটা অভিমানের সুর ।
-না নিশি । আমি আসবো না ।
-আমার থেকে তোমার কাছে তোমার টিউশনী বড় হয়ে গেল ।
-দেখ, এসব ফালতু কম্পারিজম করবা না । তুমি এক জায়গায় আর টিউশনী এক জায়গায় । আর আমি গত দুদিন তোমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেছি তখন কোথায় ছিলে ?
-আমার কাজ ছিল ।
-তোমার কাজ ছিল এখন আমার কাজ আছে । আজ দেখা করা সম্ভব না ।
নিশি আর কোন কথা খুজে পেল না । জানি এখন ও রেগে যাবে এখন । বলল
-তুমি আসবা কিনা বল ?
-না আসবো না ।
-তা আসবা কেন ? এখনতো আর আমাকে ভাল লাগবে না । নতুন একজনকে পেয়েছ না !
-মানে ? কি ফালতু কথা বলছো ?
-এখন তো ফালতু কথাই মনে হবে ! আমার সব কথাই এখন ফালতু কথা ।
আর ঐ অরিনের কথা খুব মিষ্টি তাই না ?
-নিশি তুমি কিন্তু ঠিক করছো না ।
-আমি ঠিক করছি না ? আমিতো ঠিক করবোই না । তোমার সাথে রিলেশন করা টাই আমার ভুল হয়েছে । আমার আগেই বোঝা উচিত্ ছিল যে ছেলে আমার জন্য অন্য একটা মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারে সেই ছেলে অন্য আর একটা মেয়ের জন্যও আমাকে ছেড়ে দিতে পারবে ।
-তুমি কি বললে ?
-কেন সিমুর সাথে তোমার রিলেশন ছিল না ?
-নিশি ফর গডসেক এই কথাটা আবার তুমি তুলেছ ? আমি তোমাকে হাজার বার বলেছি সিমু কেবল আমার ল্যাব পাটনার ছিল ।
আর কিছু না ।
-কিন্তু ও তো এই কথা বলে না । ও তোমাকে ভালবাসে ।
-ও আমাকে পছন্দ করতে পারে বাট আমি এমনটা করিনি ।
-অনেক হয়েছে ।
তোমার মত একটা চরিত্রহীন লুচ্চার সাথে আমি আর রিলেশন রাখবো না ।
তারপর নিশি আরো গালাগালী করতে লাগল ।
এই মেয়েদের প্রবলেম কি ?
কথা হচ্ছিল আমি আসতে পারবো না আর সেই কথা ঘুরে চলে আমার চরিত্রের দিকে । আশ্চার্য পাবলিক ।
আমি সারা জীবন সব কিছু সহ্য করেছি কিন্তু যা আমি না কিংবা যেকাজ আমি করি নি সেই কাজের অপবাদ দিলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায় ।
বললাম
-ঠিক আছে । আমার সাথে রিলেশন রাগবে না, রেখো না । তোমার মত প্যানপ্যানানী মেয়ের কাছ থেকে মুক্তি চাই আমি । অনেক সহ্য করেছি আর না । আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমি আর নাই ।
ভুলেও তুমি আর আমারে ফোন দিবা না । আর একটা বললা না যে অরিনের কথা । এতো দিনতো করিনি, দেখবা ওর সাথেই আমি রিলেশন করবো ।
ফোন রেখে দেই আমি । আমি জানি নিশি মনে হয় অবাকই হয়েছে ।
যে ছেলে কোনদিন ওর কথার প্রতিবাদ করেনি ওর সাথে ব্রেকআপ করে ফেলল !
ফোন রাখার পর একটু হালকা হালকা লাগল । মন কি একটু খারাপ হল ?
যা হয় হোক !
আজ থেকে আমি মুক্ত । কারো কথা শুনতে হবে না । কারো কাছে কৈফত্ৎ দিতে হবে না কোন !
নিশির রিলেশন করে আমি যেন আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলাম ।
আমাকে কত রকম হাজার কথা শুনতে হত ।
কত কাজ করতে হত ইচ্ছের বিরুদ্ধে ।
সব থেকে ঝামেলা সৃষ্টি হত ওকে নিয়ে বাইরে বের হলে । যদি কোন মেয়ের দিকে আমি তাকিয়েছি তাহলে যেন আমাকে আর আস্ত রাখত না । আরে বাবা আমি তো কেবল সুন্দর মেয়েকে একটু দেখতেও পারব না ?
আমার মতে সুন্দরী একটি মেয়ের দিকে যদি না তাকানো হয় তাহলে তার সৌন্দর্যকে অপমান করা হয় । আর একজন সৌন্দর্যের পূজারী হয়ে কি আমি এমনটা করতে পারবো ।
যাক ভাল হয়েছে । কাল আজ থেকে আমার আর কোন বাধা নাই । কোন কৈফত্ৎ কাউকে দিতে হবে না ।
রাতে আনন্দ নিয়েই ঘুমাতে গেলাম । কিন্তু কেন জানি ঘুরে ফিরে নিশির কথাই মনে আসতে লাগল ।
নিশির হাসিটা অনেক সুন্দর ছিল । ও যখন হাসতো কেমন জানি একটা আলো ছড়াতো ওর চোখ দিয়ে । আর চোখের মনিটা কেমন নড়াচড়া করতো ।
আমি অদ্ভুদ ভাবে দেখতাম ! কাল থেকে আর দেখতএ পারবো না ঐ হাসি !!
সকালবেলা বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গল । মনটা খারাপ হল আর একটু ।
নিশি আর যাই করতো না কেন প্রতিদিন সকালবেলা খুব সুন্দর করে আমার ঘুম ভাঙ্গাতো ।
কেমন একটা অভ্যাসের মত হয়ে গেছিল । নিশি কি চমৎকার ভাবেই না গুড মর্নিং বলতো !
হাহ !
মানুষের মনটা কি অদ্ভুদ ! কালকে নিশিকে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে হালকা লাগছিল আর এখন আমার খারাপ লাগছে ! মেয়েটাকে এই সকালবেলা মিস করছি আমি ।
হাত মুখ ধুয়ে আসার পর হলের এক পিয়ন খবর দিয়ে গেল যে আমার নাকি গেস্ট এসেছে । ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।
ওয়েটিং রুমে গিয়ে চমকাতে হল ।
নিশি বসে আছে জড়সড় হয়ে । চেহারা কেমন বিষন্ন আর চোখ গুলো কেমন ফোলা ফোলা । কাল রাতে নিশ্চয় কেঁদেছে !
আমার মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হতে লাগল ।
কষ্টের অনুভূতি ।
মেন হচ্ছে আমি ই এর জন্য দায়ী । কি ঝামেলায় পরলাম। এমন কেন মনে হচ্ছে!! আমার দোষ কোথায়?
আমি নিশির পাশে গিয়ে বসলাম । ও বসেই রইল মাথা নিচ করে । একটু পর একটা প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিল ।
খুব নিচু স্বরে বলল
-কাল এটা দেবার জন্য তোমাকে ডেকেছিলাম । আমি ...
নিশি চুপ করে গেল । খানিকট যেন কেঁপে উঠল । আমি জানি ও কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ।
আমি প্যাকেট টা খুলে আরো বেশি অবাক হলাম ।
একটা ঘড়ি । টাইটানের ঘড়ি ।
ঘড়িটা আমি চিনি । মাস দুয়েক আগে টাইটানে গেছিলাম । ঠিক এই ঘড়িটাই আমার পছন্দ হয়েছিল ।
কিন্তু দাম দেখে আর কেনা হয়নি আর ।
নিশি পাশে ছিল ।
ও মনে রেখেছে ।
আমার মনটাতে কষ্টের অনুভূতিটা যেন আরো একটু বেড়ে গেল । নিশি বলল
-আমি যাই ।
বলে ও হাটতে লাগল । আমি ওর পিছন পিছন বের হয়ে এলাম । বললাম
এখনই যাবে ? ঐ পুকুর পাড় টাতে একটু বসি ?
দুজন চুপচাপ বসে আছি । নিশি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । একটু একটু কাঁপছে ওর শরীর টা ।
নিশি নিঃশব্দে কাঁদছে । আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে । মনে হচ্ছে ওর এই কান্নার জন্য আমি দায়ী । একটা অপরাধ বোধ মনের মধ্যে আস্তে আস্তে বাড়তে লাগল ।
মনে হল ও তো একটু এরকমই ।
আমি কেন ওর সাথে এমনটা করলাম ? কি হত ওর সাথে একটু দেখা করলে ? কি শখ করেই না আমার জন্য ঘড়িটা কিনেছিল আমাকে দেবার জন্য !!
আমি জানি হলে ছেলেরা বাড়ান্দা থেকে আামদেরকে দেখতে পাচ্ছে । মনে খানিকটা অবাক হচ্ছে কিংবা কৌতুহল হচ্ছে ওদের মনে । কেউ কেউ উকি দিচ্ছে বারান্দা থেকে ।
আমরা পাশাপাশি আছি । নিশি অন্য দিকে বসে আছে ।
আস্তে আস্তে ফোপানো বাড়ছে । সেই সাথে বাড়ছে আমার অপরাধবোধ !
আমি নিশির হাতটা ধরলাম । ঠিক তখনই নিশি হুঁ হূণ করে কেঁদে দিল । ফোঁপাতে ফোঁপাতে কেবল বলল
-তুমি......তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে ? বল পারবে?
আমার বুকের ভিতর টাও হুঁ হুঁ করে উঠল । সত্যি কি পারবো?
গল্পটা আরো লেখা ইচ্ছা ছিল কিন্তু আর ভাল লাগল না ।
আসলে আমার এই অভ্যাসটা খুব খারাপ । কিছু লিখতে লিখতে যদি ঐ লেখাটার উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলি তাহলে আর লিখে ইচ্ছা করে না । এটার বেলাতেও তেমনটাই হয়েছে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।