আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিহিন, আমার সম্ভাব্য গার্লফ্রেন্ড !! (পর্ব ২)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -স্যার আজকে আর পড়বো না । -কেন পড়বা না ? -স্যার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে । এখন ফুচকা না খেলে আর পড়ায় মনই বসবে না । আপনি একটু বসেন । আমি আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুচকা কিনতে যাবো আর আসবো ।

শামসের একবার কিছু মনে হলে তা না করা পর্যন্ত আর তার শান্তি নেই । আর খাওয়ার কথা হলে তো কোন কথাই নাই । বললাম -ঠিক আছে । আর ফারিয়াকে ডাক দাও । সবাই মিলেই খাই ।

শামসের হাসি বিস্তৃত হল । শামসের বাড়ির ঠিক সামনেই ফুচকা চটপটির দোকান । তিন প্লেট ফুচকার অর্দার দিয়ে ওয়েট করছি এমন সময় আবার সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম । -শামস কি খবর ? -নিহিন আপু কেমন আছেন ? -ভাল । -কি করছো তোমরা ? এই মেয়েগুলো এমন ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন কেন করে ? ফুচকার দোকানের সামনে মানুষ নিশ্চই ফুচকা খাওয়ার জন্যই দাড়াবে ! আশ্চর্য ! -ফুচকা খেতে এসেছি আপু ।

স্যার আমাদের ফুচকা খাওয়াচ্ছে । -আচ্ছা। নিহিন হাসল । আবার বলল -তোমাদের স্যার কি কেবল তোমাদের কেবল আইসক্রিম আর ফুচকাই খাওয়াই নাকি তোমাদেরকে পড়ায়ও ? আমি বললাম -আমি সবকিছুই করি । -আচ্ছা ! দোকানদার কে আরো এক প্লেটের অর্দার দিলাম ।

আজকেও দেখলাম সেদিনের মত নিহিন একটুও বিনয়ী হল না । না আমার জন্য অর্দার দেওয়ার দরকার নাই , আমি খাবো না এরকম কোন কথাই নাই ! আশ্চর্য মেয়ে রে বাবা ! ফুচকা খাওয়া শেষে শামস আর ফারিয়া চলে গেল । আমারও বাসায় যাওয়া দরকার ! -বাসায় যাবেন এখন ? -হুম ! -যেতেতো হবে ! কেন কেউ কি অপেক্ষা করছে ? আমি হেসে উঠলাম নিহিনের কথা শুনে । -কি হাসছেন কেন ? -হাসির কথা বললে হাসবো না ? নিহিনও হাসল ! আমি নিহিনের হাসিটা একটু মনযোগ দিয়ে দেখলাম । নিহিন হাসলে গালে খানিকটা টোল পরে ।

নিহিন মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে ওর হাসি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি । ও খানিকটা লজ্জা পেল যেন ! বলল -আপনি তো সেদিনের পর আর ফোন দিলেন না ? -আপনিও তো করেন নি ? -একটা মেয়ে হয়ে আগ বাড়িয়ে কিভাবে ফোন করি বলুন ? কেমন একটা বেহায়াপানা হয়ে যায় না ? -আচ্ছা এই কথা ? আমিও তো বলতে পারি যে একটা সুন্দরী মেয়েকে বিনা কারনে ফোন করাটা কেমন দেখায় ! সেই মেয়েটা যদি কিছু মনেটনে করে বসে ! নিহিন আমার দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল । বলল -এভাবে বলতে গেলে ঝগড়া লেগে যাবে । ঠিক আছে , এবার থেকে ফোন দিলে আমি কিছু মনে করবো না । আমি খানিকটা অবাক হই ।

এই মেয়েটা আমার প্রতি কি একটু বেশিই আগ্রহ দেখাচ্ছে না ? কিন্তু কোন কারন আছে কি ? নিহিনের সাথে কথা বলা শুরু হল । মোটামুটি ভালভাবেই শুরু হল । আস্তে আস্তে ওর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছি । জানি না নিহিনও এমন ভাবে আমার কথা ভাবে কিনা । কয়েকদিন পরের কথা ।

আমি টিউশনি থেকে বের হয়ে হাটছি আপন মনে । এমন সময় ফোন বেজে উঠল । নিহিন ফোন করেছে । -হ্যালো । -দাড়ান ।

-দাড়ান মানে? -মানে হল দাড়ান । আমি আপনার পিছনে । পিছনে ঘুরে দেখি নিহিন আসছে । আমার কাছে এসে বলল -কি ব্যাপার ডাক দিলাম শুনলেন না যে ? আমি বোকার মত হাসলাম । বললাম -খেয়াল করি নি ।

আসলে ঢাকা শহরে আমার পরিচিত মানুষ খুব কম । আর রাস্তায় তো পরিচিত কারো সাথে কখনও দেখাই হয় না । তাই ... আসলে খেয়াল করি নি । -বুঝলাম । নিহিন আমার সাথে সাথে হাটতে লাগল ।

শামসদের বাসা থেকে বেরিয়েই বেইলী রোড । আমি এইটুকু হেটে এসে এখান থেকে রিক্সা নিই । বেইলীরোডের মাথায় এসে নিহিনকে বললাম -আপনি কোথায় যাবেন ? নিহিন বেইলীরোডটার দিকে ইশারা করল । -আচ্ছা তাহলে আমি আজকে বরং যাই ? -যাই মানে ? নিহিন চোখ কপালে তুলল । -মানে বাসায় যাবো ! -কোন বাসায় যাওয়া যায়ী নাই ।

চলেন আমার সাথে । না মানে রাত হয়ে ... নিহিন খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার হাত ধরল । বলল -বেশি ন্যাকামো করবা না । চল । আমি আর কিছু বলতেই পারলাম না ।

ও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বেইলী রোডের দিকে । আমি শামসকে পড়াই প্রায়ই দুবছর । প্রতিদিন এই বেইলীরোডটার সামনে দিয়ে যাই । তবুও কেন জানি এই রাস্তাটাতে ঢুকতে আমার একটু অস্বস্তি লাগে । চারিদিকে এতো মানুশ বিশেষ করে চারিদিকে এতো জুটি , এর মাঝে চলে এলে নিজেকে কেন জানি কেমন অবানঞ্চিত মনে হয় ।

কিন্তু আজকের ব্যাপারটা সম্পর্নই ভিন্ন । আমার কেমন জানি অদ্ভুদ লাগছে । অদ্ভুদ এক আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে । নিহিন আমাকে নিয়ে রাস্তার এক পাশে বসে পড়ল । দেখলাম আরো অনেকেই বসেছে ।

বেশির ভাগই কাপল । নিহিন বলল -কি খাবা বল ? এই সেরেছে রে ! আজ তো মানিব্যাগে বেশি টাকা আনি নি ! কি খাবো কয়টাকা বিল হবে ! মান সম্মান বুঝি আর রইল না । আমি কোন মতে বললাম -ফাস্ট ফুড আমার একদম ভাল লাগে না । ফুচকা পাওয়া যাবে ? নিহিন একটু হাসল । -দেখেছো আমাদের মধ্যে কত মিল ।

আমারও ফাস্টফুড একদম ভাল লাগে না । তার চেয়ে ফুচকা অনেক বেটার ! নিহিন ফুচকার অর্দার দিল । নিহিন এখনও আমার হাত ধরেই আছে । তাই একটু অস্বস্তি লাগছিল । হাতটা একটু টান দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ।

দেখলাম নিহিনের হাতে টান লাগল । তারমানে ও আমার হাতটা ভাল করেই ধরেছিল । নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল -তোমার কি অস্বস্তি লাগছে আমি তোমার হাত ধরে আছি বলে । আমি অস্বস্তি ভরা হাসি হাসলাম । বললাম -একটু ।

নিহিন খুব হাসল আমার কথা শুনে । ফুচকা খাওয়া শেষে বিল দিতে গেলাম , নিহিন আমাকে আটকালো । বলল -টাকা পয়সা কি বেশি হয়ে গেছে ? -কেন ? -বিল দিতে যাচ্ছ কেন ? আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি আমি তোমাকে ফুচকা খাইয়েছি বিলও আমি দেবো । নাকি আমি মেয়ে হয়ে বিল দিলে তোমার ঈগোতে লাগবে । -না না সমস্যা নেই ।

ঈগোতে কেন লাগবে ? নিহিন বিল দিয়ে এল । নিহিনের সাথে হাটতেছি এমন সময় নিহিন বলল -আচ্ছা আমি তোমাকে সেই কখন থেকে তুমি করে বলছি । আর তুমি আমাকে তুমি বলে একটা সম্মোদ্ধন কর নি । কথা সত্য । আমি আসলেই ওকে তুমি করে একটা কথাও বলি নি ।

আসলে আমি তো এই মেয়ে গুলার মত এতো এডভান্স না । চট করেই কোন মেয়ে আপনি থেকে তুমি বলা যায় না । আমি অন্তত পারি না । এই মেয়ে আসতে আসতে আমাকে চমকে দিচ্ছে । জানি না সামনে আরো কত কিছু করবে ! নিহিন, আমার সম্ভাব্য গার্লফ্রেন্ড ! (১ম পর্ব) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।