আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমি যতবার নিহিনকে দেখি ততবারই অবাক হই । বারবার কেবল মনে হয় এটা কি আসলেই সম্ভব ?
আমি কখনও বিশ্বাস করি নি এটা হতে পারে !
হতেই পারে না !
একজন মানুষ কখনও তার মনের মত মনের মানুষ খুজে পেতে পারে না । একটা ছেলে ঠিক যে টাইপের মেয়ে চায় অথবা একটা মেয়ে ঠিক যে টাইপের ছেলে চায় জীবনে সেই ছেলে বা মেয়ে একদম সেই মনের মত কাউকে খুজে পায় না ।
হ্যা পায় তবে তার মধ্যে কিছু পছন্দের গুনাবলী থাকে আবার কিছু অপছন্দের গুনা বলীও থাকে ।
থাকতে বাধ্য !
থাকতেই হবে !
পুরো পুরি একশভাগ পছন্দের মানুষ কখনও পাওয়া যায় না ।
কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে নিহিন আমার সেই শতভাগ পছন্দের মানুষ । আমি ঠিক যে যে জিনিস গুলো পছন্দ করি নিহিন বেছে বেছে ঠিক সেই সেই কাজ গুলোই করে ।
একদম ঠিক ঠিক সময়ে !
আমি বুঝি না ও ঠিক এই কাজ গুলো কেমন করে করে । আজকের কথাই ধরা যাক ।
সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে ।
একেবারে ঝুম বৃষ্টি । ছুটির দিন তাই ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠার কোন তাড়াহুড়া নাই । সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙ্গল আর একটু বিছানায় গড়াগড়ি খেলাম । একা থাকি তাই সকালের নাস্তা বাইরে থেকে করতে হয় ।
বৃষ্টি হচ্ছিল কিছুতেই বাইরে যেতে মন চাচ্ছিল না ।
বরং ইচ্ছা করছিল গরুর ভূনা খিচুরি খেতে ।
ইস ! এখন যদি কেউ ভূনা খিচুরি রান্না করে খাওয়াত । ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই কলিংবেল বেজে উঠল । আমি দরজা খুলতেই দেখি নিহিন । আজকেও সাদা সেলোয়ার কামিজ পরেছে ।
আচ্ছা এই মেয়েটা কি সাদা ছাড়া আর কিছু পরে না নাকি ? অবশ্য সাদায় নিহিনকে সাদা পরীর মত সুন্দর লাগে !
আর সাদা আমার খুব পছন্দের পোষাক । নিহিনের চেহারার মাঝে কেমন যেন একটা শুভ্র নমনীয় তা আছে । সেই নমনীয়তা সাদা পোষাকে এতো সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে যে মনে হয় কেবল তাকিয়েই থাকি ।
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল । নিহিনের এই হাসিটাও আমার খুব বেশি পছন্দ ।
পাতলা ঠোট যেন লাল টুকটুক করছে । নিহিন কখনও ঠোটে লিপস্টিক দেয় না তবুও ওর ঠোট দুটো এতো লাল আর সেই লাল ঠোটের সাথে মুক্তোর মত দাঁতের হাসি !
একবার দেখলে প্রান জুড়িয়ে যায় । আর নিহিনের হাসির ভিতরেও কেমন একটা মায়া মায়া ভাব আছে । এই জন্য আরো বেশি ভাল লাগে আরো বেশি সুন্দর লাগে । আমি নিহিনের হাসির দিকে তাকিয়েই থাকি ।
নিহিন হাসি থামিয়ে বলল
-কি ? ভেতরে আসতে দিবে না ?
আমি দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালাম । বললাম
-জানো তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল ।
-আচ্ছা ? মিথ্যা কথা ! তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে ।
-সত্যি বলছি । তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল ।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও তোমার কথা ভেবেছি !
নিহিন মুখ বাকিয়ে বলল
-খুব মনে পড়ছিল ! বুঝলাম । এখন বল কি খিচুড়ি খাবা ? যদি ভূন খিচুড়ি খেতে চাও তাহলে ফ্রিজে মাংশ থাকতে হবে কিন্তু ।
আমি একটু অবাক হলাম । কিন্তু কিছু বললাম না । এর আগেও এরকম ঘটনা অনেক বার ঘটেছে ।
একবার মনে আছে অফিস থেকে বাসায় আসছিলাম । গাড়ি যখন জ্যামে আটকে ছিল বাইরের ফুটপাতের ফুচকার দোকানের দিকে । এমন ইচ্ছা হল কিন্তু উপায় ছিল না । একতো শরীর ক্লান্ত ছিল তার উপর আবার সিগনাল ছেড়ে দিছে । ভাবলাম বাড়ির সামনে গিয়ে খাবো ।
বাসার সামনে একটা ফুচকা ওয়ালা নিয়মিত বসে । কিন্তু বাসার সামনে এসে দেখলাম ফুচকা ওয়ালা বসে নি । এমন খেতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু আসেপাশে কোথাও কোন দোকান দেখলাম না । মনের ভিতর একটা আফসোস নিয়ে বাসায় হাজির হলাম ।
গোছল করে ফ্রেস হয়েছি নিহিন এসে হাজির ।
আমি দরজা খুজে দেখলাম নিহিন মিষ্টি হাসি একটা দিয়ে দাড়িয়ে আছে । হাতে একটা ফুচকার প্যাকেট । এরপর থেকে প্রায়ই এমনটা হতে থাকে । প্রথম প্রথম অবাক হতাম । কিন্তু এখন আর লাগে না ।
নিহিন আমার পারফেক্ট গার্লফ্রেন্ড ।
আমার মনের পছন্দ অপছন্দ তো ও ভাল মত বুঝবেই !
নিহিন আবার বলল
-কি ব্যাপার ফ্রিজে মাংশ আছে তো ?
-হুম আছে ।
-আচ্ছা তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি রান্না বসাচ্ছি ।
নিহিন রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । আমি নিহিনের পেছন পেছন গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম ।
-আরে কি কর !
নিহিন আমার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু ও যে ভাবে আমার হাত ছাড়াতে লাগল মনে হল না যে ও চাচ্ছে আমি ছেড়ে দেই । নিহিন আবার বলল
-ছাড়ো বলছি ! কেউ দেখে ফেলবে ?
-আচ্ছা ? কেউ দেখে ফেলবে ? ছেড়ে দেবো ? তুমি যদি সত্যিই বল তাহলে ছেড়ে দিবো !
নিহিন চুপ করে রইল । আমি ওকে আর একটু জোরে চেপে ধরে বললাম
-কি ছাড়বো ?
নিহিন চুপ করেই রইল । আমি ওর চেহারা না দেখতে পারলেও খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি যে ওর মুখটা লাল হয়ে গেছে । আমি আরো কিছুক্ষন পর বললাম
-জানো কাল না আমি আবার ভয় পেয়েছিলাম ।
আমার কথায় যেন একটা বিদ্যুত্ খেলে গেল । ও আমার দিকে ফিরে তাকালো । ওর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে । নিহিন বলল
-খুব ভয় পেয়েছিল ?
-হুম । কালকেও বারান্দায় সেই ছায়াটাকে দেখেছি ।
রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল । কেন জানি মনে হলে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । খুব অস্বস্থি লাগছিল জানো !
নিহিনের চোখের কোনে আমি যেন পানি দেখতে পেলাম ।
আশ্চার্য !!
এই মেয়েটা এতো এমন কেন ?
আমি একটু ভয় পেয়েছি তাতে আমার থেকে যেন নিহিনই বেশি অস্থির ! কেঁদে কেটে একাকার ।
এর আগে যতবার ওকে এই কথা বলেছি ততবারই ও এমন আচরন করেছে ।
কতবার ভেবেছি ওকে বলব না কিন্তু ওকে ছাড়া আর কাকে বলবো ? এখানে আর কে আছে ?
আর আমি কিছু না বললেও নিহিন কেমন করে জানি সব টের পেয়ে যায় । তখন আর কান্নাকাটি করে । বলে আমাকে কেন বলবে ? আমি কি তোমার কিছু হই নাকি ? আমি কিছু হলে আমাকে ঠিকই বলতে । নিজের ভাবলে সব কিছু শেয়ার করতে ।
আমি বললাম
-তোমার এতো অস্থির হতে হবে না ।
কেবল ছায়ায় দেখেছি । তখন অবশ্য ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু এখন তেমন কিছু মনে হচ্ছে না ।
নিহিন তবুও অশ্রুভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । তারপর আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো । আমি বললাম
-তুমি এতো কেন অস্থির ? ছায়াটা আমার কোন ক্ষতি করে না তো ! আমার কাল কি মনে হল জানো ?
নিহিন আমাকে তখনও জড়িয়ে রেখেছে ।
বলল
-কি ?
ওর কন্ঠে কান্নার বেগ বোঝা যাচ্ছে । আমি বললাম
-কালকে আমার মনে হল যেন ঐ ছায়া আমাকে দেখছে । আর যদিও আর কিছু বুঝা যাচ্ছিল না তবুও কেন জানি মনে হল ছায়াটা আমার কোন ক্ষতি করবে না !
একটু পর নিহিন আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
-তাই ? কিভাবে বুঝলে ?
-জানি না । কেন জানি মনে হল । কাল প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে কেন জানি আর ভয় লাগে নি ।
-আচ্ছা ।
নিহিনের মুখটা যেন একটু ভার মুক্ত হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ওয়াশ রুমে যাও । আমি রান্না বসাচ্ছি ।
আমি মনের আনন্দে বাথরুমে ঢুকলাম ।
মনের ভিতর আসলেই কেমন একটা আনন্দ অনুভব করছি । নিহিন যখনই আমার আশেপাসে থাকে মনের ভিতরে এমনই একটা ভাব থাকে ।
আমি জীবনে কখনই ভাবি নি নিহিনের মত এত কেয়ারিং একজন মানুষ আমার জীবনে আসবে !
নিহিনের সাথে পরিচয়টাও হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে । চাকরী পাওয়ার পর মিরপুরের দিকে চলে আসতে হয় । আমার অফিসটা এদিকেই ছিল ।
আমার বাসার খুব কাছেই একটা বড় একটা লেক আছে । তার পাশে বিস্তার মাঠ ! লেক পাড়ে বসে থাকলে সূর্যাস্তটা খুব ভাল করে দেখা যায় । ছুটির দিন গুলোতে মাঝে মাঝেই লেকপাড়ে বসে থাকতাম ।
ভাল লাগত অনেক ।
একদিন আমি বসেছিলাম ।
লাল সূর্যটা তখন অস্ত যাবার পথে । ঠিম এমন সময় আমি দেখলাম দুর সূর্যের কাছে একটা সাদা বিন্দুর মত এগিয়ে আসছে । সাদা বিন্দুটি আস্তে আস্তে একটা মানুষে পরিনত আমি কেবল মন্ত্র মুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে ।
মেয়েটি সাদা চুড়িদার পরে ছিল !
হাটতে হাটতে মেয়েটি আমাকে ক্রস করে চলে গেল । আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম ! মেয়েটার চেহারার ভিতর কি জানি ছিল আমি না তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না !
চলবে............ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।