..........:-(
ছোট বেলার বৈশাখ ছিল মেলা থেকে রান্না বাটি খেলার হাড়ি পাতিল কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ । আম্মু মোটেও মেলায় যেতে দিত না । তাই বেশির ভাগ সময়ই আমাদের এক হিন্দু আন্টি উনি কিনে দিত , উনাকে আমি ডাকতাম বৌদিচাচিমনি বলে । ভাবতাম বৌদি বুঝি উনার নাম ।
মেলা থেকে ছোট্ট লাল ঢেঁকি , মাটির কলস এসব কেনা হত ।
একবার বৈশাখে যথারীতি সকাল থেকে বিরতি হীন ভাবে কান্না কাটির ফলে বাবা অতিষ্ঠ হয়ে রাজি হল । কিন্তু তখন বৈশাখ অত মহাসমারোহে হত না । মেলা একটা হয়েছিল কিন্তু বিকালের আগেই শেষ । খুব মন খারাপ হয়েছিল ।
কলেজে অবশ্য বৈশাখের অনুষ্ঠান হত ।
তবুও আমার বৈশাখ বলতে আমি বুঝি ক্যাম্পাসের বৈশাখ উদযাপন । প্রথম বর্ষে অবশ্য বৈশাখের মহাত্ম বুঝতে পারিনি । আর আমি এমনিই সবসময় ভীর এড়িয়ে চলতাম । কিন্তু পরে সবার গল্প শুনে বুঝলাম ঠিক হয়নি । দ্বিতীয় বর্ষে আর মিস করিনি ।
যাক পুরাতন স্মৃতি , যাক ভুলে- যাওয়া গীতি
অশ্রু বাষ্প সুদূরে মিলাক
সত্যি কথা হল দ্বিতীয় বর্ষের বৈশাখ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বৈশাখ । এটা অবশ্য এখনকার উপলব্ধি । এমন কোন যায়গা ছিল না যে আমাদের পদ ধুলি পড়েনি । চারুকলা , কলাভবন , রমনা, আই ই আর , বিজনেস ফ্যাকাল্টি , কার্জন হল, বাংলা একাডেমী কোন যায়গা মিস নাই । এখন অবশ্য ভাবি আমরা এত হেঁটেছিলাম কিভাবে !
সেবার আমি প্রথম পুতুল নাচ দেখি ।
আমি অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম । বেহুলা লখিন্দর , আরও অনেক গ্রামীণ লোকগাথা কি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলল ।
নাগরদোলা চড়া , ঘোড়ার গাড়ি চড়ার জন্য শাড়ি পড়া বাদ দিয়েছিলাম । তখন আরও একটা ব্যাপার মনে হত । মনে হত সামনে আরও কত বৈশাখ আছে ।
তখন পড়ব । আফসোস সেদিন আর হয়নি । আমাদের একটা ব্যাপার ছিল , চার জন যেতে হবে , কোথাও গেলে, নইলে না । পুজা , ফাল্গুন , ফ্রেন্ডশিপ ডে অনেক কিছুই করা হয়েছে , কিন্তু বৈশাখে আর যাওয়া হয়নি । এটা আমাদের অনেক বড় একটা দুঃখের ব্যাপার ।
ফ্রেন্ড দের সাথে না হলেও আরও একবার বৈশাখে অনেক মজা হয়েছিল । সেবার করেছিলাম আমাদের হলের রুমমেট দের সাথে । হলে আমরা সিনিয়র জুনিয়র সবাই ছিলাম ফ্রেন্ডের মত । আসলে হলে না থাকলে বলে বোঝানো যাবে না , হলে কত মজা হয় । শাড়ি চুড়ি কেনা নিয়ে সবাই মিলে সেকি গবেষণা , আগের দিন সবাই মিলে মেহদী দেয়া , অনেকটা ছিল ঈদের মতই ।
রেডি হওয়া নিয়েও কত মজা হত । আমরা সকাল ৬ টায় উঠে পড়লাম , তারাতারি যাব বলে । কিন্তু কেউই তেমন সাজুগুজু না করলেও ১০ টার আগে বের হতে পারলাম না । কারো চুল বাধা ঠিক হচ্ছে না , কেউ গয়না গাটি ঠিক করছে , সে এক মহা ব্যাস্ততা ।
হলে বৈশাখে ফিস্ট হত ।
ফিস্ট মিস করতে চাইতাম না । ফিস্ট এর জন্য টোকেন কাটা , খাবার দেবার সময় সবাই দল বেধে টোকেন নিয়ে খাবার নিতে যাওয়া , সব রুম মেটরা একসাথে খাওয়া এসবের মধ্যে ছিল অন্য রকম আনন্দ ।
এর পর আর বৈশাখে যাওয়া হয়নি এক্সামের জন্য ।
মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা
অগ্নি স্নানে সুচি হোক ধরা
পহেলা বৈশাখে আক্ষরিক অর্থেই অগ্নি স্নান হত । সারাদিন রোদে পুড়ে আর ভীরে মনে হত আর জীবনেও যাব না ।
তবুও এই রোদ আর ভীরে মনে হয় না কারো কোন উৎসাহ আর আগ্রহের কমতি হয় । সার্বজনীন হয়ে ওঠা উৎসবে সবাই যেন ছোট বেলাটাই ফিরে পায় । তবে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন ভীর আর জ্যামের কথা মনে রেখে সন্ধ্যার আগে বাসায় আসা উচিৎ ।
জীবন জুড়ে লাগুক পরশ
ভুবন ব্যেপে জাগুক হরষ
সবাইকে শুভ নববর্ষ ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।