যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের চেষ্টায় ঢালা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর তারই অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বেশকিছু কার্যক্রম। যেমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অথচ রক্ষণশীল এমন কিছু পত্রিকায় খুবই কৌশলে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। পশ্চিমা কিছু তথাকথিত সংগঠন কর্মী ও আইনজীবীও প্রশ্ন তুলছেন বিচারের জন্য তৈরি আইনানুগ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে। এমনকি নিয়ম ভঙ্গ করে বিদেশী আইনজীবী চিঠি লিখছেন ট্রাইব্যুনালকে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
অন্যদিকে দেশের ভেতর যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে গাড়ি মার্চ করাচ্ছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। এসব জনসভাতে যুদ্ধাপরাধীদের অনুসারীরা যোগ দেবার সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে। মুক্তির দাবি করা হচ্ছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের। দেশ ও দেশের বাইরের এ তৎপরতা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছে দেশের সচেতন মহল এবং এসব কাজের ভেতর দিয়ে এটা স্পষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের নানামুখী অপপ্রচারে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করছে জামায়াতে ইসলামী। অপপ্রচার চালাতে বেছে নেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে। মিডিয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্ব জনমত ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াতের প্রায় পুরো সহায়সম্পত্তি খরচ করা হচ্ছে। দি ইকোনমিস্ট ও দি নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য প্রচার করানো হচ্ছে।
উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখা। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাতেই পরিকল্পিতভাবে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে গ্রেফতারকৃত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনী লড়াইয়ে নামতে এক ব্রিটিশ আইনজীবীকে ভাড়ায় আনা হয়েছিল। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের অংশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীর মতো বাংলাদেশের একটি বড় ইসলামিক দলের ৫ শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করার পাঁয়তারা চলছে।
প্রায় ৪০ বছর আগের অপরাধের তদন্তও একতরফাভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মাওলানা সাঈদীর পৰে এক ব্রিটিশ আইনজীবী আইনী লড়াইয়ে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দি ইকোনমিস্ট পত্রিকায় আভাস দেয়া হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশের একমাত্র বড় ইসলামিক দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসব নিছক অপপ্রচার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াতে ইসলামী কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করতে সারাবিশ্বে অপপ্রচার চালানো জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম মূল এজেন্ডা। এ খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে জামায়াত।
মূলত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রাখতেই এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববাসীকে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করাতে নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তারই অংশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতারকৃত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পৰে আইনী লড়াইয়ে নামতে ব্রিটিশ আইনজীবী কেডম্যানকে আনা হয়েছিল। ওই আইনজীবীকে জামায়াত মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ঢাকায় এনেছিল। জামায়াতে ইসলামী আগ থেকেই জানত, ব্রিটিশ আইনীজীবী কোনক্রমেই বাংলাদেশের কোন আদালতে আইনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিদেশী কোন আইনজীবীকে বাংলাদেশের কোন আদালতে আইনী লড়াই করতে হলে কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবশ্যই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এৰেত্রে অত্যন্ত কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে ট্রাইবু্যনাল গঠন করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের।
কিন্তু জামায়াত এ ট্রাইব্যুনলকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হিসেবে প্রচার করে কৌশলী অবস্থান নেয়।
জামায়াতের তরফ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ট্রাইবু্যনালে বিদেশী আইনজীবী থাকতে পারে। বিদেশী আইনজীবীকে কোন দেশের অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে আইনী লড়াই করতে হলে নিয়মকানুন মানতে হয়। জামায়াত তা প্রচার করেনি। অপপ্রচার চালাতে সুবিধা হওয়ার কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের পৰে আইনী লড়াইয়ে নামাতে বিদেশী আইনীজীবীকে ভাড়ায় আনে, যাতে বিদেশী আইনজীবী আইনী লড়াইয়ে অংশ নিতে না পারলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত অপপ্রচার চালাতে সুবিধা হয়। এমনকি ১৯৭৩ সালের আইন আন্তর্জাতিক মানের নয় বলেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গঠিত একটি বিতর্কিত ইসলামিক দল। স্বাধীনতার পর থেকেই এ দল নিজেদের পিঠ বাঁচাতে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বের অনেক শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জঙ্গী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের একাধিক পরাক্রমশালী দেশের অন্তত শীর্ষ ৫টি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জামায়াত ও ছাত্রশিবির জঙ্গী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর গ্রেফতারকৃত আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোলস্না ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হত্যা, লুটপাট, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।