আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোটি হৃদয়স্পন্দনে জাগরুক জিয়া

অনুতাপ নিপীড়িত ব্যাথিত জনের শক্তিধরে অস্ত্রধারী শত সিপাহের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন। নিজ জীবনে চর্চায়-আচরণে সততা, স্বচ্ছতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছেন। সাংবিধানিক চেতনার অনুবর্তী, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং মতপ্রকাশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ দেশে প্রকৃত নারী জাগরণ সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি আমাদের বাংলা ভাষা এবং বাংলাদশের মানুষের স্বাধীন পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ চালু করেছিলেন।

সর্বোপরি রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ধৈর্য ও সহনশীলতার যে নজির স্থাপন করেছিলেন বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে তা অকল্পনীয়। সত্যি বলতে কি, যে স্বপ্ন আকাক্সক্ষা নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে একটি স্বাধীন দেশ অর্জিত হয়েছিল সেই স্বপ্ন পূরণের পথ প্রশস্থ করেছিলেন জিয়াউর রহমান তার মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার দ্বারা। যারা প্রকৃত অর্থে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায় না অথবা স্বাধীন বাংলাদেশ যারা প্রতিপক্ষ বলে বিবেচনা করে তাদের চক্রান্তেই হত্যা করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন বহনকারী প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতের মধ্যদিয়ে প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাধীন আত্মনির্ভরশীল জাতির মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা স্তিমিত হয়ে যায়। তার জানাযায় লাখমানুষ সমবেত হয়ে প্রমাণ করেছে তিনি অমর।

তাই আজও সশ্রদ্ধ হৃদয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাত দিবসে দেশপ্রেমিক জনগণ বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়, গভীর মমতায় দিনটি স্মরণ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার রূহের মাগফেরাত কামনা করে। এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম নেই বরং এ বছর দিবসটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজকের বাংলাদেশে যে কোনো দেশপ্রেমিককে যদি প্রশ্ন করা হয় দেশের প্রধান সঙ্কট কি? নির্দ্বিধায় জবাব পাওয়া যাবে, দেশপ্রেমের অভাব। কেন এই সাধারণ ধারণার জন্ম হয়েছে তার উত্তর খুঁজতে গেলে বর্তমান শাসন প্রক্রিয়াতেই ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে প্রতিবেশী তার স্বার্থ আদায় করে নিয়েছে, বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু পায়নি।

বাংলাদেশের ন্যায্য পানিরহিস্যা আদায় করা দূরে থাক, একথা বলারও সাহস নেই। সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীবাহিনীর গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হচ্ছে, দেখার কেউ নেই। অথচ দেশের অভ্যন্তরে দেশপ্রেমিক তৌহিদবাদী জনগণকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে মোকাবেলায় নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে এর পক্ষে সাফাই গাওয়া হচ্ছে।

নাগরিকদের বিভাজন প্রক্রিয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সাংবিধানিক, সাংঘর্ষিকতা, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গোটা জাতি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার চর্চিত আদর্শই জনগণের হৃদয়ে নতুন আবেদন সৃষ্টি করেছে এবং তার সঠিকতা প্রমাণিত হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডার এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া গোটা জাতিকে দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর বিবেচনায় ঐক্যবদ্ধ করার সর্বাত্মক প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন। দেশ গঠনে গোটা জাতিকে এক সমীকরণে আনার চেষ্টা করেছিলেন।

দেশের উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে গোটা জনগণকে এক ব্যানারে সুসংহতকরণের কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সংকীর্ণ দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রেখেই তিনি সকলকে সমবেত করার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাচিত কৌশল অনুসরণ করেছিলেন। সকল কূটনৈতিক বাস্তবতায় কার্যত বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে এক বিশেষ মর্যাদায় উঠিয়ে এনেছিলেন। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার বিশেষ বিবেচনার মধ্যে থেকেই কূটনৈতিক উৎকর্ষতার নিদর্শন হিসেবে সার্কের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৭৪’র পর গ্যারান্টিক্লোজ বিহীন পানি চুক্তির পরেও তিনি বাংলাদেশের ন্যায্য পানির দাবিকে আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

জ্ঞাত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতির অস্তিত্ব তুলে ধরতে যে আপসহীন লড়াই তিনি করে গেছেন তার কারণেই তিনি জনগণের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবেই অনুভব করেছিলেন, রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি প্রগতির মূলে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তার আমলেই বাকশালের মাধ্যমে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ পুনরায় আত্মপ্রকাশ করেছিল। তিনি দেশের প্রতি কমিটমেন্টকে বিবেচনায় নিয়েই প্রথমে জোট ও পরে দল গঠন করেছিলেন। তফসিলি ফেডারেশন থেকে শুরু করে যারাই তার আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তিনি তাদেরকেই বুকে টেনি নিয়েছেন।

যারা পথ চলতে খানিকটা একমত রয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। পরমতসহিষ্ণুতার যে নজির তিনি স্থাপন করেছেন তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতেও বিরল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রতিবাদকে তিনি স্বৈরাচারী ভূমিকায় নয়, এমনকি এখন যারা নিজেদের গণতন্ত্রী বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলছেন অথচ বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না এবং তাদের পূর্ববর্তীরাও যেভাবে বিরোধিতাকে স্বৈরতান্ত্রিকতায় মোকাবেলা করেছেন তার বিপরীতে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক এবং সহনশীল আচরণ করেছেন। এর দ্বিতীয় উদাহরণ পাওয়া ভার। তিনি কোন দল ভেঙে অথবা কোন তলবী সভা করে নয়, কাউন্সিল কনভেনশন করে অথবা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেননি।

স্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, তিনি কোন দলের সদস্যও ছিলেন না। ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের অবিচার, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের বিপরীতেই তিনি রাজনৈতিক মতৈক্যের প্লাটফর্ম গঠন করেছিলেন। প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার ধারা প্রবর্তন করেছিলেন। একজন জিয়া কেবলই যে নিজের মেধা, মনন, নিষ্ঠা, অভিজ্ঞতা দিয়ে উঠে এসেছিলেন সেটাই ছিল তার যোগ্যতার সবচেয় বড় স্বাক্ষর। তিনি জনগণের মনের ভাষা তার চেতনায় রূপান্তরিত করেছিলেন।

আমাদের মত দেশে জনগণকে সাহসী করে না তুলতে পারলে দেশরক্ষা কার্যতই যে কঠিন সেটা অনুভব করেই একদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে সংবাদপত্রের প্রকাশনা এবং সাংবাদিকদের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। সাংবাদিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা ছাড়াও সংবাদপত্র যাতে স্থায়ী ভিতের উপর দাঁড়াতে পারে তার পথ তিনি উন্মুক্ত করেছিলেন। এখনও বাংলাদেশে কার্যত যতটুকু গণতন্ত্র রয়েছে এবং নানা চক্রান্ত সত্ত্বেও দেশকে যে সংবাদপত্রবিহীন করা যাচ্ছে না তার মূলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। বাকশালের মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রিত মাত্র চারটি কাগজ রেখে বেসরকারীভাবে স্বাধীন সংবাদপত্র প্রকাশে যে সরকারী বাধা দেয়া হয়েছিল তার বিপরীতে তিনি সংবাদপত্র চালুর ব্যবস্থা করে যতটুকু অগ্রগতি করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় বিএনপির বর্তমান চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে মিডিয়ার উপর থেকে সকল ধরনের সেন্সরশিপ তুলে নেয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অধিকতর নিশ্চিত হয়েছিল। সে বিবেচনায় বলা যায়, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক বান্ধব হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

আজকের বাংলাদেশে যখন বিরোধী মতপ্রকাশের ফলে মাহমুদুর রহমানের মতো একজন সৎ, নির্ভীক, শিক্ষিত সম্পাদক সরকারী নিগ্রহ, নির্যাতনের শিকারে পরিণত হন তখন অবশ্যই নতুন করে প্রমাণ করার দরকার পড়ে না যে জিয়া বিএনপির এবং তাদের চর্চিত আদর্শ প্রকৃতই কতটা দেশানুবর্তী ছিল। সাংবিধানিক চেতনায় গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের যে স্বীকৃতি রয়েছে কার্যত সে বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট জিয়াই তার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেই জিয়াকেই কলঙ্কিত করার অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুসারী হিসেবে জিয়াউর রহমান সিপাহী জনতার মিলিত অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসীন হয়ে যতগুলো মৌলিক সংস্কার করেছেন বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তার যে কোন একটি ইতিহাসে অমরত্ব লাভের জন্য যথেষ্ট। নানামুখী চক্রান্ত এবং বৈরী বাস্তবতায় জিয়ার ভাগ্যে তা জোটেনি।

তবু একথা বলা যায়, জনগণের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের মূল ধারাকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে পারা তার শ্রেষ্ঠ কাজ। আজও বাংলাদেশের মানুষ এ জন্যই তাকে তাদের অধিক প্রিয় বলে মনে করে। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যখন সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছে তখন তারা জনগণের আস্থা হারিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াকে জনগণের আরও কাছাকাছি মনে হয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার বিপরীতেই প্রেসিডেন্ট জিয়ার সফলতা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছে বিধায় একথা বলা যাবে, স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে তিনিই মূলত জননন্দিত নেতা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

নির্মোহ বিশ্লেষণে এটা বলা যায়, আমাদের মত দেশগুলোতে ক্ষমতাই যখন জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণ বলে বিবেচিত হচ্ছে তখন ক্ষমতাই জিয়াউর রহমানকে যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল তার মূলে রয়েছে তার আদর্শিকতা। আজকের বাস্তবতায় ১/১১ পরবর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হেয়প্রতিপন্ন করার যে অপকৌশল চলছে তার মূল কারণ হচ্ছে, জিয়ার দেশপ্রেম। কার্যত বর্তমান সময়ে এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যখন তৌহিদবাদী জনতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া। তিনি হয়তো প্রাণে বেঁচে নেই। তবে কোটি হৃদয়ের স্পন্দনে তিনি জাগরুক।

আজকের এই দিনে তার রূহের মাগফেরাত ও তার নীতি আদর্শের বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ দেশের কামনাই করছে দেশপ্রেমিক জনগণ। লেখক : আবদুল আউয়াল ঠাকুর / সাংবাদিক Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.