আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ১ম পর্ব
আমি প্রতিদিন মেয়েটার জন্য বসে থাকতে লাগলাম । আগেতো সপ্তাহে একদিন কি দুদিন বসতাম কিন্তু মেয়েটাকে দেখার পর থেকে মাথার মধ্যে কেবল ঐ মেয়েটাই গুরপাক খেতে লাগলো । অফিস থেকে প্রতিদিনই একটু আগে আগে বের হয়ে চলে আসতাম লেক পাড়ে । মেয়েটা প্রতিদিন একই ভাবে আসতো ।
একই পথ দিয়ে ।
এটা একটু অবাক লাগতো ! মেয়েটা প্রতিদিন কোথায় যেত ! আর ঐ দিকে তো কোন বাড়ি ঘরও নাই ! তাহলে ?
যাক ! সেটা আমার দেখার বিষয় না ! আমার সব কিছু জুড়ে তখন মেয়েটা ! আমার আর কিছু দেখার সময় কোথায় ?
যখন আমাকে পার হয়ে চলে যেত আমাদের চোখাচোখি হত । মেয়েটার চোখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে থাকত ।
কি সেই চোখে দৃষ্টি !!
আমাকে যেন আরও একটু পাগল করে তুলতো !
আমি কেবল তাকিয়েই থাকতাম ! মনে হত যেন কোন ঘোরের মধ্যে আছি ।
এভাবেই নিহিনের সাথে আমার প্রথম দেখা । একেবারে যেন কোন স্বপ্ন দৃশ্য ।
শাওয়ার টা ছাড়তে যাবো ঠিক তখনই কলিং বেলটা বেজে উঠল । নিহিন তো রান্না ঘরে ।
ও খুলুক !
কিন্তু কলিংবেলটা বেজেই চলেছে ।
কেউ যেন খুলছে না ?
আশ্চার্য !
খুলছে না কেন ?
একবার জোরে চিত্কার করে বললাম
-নিহিন দরজাটা খুলো ।
কিন্তু কোন সারা শব্দ নাই ।
বাধ্য হয়ে আমাকেই বের হতে হল । ডায়নিং টেবিলের উপরে নিহিনের চিরকুট দেখতে পেলাম । এমন ভাবে রাখা যেন আমার চোখে পড়ে প্রথমেই !
নাহ !
এই মেয়েটা আবার চলে গেছে !
এই মেয়েটাকে নিয়ে কি করবো বুঝি না ! বলা নেই কওয়া নেই টুপ করে গায়েব হয়ে যাবে ।
অবশ্য নিহিনের এরকম চিরকুট রেখে গায়েব হওয়াটা আমার কারনেই হয়েছে ।
নিহিন আমার সাথে দেখা করে যখন চলে যেত, আমার দিকে তাকিয়ে বলত "আমি তাহলে যাই এখন" ।
আমার কেন জানি ওকে যেতে দিতে ইচ্ছা করত । আমি নিহিনকে যেতে অনুমুতি দিতাম না । এক সময় আমি অবাক হয়ে আবিস্কার করি আমি যেতে না বললে ও কিছুতেই যেতে পারে না । কেবল আমার দিকে তাকিয়ে বার বার বলত
-আমি এখন যাই !
আমি বলতাম
-না !
-যাই না ?
-না ! না ! না ! তুমি যাবে না !
নিহিন আমার দিকে কেবল তাকিয়েই থাকতো ! মুখে কেমন একটা হাসি লেগে থাকতো !
একদিন কি মনে হল ওকে যেতে দিলাম না ! রাত প্রায় ১০ টা পর্যন্ত ওকে আটকে রাখলাম !
নিহিন মুখ বাকিয়ে বলল
-এবার থেকে আর তোমার কাছ থেকে অনুমুতি নিবো না ! চুপ করে চলে যাবো !
তারপর থেকেই নিহিন এই কাজ করে ।
নিহিন নিশ্চই বুঝতে পেরেছে আজ আমি ওকে সহজে ছাড়ছি না !
আসলে আবহাওয়াই এমন !
আমি বাধরুমে ঢুকেছি আর ও চলে গেছে !
আমি চিরকুট টা দেখলাম ! নিহিন লিখেছে
তোমার মনে দুষ্টামি কাজ করছে আমি জানি ! ভুনা খিচুড়ি চুলায় আছে ! ঠিক আছে ? বিকেলে দেখা হবে !
মনে মনে হাসলাম কেবল !
পাগল একটা !
কলিংবেলটা আবার বেজে উঠল !
আরে বাবা আসছি !!
দরজা খুলে দেখলাম সুমন ! পাশে একটা আর একটা লোক ! হুজুর মত ! লম্বা দাড়িয়ালা !
সুমন বলল
-এতোক্ষন কই ছিলি?
-আরে গোছলে ছিলাম ! আয় ভিতরে আয় !
সুমন লোকটা কে নিয়ে বাসায় ঘরে ঢুকলো ! আমকে বলল
-ইনি আমার সম্পর্কে চাচা হয় ! আমাদের এলাকার ইমাম সাহেব ! তুই বলেছিলি না ভয় পাস ! কেমন ছায়া দেখিস তাই নিয়ে এলাম !
আমি একটু অপ্রস্তুত হলাম ।
সুমন ইমাম সাহেব কে কি বলেছে কে জানে ? এই যুগেও আমি রাতের বেলাতে ছায়া দেখে ভয় পাই একথা শুনলে মানুষ কি ভাববে কে জানে ?
ইমাম সাহেব বলল
-কি রকম ছায়া দেখো ? আর কখন দেখ?
-আসলে খুব যে ভয় পাই তা না !! রাতের বেলা প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে যায় ! বারান্দার চোখ গেলেই দেখি কোন একটা ছায়া ! যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
-ভয় লাগে ?
-একটু অস্বস্তি লাগে ! প্রথম প্রথম ভয় লাগতো খুব ! কিন্তু এখন মনে হয় ছায়াটা আমার কোন ক্ষতি করবে না ! এখন ভয়টা কম লাগে ?
-ছায়াই দেখ ? তুমি নিশ্চিত ?
-কি করে বলি ! ঘুম ভেঙ্গে দেখি তো ! সিওর কিছু বলাও যায় না !
-আচ্ছা !
ইমাম সাহেব সারা ঘর ঘুরে দেখলেন ! কি বুঝলেন কে জানে !
বললেন
-কিছু আছে মনে হচ্ছে ! যা হোক তুমি চিন্তা কর না ! আমি ঘর বন্ধ করে দিচ্ছি ! আর ছায়াটা দেখবা না ।
লোকটা ঘর বন্ধ করে দিলেন ! কি দোয়া পড়লেন আমি ঠিক জানি না ! আর যাওয়ার সময় আমাকে একটা তাবিজের মত দিয়ে গেলেন ! বললেন এটা পরে থাকতে !
তাহলে আর কোন চিন্তা থাকবে না !
সুমনরা চলে গেল একটু পরেই ! আমি বসে রইলাম ! এখন কি করি !
নিহিনটা এমন করে চলে যায় কেন ?
একটুও কাছে থাকলে কি হয় !
এখন সারাটা দিন আমাকে থাকতে হবে ! বসে বসে নিহিনের রান্না করা খিচুরী খেলাম !
ঠিক তখনই আমার মনে একটা চিন্তা কাজ করলো !
আচ্ছা আমি বাধরুমে ঢুকেছি খুব বেশিক্ষন হবে না ! এই সময়ের মধ্যে নিহিন রান্না করলো কিভাবে !
এতো জলদি রান্না কি সম্ভাব নাকি ?
কিন্তু আমি তো নিহিনের রান্না করা খিচুরীই খাচ্ছি !!
নিহিনকে একটা ফোন দেব তারও উপায় নাই ! নিহিন ফোন ব্যবহার করে না ! আশ্চার্য !
এই যুগেও কেউ আবার মোবাইল ব্যবহার করে না এটা ভাবতেই খানিকটা অবাক লাগে !
আসলে আমার যখন নিহিনের সাথে যখন কথা বলতে ইচ্ছা হয় অথবা যখন দেখা করতে ইচ্ছা হয় নিহিন কেমন করে জানি টের পেয়ে যায় ! কিছুক্ষনের মধ্যেই ও হাজির হয়ে যেত !! এই জন্য সেল ফোনের খুব একট প্রয়োজন অনুভব করি নি !
তবে আমি প্রায়ই বলতাম একটা ফোন ব্যবহার করার জন্য ! নিহিন হেসে বলত
-কি দরকার ?
-কেন ? রাতে তোমার সাথে কথা বলবো ! যখন তোমার সাথে দেখা করটে ইচ্ছা হবে তোমাকে বলবো !
-কোন দরকার নাই ! বুঝছো !
তারপর আমার আর একটু কাছে এসে বলত
-তোমার মনের সাথে আমার মনের একটা সংযোগ আছে জানো ? তোমার যখন মন চাইবে আমি টের পেয়ে যাবো ! বুঝেছ ??
আমি চুপ করে ওকে দেখতাম !
মেয়েটা আসলেই ঠিক বলেছিল ! নিহিন আসলেই কেমন করে জানি সব টের পেয়ে যেত ! আমার মনের কথা যেন সব বুঝে ফেলতো !!
নিহিনকে আমি আবার দেখি একেবারে আমাদের বাড়ির সামনে । কিছুর জন্য যেন অপেক্ষা করছে ! আমি কেবল অফিস থেকে ফিরছি ! নিহিনকে দেখে আমি একবার জমে গেলাম ।
চলবে...........। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।