আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! প্রথমটুকু
ঠিক এই সময়ই মা দরজা ধাক্কা দিল । দরজা খুলে দিলাম । মা বলল
-বসার ঘরে আর ।
মায়ের পিছন পিছন বসার ঘরে গিয়ে বেশ অবাক হলাম । বাড়িওয়ালা চাচা এসেছে ।
হাথে পাড়ার মসজিদের ঈমামও এসেছে ।
-কি ব্যাপার ?
মা বলল
-ছাদে তুই কার সাথে ছিলি বল । সত্যি করে বল ।
মার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না ।
মোটামুটি সবকিছুই বলে দিলাম ।
এরপর আমাদের বাড়িয়ালা যা বলল তা আমার বিশ্বাস হল না । বিশ্বাস হবার কোন কারন নাই ।
বাড়িয়ালা চাচা কথা অনুযায়ী তার বাড়িতে নিহিন নামে কেউ থাকে না । তবে কিছু দিন আগে থাকতো । পাঁচতলার বাম পাশের ফ্লাটে ওরা থাকতো বাবা মার সাথে ।
কিন্তুএকদিন মায়ের বকা খেয়ে রাগ করে মেয়েটা আত্মহত্যা করে । তারপর থেকে ওখানে আর কেউ থাকে না ।
আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম ।
কি বলছে এরা এসব ? এ হতেই পারে না । হুজুর বলল যে খারাপ জিনের আসর পরেছে আমার উপর ।
তিনি নিহিনের দেওয়া ব্রেসলেট টা ফেলে দিলেন তার বদলে একটা তাবিজ বেঁধে দিলেন ।
-এটা থাকলে আর কোন সমস্যা নাই । দুষ্ট জিন কিছুতেই আমার কাছে আসতে পারবে না ।
আমি খানিকটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম মনে হল । সবাই চলে গেলে নিজের রুমে ফিরে এলাম ।
কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছিল না ।
যে যাই বলুক আমি তো নিহিনকে ভালবাসি । আর ও আমাকে ভালবাসে । ওর কথা গুলো আমার কানে বাঁচতে লাগল ।
“আমি সত্যি তোমাকে ভালবেসেছি ।
আমি কখনও তোমার কোন ক্ষতি করবো না” ।
সত্যিই তাই । নিহিন আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না ।
বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমার গুম আসছে না কিছুতেই । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় তিনটা বাজে ।
এমন সময় ধুপ করে কারেন্ট টা চলে গেল । ফ্যান চলার আওয়াজটা বন্ধ হতেই চারিদিকটা কেমন জানি নিস্তদ্ধ হয়ে গেল ।
চারিদিকটা কেমন জানি একটু বেশিই নিরব মনে হল । ঠিক তখনই আমি কেমন জানি একটা ক্ষীন কান্নার আওয়াজ পেলাম । কান্নার আওয়াজটা আস্তে আসতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
একটা সময় এসে আমার মনে হল কান্নার আওয়াজটা আমার খুব পরিচিত । আরে এটা নিহিনের আওয়াজ ।
আজ ফোনেও ঠিক এই ভাবেই ও কাঁদছিল । জিনিসটা বোঝার পর আমার মনের মধ্যে কেমন জানি অস্থিরতার সৃষ্টি হল ।
নিহিন কাঁদছে ।
ওর কাছে আমাকে যেতেই হবে । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল ও তো মানুষ না ।
যদি কিছু হয় ?
কি হবে ?
ও যাই হোক ও আমাকে ভালবাসে । ও কখনই আমার ক্ষতি করবে না ।
ওর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
হাতরে মোবাইলটা খুজে ওটার আলো জ্বেলে টিপ টিপ পায়ে ছাদের দিকে রওনা দিলাম । যদিও ভয় করছিল ।
একজন অশরীরির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি । ভয়তো পাবার ই কথা । সিড়ি গুনে গুনে যখন উপরে উঠছিলাম প্রতিটা পদক্ষেকের সাথে সাথে যেন আমার ভয়টা আরো বাড়তে লাগল ।
যখন সিড়ি ঘরের দরজা খুলতে যাবো তখন একটা কথা মনে হল । আগে তো নিহিনের কথাটা আমি জানতাম না , তাই ও হয়তো কিছু বলে নি কিন্তু এখন তো জানি ।
ও তো মানুষ না ।
অশরীরি । আত্মা ।
পেত্নী ।
পেত্নী………… ??
নিজের কাছেই কেমন জানি লাগল । একটা পেত্নী আমার গার্লফ্রেন্ড !
এতো ভয়ের মধ্যেও আমার হাসি পেয়ে গেল ।
মানুষ ডেটিং করতে কোন পার্কে অথবা রেস্টুরেন্ট যায় ।
আমি কোথায় যাবো ? তেতুল বা তাল গাছের তলে ? সবচেয়ে ভাল হবে শ্বশান ।
ও ফাইন !
মানুষ জিজ্ঞেস করবে কি রে কই যাচ্ছিস ?
আমি কি বলব ?
আমি বলবো শ্বাশানে যাচ্ছি গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং করতে !
চমৎকার হবে !
সিড়ি ঘরে দরজা ঠেলে ছাদে এলাম । পরিচিত ছাদটা কেমন জানি অপরিচিত মনে হল । নিহিনের সাথে কতবার এখানে এসেছি । কিন্তু আজকে পরিস্থিতি ভিন্ন ।
বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে ।
কান্নার আওয়াজটা এখনও পাওয়া যাচ্ছে । ছাদের বাম পাশ থেকে আসছে । বাম দিকটাতে যেতেই আমার বুকটা ধুপ করে উঠল ।
আমি একটা বেঞ্চ এনে রেখেছিলাম নিহিনের সাথে বসে গল্প করার জন্য ।
দেখলাম ঐ বেঞ্চটার উপর কেউ বসে আসে উল্টো দিকে মুখ করে ।
এখনও কাঁদছে । আমি স্পষ্টই বুঝতে পারছি ওটা নিহিনই ।
কিন্তু মনে মধ্যে কু ডাকতে লাগল । আমি আস্তে আস্তে নিহিনের দিকে এগিয়ে গেলাম । কাঁপা কাঁপা হাতে কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলাম ।
হঠাৎ করে ভয়টা কেন জানি বেড়ে গেল । এখন নিহিন ফিরে তাকাবে ।
কি দেখবো ?
হয়তো দেখবো কোন ভয়ংকর চেহারা ! অথবা পচা গলা কোন মুখ যেখান থেকে খশে খশে মাংশ পড়ছে । ভুতের গল্প গুলোতে স্বাধারন এরকমই হয় ।
আমি চিৎকার দেবার প্রস্তুতি নিলাম ।
নিহিন ফিরে তাকাল আমার দিকে । আমার চিৎকার গলার মধ্যেই আটকে গেল ।
নিহিনের চেহারা স্বাভাবিকই আছে । কোন বিকৃতি নাই ।
লেখকরা এমন ভাবে লেখে না !
কিন্তু নিহিনের চেহারা কেমন একটা মলিন ভাব ।
আর ওর চোখ দুটো কি বিষন্ন ! আর এই আবছা চাঁদের আলো ওর বিষন্নতা কে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ।
ওর এই বিষন্ন চেহারা দেখে আমার সব ভয় নিমিষের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল । ভয়ের জায়গায় কষ্ট হতে লাগল ।
নিহিনকে বললাম
-আমি কিন্তু কারো কথা শুনি নি । আমার মন যা বলেছে কেবল তাই শুনেছি ।
নিহিন এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল । তবে ওর এ কান্নাটা দঃখের না আনন্দর । নিহিন বলল
-জানো মন বলছিল যে তুমি সত্যিটা জানার পরও আমাকে ছেড়ে যাবে না ।
ওর পাশে গিয়ে বসলাম । ও বলল
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-বল ।
-আমাকে ভয় লাগছে না ?
আমি হাসলাম । বললাম
-এমন সুন্দর পেত্নীকে কি কেউ ভয় পায় ?
-কি বললা তুমি ? পেত্নী ? তোমার ঘার মটকে দিবো কিন্তু !
-ওহ সরি সরি ! পেত্নী না মহিলা ভুত । অথবা শাকচুন্নী ।
-অপু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি । আমি কিন্তু রাগ করে চলে যাবো ।
আমি হাসতে ওর হাতটা ধরলাম । বরাবরের মত ওর হাতটা বেশ ঠান্ডা । কিন্তু আজকে আমার কোন অস্বস্তি লাগল না । ওর হাত ধরে বললাম
তুমি আমার জীবনে সব থেকে সুন্দর পরী । তুমি যাই হও না কেন তোমাকেই ভালবাসি ।
নিহিন খুব খুশি হল ।
-অপু জানো আমি যদি বেঁচে থাকতাম তাহলে বাস্তবেও তোমার সাথে আমার এরকম রিলেশন হত! এই ভাবে তোমার সাথে প্রেম করতাম । লুকিয়ে দেখা করতাম ।
-তোমার কি মনে হচ্ছে এটা অবাস্তব !
নিহিনের মুখটা আবার মলিন হয়ে গেল । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা অবাস্তবই ।
তুমি আমাকে বাস্তবে দেখছো না । স্বপ্নে দেখছো । আসলে আমিই তোমাকে এই স্বপ্নটা দেখাচ্ছি । জানো অপু এই কয় বছর আমি খুব অশান্তির মধ্যে ছিলাম । কিন্তুর আজকের পর থেকে আমি শান্তিতে থাকবো ।
তোমার এই ভালবাসাটুকু আমার জন্য খুব দরকার ছিল । তুমি ভাল থেকো কেমন ! আর আমার কথা মনে রেখো ।
এই বলে নিহিন আমার হাতে ঐ ব্রেসলেটা বেঁধে দিল যেটা হুজুর খুলে ফেলেদিয়ে ছিল । আমি ওকে চলে যেতে দেখে বললাম
-কোথায় যাচ্ছ?
নিহিন বলে ডাক দিলাম কিন্তু ও আর ফিরে এল না । আর একবার ডাক দিতে যাবো ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
আসলেই চারিদিকে গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে আছে । কারেন্ট চলে গেছে । এতোক্ষন তাহলে সত্যি স্বপ্ন দেখছিলাম ।
কিন্তু এতো বাস্তব মনে হল । মোবাইলের আলো জ্বালালাম সময় দেখার জন্য ।
কিন্তু মোবাইলের আলো তে যা দেখলাম তা সত্যিই বিশ্বাস হল না । আমার বা হাতে নিহিনের ঐ ব্রেসলেট টা বাধা । যেটা ও আমাকে একটু আগে স্বপ্নের মধ্যে বেঁধে দিয়েছিল ।
সমাপ্ত
(খানিকটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।