আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -স্যার আজকে আর পড়বো না ।
-কেন পড়বা না ?
-স্যার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে । এখন ফুচকা না খেলে আর পড়ায় মনই বসবে না । আপনি একটু বসেন । আমি আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুচকা কিনতে যাবো আর আসবো ।
শামসের একবার কিছু মনে হলে তা না করা পর্যন্ত আর তার শান্তি নেই । আর খাওয়ার কথা হলে তো কোন কথাই নাই । বললাম
-ঠিক আছে । আর ফারিয়াকে ডাক দাও । সবাই মিলেই খাই ।
শামসের হাসি বিস্তৃত হল ।
শামসের বাড়ির ঠিক সামনেই ফুচকা চটপটির দোকান । তিন প্লেট ফুচকার অর্দার দিয়ে ওয়েট করছি এমন সময় আবার সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম ।
-শামস কি খবর ?
-নিহিন আপু কেমন আছেন ?
-ভাল ।
-কি করছো তোমরা ?
এই মেয়েগুলো এমন ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন কেন করে ? ফুচকার দোকানের সামনে মানুষ নিশ্চই ফুচকা খাওয়ার জন্যই দাড়াবে !
আশ্চর্য !
-ফুচকা খেতে এসেছি আপু ।
স্যার আমাদের ফুচকা খাওয়াচ্ছে ।
-আচ্ছা।
নিহিন হাসল । আবার বলল
-তোমাদের স্যার কি কেবল তোমাদের কেবল আইসক্রিম আর ফুচকাই খাওয়াই নাকি তোমাদেরকে পড়ায়ও ?
আমি বললাম
-আমি সবকিছুই করি ।
-আচ্ছা !
দোকানদার কে আরো এক প্লেটের অর্দার দিলাম ।
আজকেও দেখলাম সেদিনের মত নিহিন একটুও বিনয়ী হল না ।
না আমার জন্য অর্দার দেওয়ার দরকার নাই , আমি খাবো না এরকম কোন কথাই নাই !
আশ্চর্য মেয়ে রে বাবা !
ফুচকা খাওয়া শেষে শামস আর ফারিয়া চলে গেল ।
আমারও বাসায় যাওয়া দরকার !
-বাসায় যাবেন এখন ?
-হুম !
-যেতেতো হবে ! কেন কেউ কি অপেক্ষা করছে ?
আমি হেসে উঠলাম নিহিনের কথা শুনে ।
-কি হাসছেন কেন ?
-হাসির কথা বললে হাসবো না ?
নিহিনও হাসল !
আমি নিহিনের হাসিটা একটু মনযোগ দিয়ে দেখলাম ।
নিহিন হাসলে গালে খানিকটা টোল পরে ।
নিহিন মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে ওর হাসি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি । ও খানিকটা লজ্জা পেল যেন ! বলল
-আপনি তো সেদিনের পর আর ফোন দিলেন না ?
-আপনিও তো করেন নি ?
-একটা মেয়ে হয়ে আগ বাড়িয়ে কিভাবে ফোন করি বলুন ? কেমন একটা বেহায়াপানা হয়ে যায় না ?
-আচ্ছা এই কথা ? আমিও তো বলতে পারি যে একটা সুন্দরী মেয়েকে বিনা কারনে ফোন করাটা কেমন দেখায় ! সেই মেয়েটা যদি কিছু মনেটনে করে বসে !
নিহিন আমার দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল । বলল
-এভাবে বলতে গেলে ঝগড়া লেগে যাবে । ঠিক আছে , এবার থেকে ফোন দিলে আমি কিছু মনে করবো না ।
আমি খানিকটা অবাক হই ।
এই মেয়েটা আমার প্রতি কি একটু বেশিই আগ্রহ দেখাচ্ছে না ?
কিন্তু কোন কারন আছে কি ? নিহিনের সাথে কথা বলা শুরু হল । মোটামুটি ভালভাবেই শুরু হল ।
আস্তে আস্তে ওর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছি । জানি না নিহিনও এমন ভাবে আমার কথা ভাবে কিনা ।
কয়েকদিন পরের কথা ।
আমি টিউশনি থেকে বের হয়ে হাটছি আপন মনে । এমন সময় ফোন বেজে উঠল । নিহিন ফোন করেছে ।
-হ্যালো ।
-দাড়ান ।
-দাড়ান মানে?
-মানে হল দাড়ান । আমি আপনার পিছনে ।
পিছনে ঘুরে দেখি নিহিন আসছে । আমার কাছে এসে বলল
-কি ব্যাপার ডাক দিলাম শুনলেন না যে ?
আমি বোকার মত হাসলাম । বললাম
-খেয়াল করি নি ।
আসলে ঢাকা শহরে আমার পরিচিত মানুষ খুব কম । আর রাস্তায় তো পরিচিত কারো সাথে কখনও দেখাই হয় না । তাই ... আসলে খেয়াল করি নি ।
-বুঝলাম ।
নিহিন আমার সাথে সাথে হাটতে লাগল ।
শামসদের বাসা থেকে বেরিয়েই বেইলী রোড । আমি এইটুকু হেটে এসে এখান থেকে রিক্সা নিই । বেইলীরোডের মাথায় এসে নিহিনকে বললাম
-আপনি কোথায় যাবেন ?
নিহিন বেইলীরোডটার দিকে ইশারা করল ।
-আচ্ছা তাহলে আমি আজকে বরং যাই ?
-যাই মানে ?
নিহিন চোখ কপালে তুলল ।
-মানে বাসায় যাবো !
-কোন বাসায় যাওয়া যায়ী নাই ।
চলেন আমার সাথে । না মানে রাত হয়ে ...
নিহিন খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার হাত ধরল । বলল
-বেশি ন্যাকামো করবা না । চল ।
আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না ।
ও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বেইলী রোডের দিকে ।
আমি শামসকে পড়াই প্রায়ই দুবছর । প্রতিদিন এই বেইলীরোডটার সামনে দিয়ে যাই । তবুও কেন জানি এই রাস্তাটাতে ঢুকতে আমার একটু অস্বস্তি লাগে ।
চারিদিকে এতো মানুশ বিশেষ করে চারিদিকে এতো জুটি , এর মাঝে চলে এলে নিজেকে কেন জানি কেমন অবানঞ্চিত মনে হয় ।
কিন্তু আজকের ব্যাপারটা সম্পর্নই ভিন্ন । আমার কেমন জানি অদ্ভুদ লাগছে । অদ্ভুদ এক আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে ।
নিহিন আমাকে নিয়ে রাস্তার এক পাশে বসে পড়ল । দেখলাম আরো অনেকেই বসেছে ।
বেশির ভাগই কাপল । নিহিন বলল
-কি খাবা বল ?
এই সেরেছে রে ! আজ তো মানিব্যাগে বেশি টাকা আনি নি ! কি খাবো কয়টাকা বিল হবে !
মান সম্মান বুঝি আর রইল না । আমি কোন মতে বললাম
-ফাস্ট ফুড আমার একদম ভাল লাগে না । ফুচকা পাওয়া যাবে ?
নিহিন একটু হাসল ।
-দেখেছো আমাদের মধ্যে কত মিল ।
আমারও ফাস্টফুড একদম ভাল লাগে না । তার চেয়ে ফুচকা অনেক বেটার !
নিহিন ফুচকার অর্দার দিল । নিহিন এখনও আমার হাত ধরেই আছে । তাই একটু অস্বস্তি লাগছিল ।
হাতটা একটু টান দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ।
দেখলাম নিহিনের হাতে টান লাগল । তারমানে ও আমার হাতটা ভাল করেই ধরেছিল । নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার কি অস্বস্তি লাগছে আমি তোমার হাত ধরে আছি বলে ।
আমি অস্বস্তি ভরা হাসি হাসলাম । বললাম
-একটু ।
নিহিন খুব হাসল আমার কথা শুনে । ফুচকা খাওয়া শেষে বিল দিতে গেলাম , নিহিন আমাকে আটকালো । বলল
-টাকা পয়সা কি বেশি হয়ে গেছে ?
-কেন ?
-বিল দিতে যাচ্ছ কেন ? আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি আমি তোমাকে ফুচকা খাইয়েছি বিলও আমি দেবো । নাকি আমি মেয়ে হয়ে বিল দিলে তোমার ঈগোতে লাগবে ।
-না না সমস্যা নেই ।
ঈগোতে কেন লাগবে ?
নিহিন বিল দিয়ে এল । নিহিনের সাথে হাটতেছি এমন সময় নিহিন বলল
-আচ্ছা আমি তোমাকে সেই কখন থেকে তুমি করে বলছি । আর তুমি আমাকে তুমি বলে একটা সম্মোদ্ধন কর নি ।
কথা সত্য । আমি আসলেই ওকে তুমি করে একটা কথাও বলি নি ।
আসলে আমি তো এই মেয়ে গুলার মত এতো এডভান্স না । চট করেই কোন মেয়ে আপনি থেকে তুমি বলা যায় না ।
আমি অন্তত পারি না । এই মেয়ে আসতে আসতে আমাকে চমকে দিচ্ছে । জানি না সামনে আরো কত কিছু করবে !
নিহিন, আমার সম্ভাব্য গার্লফ্রেন্ড ! (১ম পর্ব) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।