পৃথক রেলওয়ে মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর থেকেই রেলওয়েতে অবাস্তবায়িত থাকা প্রকল্পগুলোর আলোকে প্রথমবারের মতো এক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকায় ৮৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়ে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি মহাপরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। দেশে সব জেলা-উপজেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পরবর্তীতে এ মহাপরিকল্পনার কলেবর বাড়িয়ে ২৩১টি প্রকল্প এবং খরচ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বিভিন্ন দাতা সং¯’া, ভারতীয় ঋণ চুক্তি এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে রেলের মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এ মহাপরিকল্পনাটিকে ৪টি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুসারে ভাগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০১৪-’১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকারের নেয়া ৩২টি চরমান প্রকল্প শেষ করা হবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে র?েয়ছে টঙ্গির কাছে ধীরাশ্রমে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গি র“টে ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন নির্মাণ, দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ, খুলনা থেকে মংলা, ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালাচর পর্যন্ত এবং দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার হয়ে ঘুনদুম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ। তাছাড়া এসময়ের মধ্যে ২০ সেট ডিজেল ও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ ইউনিট, ৭০টি মিটারগেজট লোকোমোটিভ এবং ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ কেনা। নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং লোকোমোটিভ কেনার জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, রেলের মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০১৪-’১৫ থেকে ২০১৯-’২০ অর্থবছরের সময়ের মধ্যে ৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে জাজিরা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, গোয়ালন্দ থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অন্তর্ভুক্ত রেলপথ নির্মাণ, বিভিন্ন ¯’ানে আঞ্চলিক রেলসেতু সংস্কার ও প্রয়োজন বিবেচনায় নতুন সেতু নির্মাণ এবং ৩০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ কেনা। এসময়ের সম্ভাব্য প্রকল্প খরচ ধা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০১৯-’২০ থেকে ২০২৪-’২৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে রেল মহাপরিকল্পনায় ¯’ান পেয়েছে সম্ভাব্য ৩০টি প্রকল্প। এগুলো হ”েছ ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত ডাবল লাইনসহ দেশের বিভিন্ন আন্তঃজেলা র“টে ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
আর ২০২৪-’২৫ থেকে ২০২৯-’৩০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বিদ্যমান রেলপথের আমূল সংস্কার প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। রেলের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বিশেষ কিছু প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণ, যেসব জেলা ও উপজেলায় রেলপথ নেই সেখানে রেলপথ নেটওয়ার্ক তৈরি করা, মাগুরা-জাজিরা পদ্মা সেতুতে অন্তর্ভুক্ত রেলপথ নির্মাণ এবং ঢাকায় মেট্রো রেল ব্যব¯’া পরিচালনা। এ বিশেষ পরিকল্পনার জন্য সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
তবে রেল উন্নয়নের মহাপরিকল্পনাটি এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হবে সে ব্যাপারে চলছে চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ। ২০১২-’১৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সোয়া লাখ কোটি টাকা খরচে রেলওয়ে মহাপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। ওই বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরো জানান, রেলের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এদেশের রেলের চেহারা আমূল বদলে যাবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে আরো গতিশীল করতে সরকার ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে যা”েছ।
এ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ৪টি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে রেলের ২৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার রূপরেখা তৈরি করা হ”েছ। ইতিমধ্যে গত ৩ বছরে রেলওয়ের সম্প্রসারণ এবং সংস্কার সংক্রান্ত ৩২টি প্রকল্পকে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে হিসেবে অন্তর্ভ্ক্তু করে বাস্তবায়ন শুর“ হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।