আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার গার্লফ্রেন্ড নিহিন আর আমি এবং একটা রাতের গল্প

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -দেখি তোমার হাতটা ! -কি করবা ? -আহা দেখি না ! আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম । নিহিন কি একটা ব্রেসলেটের মত আমার হাতে পরিয়ে দিল । তারপর বলল -এখন থেকে সব সময় এটা পরে থাকবে । খরবদার কখনও খুলবে না । বাচ্চা মেয়েদের মত আবদার করল ।

আমি কাছে এনে দেখলাম । ব্রেসলেটই বলা যায় । তবে স্টাইলটা কেমন একটু পুরানো । স্টিলের মনে হল । উপরে কালো কারুকার্য করা ।

কারুকার্যটা বেশ অদ্ভুদ । আমি বললাম -সব সময় পরে থাকতে হবে ? -হুম! সব সময় । কথা দাও কখনও খুলবা না । -আচ্ছা । -আমার গা ছুয়ে কথা দাও ।

-আরে গা ছুয়ে কথা দিতে হবে কেন ? আমার মুখের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না ? -হবে না কেন ? তবুও দাও । আমি নিহিনের হাত ধরলাম । আজকেও ওর হাতটা ঠান্ডা । নিহিনের সব কিছু আমার ভাল লাগে কেবল এই ঠান্ডা ভাবটা আমার একদম ভাল লাগে না । এতো মিষ্টি চেহারা ওর ! কিন্তু এই ঠান্ডা ভাবটা কেমন জানি অস্বস্তি লাগে ।

ঘড়িতে সময় দেখে বেশ অবাক হলাম । দুঘন্টার উপরে ওর সাথে গল্প করছি । টেরই পাই নি । ওর সাথে একবার কথা বলা শুরু করলে আমার আর সময় জ্ঞান থাকে না । -আচ্ছা আমি এখন যাই ।

-এখনই যাবে ? মাত্রই এলে । -মাত্র এলাম ? নটার সময় এসেছি । এখন এগারটা পার হয়ে গেছে । এখন যদি নিচে না যাই মা চলে আসবে । নিহিনের মুখটা মলিন হয়ে গেল ।

-মন খারাপ করলে আমি কিভাবে যাবো বল ? -যেও না ! আমি হাসলাম । -বোকা মেয়ে বলে কি ? তুমি কি চাও আজ একটু বেশি কথা বলার জন্য আর তোমার সাথে কথাই না বলতে পারি ! আমার মা যদি টের পায় না । খবর আছে আমার । তবুও নিহিন মন খারাপ করেই রইল । আমি নিচে চলে এলাম ।

বাসায় ঢুকে মার জেরায় পড়তে হল । -এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি ? -মা সুমনদের বাসায় ছিলাম । -মিথ্যা কথা বলবি না । আমি সুমনকে ফোন করেছিলাম । ও বলল তুই ওখানে ছিলি না ।

কোথায় ছিলি ? মিথ্যে ধরা পড়েছে । বুঝলাম । -আমি ছাদে ছিলাম । -এতো রাতে ছাদে কি করছিল ? -মা এমনি ছাদে ছিলাম । কি করছিলি বল ? সত্যি করে বল ।

-মা নিহিনের সাথে ছিলাম । -নিহিন ? -মা তোমাকে তোমাকে সেদিন বললাম না ? পাঁচ তলায় থাকে । মা কেমন অদ্ভুদ চোখে আমার দিকে তাকাল । তবে আর কিছু বলল না । আমি আমার রুমে চলে এলাম ।

আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না । নিহিনের কথা বলতে মা এমন চুপ করে গেলো কেন । সেদিন দারোয়ানকে নিহিনের কথা বলতে দারোয়ানও কেমন অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে ছিল । দরজা বন্ধ করে নিহিনের কথা ভাবতে লাগলাম । নিহিন কি চমৎকার একটা মেয়ে ! এই বাসাটায় প্রায় দুমাস আগে আমরা ভাড়ায় এসেছি ।

আসার প্রথম দিনই আমি নিহিনকে দেখি । ছাদে উঠেছিলাম সন্ধ্যা বেলা । এদিক ওদিক হাটাহাটি করছিলাম । ছাদ মোটামুটি ফাকাই ছিল । একবারে বাম কর্নারে যখন গেলাম লাল একটা সেলোয়ার কামিজ পরা একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ।

রোগা পাতলা একটা মেয়ে । যখন দুজনের চোখাচোখি হল দেখি মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়েই আছে । কি নিশ্পাপ একটা মুখ ! আমি হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমি মেয়েটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছি না । কি অদ্ভুদ সুন্দর ঐ চোখের দৃষ্টি ! আর কখন যে আপনা আপনি মেয়েটার দিকে হাটা শুরু করেছি তা আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না । -হাই ! মেয়েটা হাসল ।

-হ্যালো । -তোমরা নতুন এসেছ তাই না ? দেখছিলাম । কি নাম তোমার ? -অপু । -আমি নিহিন । নিহিন ? নিহিন আবারও হাসল ।

নিহিনের কেবল চোখই সুন্দর না , ওর হাসিটাও অসম্ভব সুন্দর । -তোমার নামটা অনেক সুন্দর । নিহিন আবারও হাসল । হাসতে হাসতে বলল -শুধু আমার নামই সুন্দর ? আর কিছু সুন্দর না ? আমার কেন জানি মনে হল নিহিন আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে । আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পরলাম ।

ও হাসতে হাসতে চলে গেল । ঐ দিন রাতের বেলা নিহিন আমাকে ফোন দিল । ফোন রিসিভ করে সত্যি অবাক হলাম । আমার স্পষ্টই মনে আছে আমি ওকে আমার নাম্বার দেই নি । বললাম -তুমি আমার নাম্বার পাইছো কোথায় ? নিহিন হাসল ।

বলল -যোগার করেছি । আমরা মাত্র এসেছি এখানে । আমারা নাম্বার কারো কাছে নেই । এখান কার কাউকে আমি আমার নাম্বর দেই নি । তাহলে ও পেল কিভাবে ? দিপুর কাছ থেকে নেয় নি তো ! আমি আবার বললাম -কোথায় পেয়েছ বল ! -আচ্ছা আমি তোমার কাছে ফোন করলাম তুমি একবারও জিজ্ঞেস করলে যে কেন ফোন করেছি ।

কেবল একই প্রশ্ন ! কোথায় পেয়েছি ? কোথায় পেয়েছি ? নিহিনের গলায় কেমন জানি আভিমানের সুর শুনতে পেলাম । আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । নিহিন আবার বলল -আমি এতো রাতে ফোন করলাম তোমার সাথে কথা বলার জন্য আর তুমি কি না পুলিশের মত প্রশ্ন করে যাচ্ছ । এবার আমার সত্যি সত্যি মনে হল নিহিন কেঁদে ফেলবে ! আমার নিজের মধ্যেই কেমন জানি অনুভূতি হল । তাইতো এতো প্রশ্ন করার কি দরকার ? ওকিভাবে নম্বর পেয়েছে এটা বড় কথা না ।

ও ফোন করেছে এটাই বড় কথা । আমি তাড়াতাড়ি বললাম -আচ্ছা আমি আর জিজ্ঞেস করবো না । এখন বল কেন ফোন দিছো ? নিহিন এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল -কেন তুমি খুশি হও না । কি বলব, সত্যিই খুব ভাল লাগছিল । বিকেল বেলা নিহিনের ঐটুকু কথা বলে সত্যিই আমার খুব ভাল লেগেছে ।

আমি নিজেই চাইছিলাম যেন ওর সাথে আমার আরো কথা বার্তা হোক! আরো আলাপ হোক! ঐ দিন অনেক রাত পর্যন্ত কথা হয় । কত রকমের কথা । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনে হল নিহিনের সাথে আর একটু কথা বলি । কিন্তু ফোন দিয়ে দেখি ওর নাম্বর বন্ধ । সারা দিন ট্রাই করলাম কিন্তু হায় ! একটা বারের জন্য ফোনটা ওপেন হল না ।

ওর সাথে কথা বলার জন্য কেমন জানি মনটা ছটফট করছিল । ও ঠিক করে বলেও নি যে কয় তলায় থাকে । আর প্রত্যেক ফ্লাটে ফ্লাটে গিয়ে ওর খোজ করাটা অসম্ভব । দারোয়ানের কাছে খোজ নিতে গেলাম কিন্তু বেটা দারোয়ান নিহিনের নাম শুনে এমন অদ্ভুদ চোখে তাকাল যেন আমি কোন পাগলা গাঢ়দ থেকে ছুটে এসেছি । বিকেল থেকেই ছাদে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি ।

আমার মন বলছিল যে ও ছাদে অবশ্যই আসবে । নিহিন এল সন্ধ্যার কিছু পরে । ঠিক গতকাল যে রকম সময় ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল । -তোমার ফোন বন্ধ কেন ? নিহিন কিছু বলল না । -আমি সারা দিন ট্রাই করেছি ।

আর দারোয়ানের কাছে তোমার কথা জিজ্ঞেস করলাম । বেটা ওমন করে তাকাল কেন ? নিহিনকে কেমন যেন একটু অসন্তুষ্ট মনে হল । -দারোয়ানকে আমার কথা জিজ্ঞেস করতে গেছ কেন ? ওর কন্ঠস্বর শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না । এতে এতো রাগার কি আছে ! আমি বললাম -জিজ্ঞেস করেছিতো কি হয়েছে ? এমন করে কেন কথা বলছ ? তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল আর তোমাকে ফোনেও পাচ্ছিলাম না । এটা কি অন্যায় হয়েছে ? দেখলাম নিহিন মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল ।

বলল -আচ্ছা সরি । আসলে আমি হুটহাট করে রেগে যাই প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না । -আচ্ছা । -আমাকে ফোন করে পাবে না । আমি আমার ফোন সারাদিন বন্ধ করে রাখি ।

-কেন ? -কারন আছে । আর আমার কথা কাউকে জিজ্ঞেস করার দরকার নাই ঠিক আছে । আমার সমস্যা হবে । তুমি কি চাও আমি বিপদে পড়ি । -না চাই না তো ।

-তাহলে আমার কথা আর কাউকে জিজ্ঞেস করবে না । প্রতিদিন এই সময় আমাদের দেখা হবে আর রাতে ফোনে কথা হবে কেমন ? -আচ্ছা । তারপর থেকে আমাদের প্রতিদিন দেখা হত সন্ধ্যার পর । আর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমাদের কথা শুরু হয় । এভাবেই চলছে ।

ওর প্রতি এমন দুর্বল হয়ে পড়েছি ওকে ছাড়া কিচ্ছু ভাল লাগে না । যদিও এখনও ভালবাসি বলি নি তবে খুব শীঘ্রই ভালবাসি বলে ফেলবো । আর আমি নিজেও বুঝতে পারি নিহিনও আমাকে খুব ভালবাসে । নিহিনের কথা ভাবতে ভাবতেই ওর ফোন এসে হাজির । আমি খানিকটা অবাক হলাম ।

এখন বাসার কেউ ঘুমায় নি । ও তো এতো আগে ফোন দেয় না । ফোনটা রিসিভ করে খানিকটা অবাক অলাম । নিহিনের কন্ঠস্বর কেমন জানি ঠেকল । -কি হয়েছে ? এমন করছো কেন ? ওপাশ থেকে এবার আমি কান্নার আওয়াজ পেলাম ।

-কি হয়েছে কাঁদছো কেন ? নিহিন কাঁদতে কাঁদতেই বলল -তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না তো অপু ? -আরে ভুল বুঝবো কেন ? কি হয়েছে বলবা তো ? নিহিন এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল -আমার বোধহয় আর এখানে থাকা হবে না । আমি অবাক হলাম । -কেন ? একথা কেন বলছ ? -অপু তোমাকে বলেছিলাম না যে আমার কথা তুমি কাউকে বলবা না । -মানে ? -তুমি তোমার মাকে কেন বলেছ ? আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না । নিহিন আবার বলল -আচ্ছা যা হবার হয়েছে ।

আমার একটা কথা শুনবে ? -বল -আমাকে কখনও ভুল বুঝো না । যে যাই বলুক তুমি সব সময় মনে রেখো যে আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি । আমি কখনও তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিহিন ফোন কেটে দিল । আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম ।

কিন্তু ফোন বন্ধ । ঠিক এই সময়ই মা দরজা ধাক্কা দিল । (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।