আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিহিন, আমার সম্ভাব্য গার্লফ্রেন্ড !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -কে ? খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললাম । ঘড়িতে প্রায় দুটো । এতো রাতে কেউ কাউকে ফোন দেয় ?? তাও আবার অপরিচিত নম্বরে ! অবশ্য আমার পরিচিত কেউ এতো রাতে ফোনও দিবে না । সবাইকে খুব কড়া করে নিষেধ করা আছে ! রাতে ফোন দেওয়া যাবে না । কিন্তু মাঝে মাঝে রাতের বেলা ফোন চলেই আসে ।

তখন বিরক্তির সীমা থাকে না । যেমন এখন আমি বিরক্ত । আবার বললাম -কে বলছেন ? প্রথমে কিছুক্ষন কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না । তারপর হঠাত্‍ ই বলে উঠল -বাব্বাহ কোন হ্যালোটেলোর বালাই নাই । একেবারে কে বলছেন ।

মেয়ে কণ্ঠ ! এতো রাতে ! তাও আবার আমার কাছে ? -আপনি কে বলছেন বলবেন প্লিজ ? -না বলব না । বলেই মেয়েটা হাসতে লাগল । আমি খানিকটা বিরক্ত হলাম । ঘুমানোর সময় বিরক্ত করলে মেজাজটা ঠিক রাখা দুষ্কর হয়ে ওঠে । -আপনি কাকে চাচ্ছেন ? -আমি আপনাকে চাচ্ছি ? -কে আপনি ? -আমি ? আমি একজন মানুষ ।

-সেটাতো বুঝতেই পারছি । রাতবিরাতে কোন পেত্নী নিশ্চই আমার কাছে ফোন দিবে না । নাম বলুন । আর কেন ফোন দিয়েছেন বলুন । -কেন যদি না বলি ? -দেখেন ফ্যাঁদা পেচাল পাড়তে ভাল লাগছে না ।

ঘুমানোর সময় কেউ ফোন দিলে খুব বিরক্ত হই । নাম বলবেন না ফোন রেখে দিবো । -আচ্ছা আচ্ছা ফোন রাখবেন না প্লিজ । নাম বলছি । যদি মনে থাকে আমায় নাম ।

আমি নিহিন ! নিহিন ? আমি খানিকটা অবাক হলাম । নিহিন ফোন করেছে ? আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । এতোরাতে নিহিনের ফোন পেয়ে সত্যি খানিকটা অবাক হলাম ! নিহিনের সাথে পরিচয় শামসের মাধ্যমে । সেদিন টিউশনীতে গিয়েছি । শামসদের বাসার সামনেই শামসের সাথে দেখা হয়ে গেল ।

শামস আমার স্টুডেন্টের নাম । শামস আমাকে দেখে লম্বা একটা সালাম দিল । -নিচে কি কর ? -কিছু না স্যার আইসক্রিম খেতে আসছি । -তোমার আইসক্রিম খাওয়া মানা । টনসিল বাড়বে ! -কিছু হবে না স্যার ! মাঝে মধ্যে একদুটা খাওয়া যায় ।

-বলেছে তোমাকে ? তোমার মা জানে ? শামস লাফ মেরে উঠল । বলল -স্যাররররর !! আম্মুকে বইলেন না । কইলে আমারে পিটাবেনে ! আর কিছু বললাম না । আসলে আইসক্রিমের কথা শুনে আমার নিজেও খানিকটা লোভ হল খাওয়ার জন্য । সামনের ডিপার্টমেন্টাল দোকানটাতে নিয়ে গেলাম ।

তিনটা চকবার কেবল হাতে নিয়েছি তখন কেউ যেন পেছনে এসে দাড়াল আমাদের । খুব মিষ্টি করে বলল -শামসস ! আমরা দুজনেই ঘুরে দাড়ালাম । মোটামুটি বুকে ধাক্কা লাগানোর মত একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে । পরনে কালো জিনস আর কালো টিশার্ট । গলায় ধবধবে সাদা রংয়ের একটা স্কার্ফ ।

এই স্কার্ফটার জন্যই মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে । মনে হলে টুপ করে মেয়েটার প্রেমে পরে যাই ! কিন্তু কি লাভ ! আমি প্রেমে পড়লে তো আর চলবে না । মেয়েটার ও পরতে হবে । আর ওর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই যে আমার ক্ষ্যাত মার্কা একজনের প্রেমে পরবে ! শামস বলল -নিহিন আপুপুপু ! আপনি এইখানে ? এইতো বলে নিহিন হাসল । ভূবন ভূলানো হাসি ।

আমারতো হাসি দেখে খবর ঘোলা হয়ে গেল । নিহিন বলল -তুমি কি কর ? -আইসক্রিম কিনতে আসছি । -ও তাই ! আমিও আইসক্রিম খেতেই আসছি । পকেট থেকে একটা ১০০০ টাকার নোটা দোকানদারক কে এগিয়ে বলল -মামা একটা চকবার দেন । দোকানদার বলল -আপু এতো বড় নোটতো ভাংতি হবে না ।

একটু আগে মালিক সব ক্যাস নিয়ে গেছে । বেটা মিথ্যা কথা বলছে । আমি নিজেই ৫০০ টাকার নোট ভাঙ্গালাম । আসলে বেটা একটা আইসক্রিমের বদলে এতো বড় নোট ভাঙ্গিয়ে দিতে চাচ্ছে না । নিহিন আবার বলল -দেখেন মামা একটু ! -না আপু সত্যি হবে না ।

নিহিন খানিকটা হতাশ হল । যাওয়ার সময় বলল -আচ্ছা শামস ঠিক আছে । থাকো কেমন ! কি আমার পকেটে টাকা থাকতে সুন্দর একটা মেয়ে আইসক্রিম খেতে পারবে না ? তা তো হবে না । বারতি একটা আইসক্রিম কিনেছিলাম পিচ্চি টার জন্য । শামসের হাতে আইসক্রিমটা দিয়ে বললাম -দিয়ে এসো ।

শামসও খানিকটা আচ করতে পেরেছিল যে আমি এমন কিছু একটা করবো । সে আইসক্রিমটা নিয়ে জোরে ডাক দিল -নিহিন আপু !! নিহিন দাড়াল । -আপু এই নিন । -আরে না না । দরকার নাই ।

তুমি খাও । নিহিন খুব বেশি দুরে যায় নি । তাই ওদের কথা আমি স্পষ্টই শুনতে পারছিলাম । শামস আবার বলল -না আপু নেন । আমারটা আছে ।

এইটা স্যার আপনাকে দিয়েছে । -স্যার ?? -হুম । ঐ যে ! বলে শামস আমাকে দেখালো । আমি ভেবেছিলাম নিহিন আমার কাছে আসবে । আইসক্রিমের জন্য আমাকে একটা ধন্যবাদ দিবে ।

একটু হাসি দিবে ! জীবনটা ধন্য করবে ! কিন্তু বজ্জাত মেয়েটা এমন কিছুই করলো না । কেবল দুর থেকেই একটু হাসল আমার দিকে তাকিয়ে ! তারপর হাটতে হাটতে চলে গেল । এমনকি আর পিছন ফিরে আর একবার তাকালও না । মনে মনে বললাম ২২টা টাকাই গেল জলে ! আচ্ছা কাছে এসে অন্তত একটা ধন্যবাদও তো দেওয়া যেত নাকি ! আমার নাম জিজ্ঞেস করা যেত ! আর কিছু না হোক মিষ্টি করে একটু হাসা তো যেত ! কিন্তু ফাজিল মেয়েটা এমন কিছুই করলো না । আমি শামসকে নিয়ে ওদের বাড়ির মধ্য ঢুকে গেলাম ।

শামসের কাছে মেয়েটা সম্মন্ধ খোজ খবর নিলাম কিছু । শামস যা বলল তার সারমর্ম হল নিহিন এই গোলীর শেষ মাথায় থাকে । প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়ে । এইটুকু শোনার পর আমি চুপসে গেলাম । এই মেয়ে আমার দ্বারা পটবে না ।

২২টা সত্যিই জলে গেল । -কি হল ?? চুপ করে গেলেন যে?? আমি হাসলাম । বললাম -মানে গত দিনের কথা মনে করছিলাম । -ও । আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? - হ্যা ।

করুন ! -আচ্ছা ঐ দিন কি মনে করে আামকে আইসক্রিমটা কিনে দিলেন ? এই প্রশ্নটার উত্তর আমি চট করে দিতে পারলাম না । বললাম -আসলে আমি ঠিক জানি না । আপনি যখন টাকা ভাংগাতে না পেরে হতাস হলেন , আপনার হতাস চেহারা দেখে আমার কেমন যেন লাগল । মনে হল আমার পকেটে টাকা থাকতে একটা মেয়ে আইসক্রিম খেতে পারবে না । টা তো হবে না !! -আচ্ছা ?? নিহিন হাসলো ।

আবার বলল -আর কোন কারন? -হুম আর একটা কারন অবশ্য আছে ! - কি সেটা ?? -মেয়েরা আইসক্রিম পছন্দ করে । আর .... -আর ?? -যারা আইসক্রিম খাওয়ায় তাদের কেউ পছন্দ করে ! -তাই না ?? বলেছে আপনাকে !!! তার মানে দাড়াল , আমি আপনাকে পছন্দ করেছি । -প্রমান তো হাতের কাছেই । আমাকে তাহলে ফোন কেন দিয়েছেন? আপনি নিজে আমার নাম্বার জোগার করেছেন । তারপর ফোন দিয়েছেন ! তারমানে আমি আমি একটু হলেও আপনার মনকে নাড়া দিয়েছি ! তা না হলে ফোন তো দিতে না !! -জি না আপনার লজিক কাজে দিল না ।

আমি আপনাকে ফোন দিয়েছি ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ! ঐদিন আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি । আমি খানিকটা হতাস হলাম । কত কিছু ভেবে ফেলেছিলাম । এভাবেই চলতে থাকে কথা মালা । অনেক রাত পর্যন্ত কথা চলতে থাকে ।

ফোন রাখার পর মনে হল নিহিন পটলেও পটতে পারে । একটু সম্ভাবনা কিন্তু আছে !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।