সমাজ থেকে কল্পিত দ্বন্দগুলো দূর হোক। দেশের বৃহত্তর দুই রাজনৈতিক দলের দাবিকৃত অহিংস রাজনৈতিক কার্যকলাপের ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক সহিংসতা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধান দুই জোটের প্রধান দুই নেতার বক্তৃতার দাবী অনুযায়ী তাদের সমস্ত কর্মকান্ড অহিংস কিন্তু কার্যকলাপ অবলোকন করলে দেখা যায় সবই সহিংস, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি জিঘাংসিত। বিগত দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতার পরিক্রমায় তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী খলেদা দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন বা জনগণ তাদেরকে সেই দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেছেন বা দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের ক্ষমতার সকল মেয়াদকালেই দেশ পরিচালনায় তাঁরা হয়েছেন চরম বিতর্কিত কারণ দেশ পরিচালনায় তাদের ভূমিকা ছিল অতর্কিত।
জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্খিত নেতা নির্বাচন করতে পেরেছে কিন্তু তাদের প্রাপ্তি ছিল চরম অনাকাঙ্খিত। একজন পিতার মৃত্যুর কারণে অন্যজন স্বামীর মৃত্যুর কারণে পূনর্বাসিত হয়ে দলীয় প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন অত:পর সরকার প্রধান; এই প্রধান দুই নেতা ক্ষমতার পালা বদলে তাদের ক্ষমতার আদ্য করেছে সুদৃঢ়। ক্ষমতার ডাল-পালা বিস্তার করেছে গ্রাম-গঞ্জে, শহর-কুঞ্জে সকল ক্ষেত্রে। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় কিছু প্রমত্ত বেকার যুবককে আর্থিক ভাবে পূনর্বসান করে দুই পক্ষের উপদলের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে সেই উপদলের মতকে extremism-এ রুপদান করা হয়েছে এবং সেই রুপ স্থায়ী সামাজিক দ্বন্দে রুপ নিয়েছে। জনগণ সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে তাদের স্বকীয়তার স্বক্ষমতা করেছে কুঞ্চ।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে এথেন্সে জন্ম নেওয়া 2 হাজার 5শ বছরের ঝানু গনতন্ত্র 40 বছরের তরুন বাংলাদেশের দুই দলের দুই নেতার দরজায় দরজায় ঠোকর খেয়ে খেয়ে স্থায়ী আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর বাকি 16 কোটি জনগণ গনতন্ত্র মারা গেলো মারা গেলো বলে চেচাচ্ছে কিন্তু বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নিচ্ছেনা।
শুনতে খুব অবাক লাগে যখন দেশের শক্তিশালী মিডিয়াগুলোর বিভিন্ন টক-শোতে বা অনুষ্ঠানে বলা হয়ে থাকে দেশের চলমান সঙ্কট বা সন্দিগ্ধ ভয়াবহ সঙ্কট নিরসনে প্রধান দুই দলের নেতাকে আলোচনায় বসতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা এই মত দিয়ে থাকেন যে, বর্তমান প্রধান মন্ত্রী (যিনি ভবিষ্যতেও প্রধান মন্ত্রী হতে পারেন)এবং বিরোধী দলীয় নেতা (যিনি ভবিষ্যতে প্রধান মন্ত্রী হতে পারেন)এই দুইজন আলোচনায় বসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, সমাধান হয়ে যাবে শুধু একথায় বলেননা বরঙ তারা এহেন মত দিয়ে গর্ব অনুভবও করেন। তারা যখন উপরোক্ত মত দিয়ে থাকেন তারা চেতনাযুক্ত জনগণের বোবাকান্না শুনতে পাননা।
গণতান্ত্রিক রাজনীতির মহাগুরুভার শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দিয়ে টক-শো করে দুই নেত্রীর আলোচনার অলিক পরামর্শ দিয়ে তাতে হয়তো কর্পোরেটভুক্ত টিভি চ্যানেলগুলোর ডিজিটালায়িজড পদ্ধতিতে ভাঙানো সুযোগসমৃদ্ধ চেক পাওয়া যায় বা বুদ্ধিজীবির খাতায় নাম লেখানো যায় কিন্তু তাতে জনগণের স্বপ্নশাখায় নতুন কোন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেনা।
একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে; না মধ্যবর্তী সরকার থাকবে; না দলীয় সরকার থাকবে; না অন্যকোন সরকার থাকবে, না সর্বদলীয় সরকার থাকবে এটা কোনভাবেই জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা সু-শাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ ভাবে দুই নেতৃর পারস্পারিক আস্থা-অনাস্থা বা বিশ্বাসের সাথে জড়িত। কারণ চীন একদলীয় সরকার ব্যবস্থাতেও পৃথীবির মধ্যে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক বর্ধিষ্ণু দেশ। কোটি কোটি জনগণের আবেগ, ভালবাসা, অধিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়িত্ব জ্ঞানহীন দুই জন ব্যক্তি চাইলেই 16 কোটি মানুষ ভাল থাকবে আর না চাইলে ভাল থাকবে না এই হাস্যকর নিয়ম চলতে পারেনা।
হয় দুইজন ব্যক্তি তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরে এসে জনগণের ভাল থাকার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করবেন তা-না-হলে 16 কোটি জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর তাদের ভাল থাকা মন্দ থাকার বিষয়টি নির্ভর করবে। এটি মাইনাস টু সুত্র হোক বা অন্য কোন সূত্র হোক। প্লাস-মাইনাসের অংক একটি শিশুর হাতে-খড়ির অংক এ অংক জনগন এখন অনেক বোঝে। এখন অনেক জটিল অংকের সমাধান করতে হবে। মাত্র 2জন নেতৃ কেন্দ্রিক বন্দী চিন্তা থেকে 16 কোটি মানুষকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
একই চিন্তাই দুই দশকেরও বেশি সময় আটকে থেকে সেখানে বদ্ধ বায়ুর দূর্গন্ধ ছাড়চ্ছে এখন মুক্ত চিন্তার বাতাসে বুকভরে শ্বাস নিতে হবে।
দেশের ইতিহাসের পাতায় বিচরণ করে বেড়ান, দেখতে পাবেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোন নেতা সরাসরি জীবন উত্সর্গ করেন নি কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ 71-এ বা পরবর্তীতে নুর হোসনের মত যারা গনতন্ত্র পুনুরোদ্ধার করার জন্য জীবন দিয়ে গেছেন তারা সকলেই ছিলেন সাধারণ যদিও পরবর্তীতে জনদাবি অর্জন করে তারা অসাধারণত্ত্ব অর্জন করে গেছেন। নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদেই হোক বা যে কারণেই হোক এদেশের এই সাধারণ মানুষগুলো দেশের অর্থনীতির চাকাকে রেখেছে সচল আর নেতারা নির্বাচিত হবার পর কোটি কোটি জনগণের সেই চাকায় নিজের অর্থের চাকাকে রকেট গতিতে সচল করেছে কিন্তু সুশাসন বিষয়ে থেকেছে অচলায়তন বরং সেক্ষেত্রে ঘটেছে ক্রমোবনতি।
এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়ারযোগ্য বিষয় নয় যে, আমরা নির্বাচনী কিছু ইশতেহারকে সামনে রেখে বা ভাল কিছু স্বপ্নকে সামনে রেখে কয়েকজনকে নির্বাচিত করে স্বপ্নের জাল বুনবো আর সেই জাল দিয়ে নির্বাচিতরা নিজেদের আখের গোছাবে কোন ভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায়না। আমি যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব সেই ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েই আবার আমারই পকেট কাটবে।
এটা কোন সভ্য মানুষবসবাসরত গ্রহে চলতে পারে না। এ্খন সেই সময় এসেছে যে সময়টাতে সকল সত্ চিন্তাশীল সকলকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জনসমাবেশে একজন মানুষ বক্তব্যে মিথ্যাচার করবেন আর আমরা জনগণ সেই মিথ্যাকে রাজনৈতিক বক্তব্য বলে বৈধতা দেব এটা কোন নীতি শাস্ত্র বা কোন ধর্ম শাস্ত্রে নেই। এখন নতুন চিন্তা করার সময় এখন সত্যিকারের পরিবর্তনের সময়।
সকলকে ধন্যবাদ
14/01/2013 23:36:02
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।