সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ । এ কথা এখন সবার জানা । এই দেশের মানুষগুলো যেমন বিচিত্র ; এই বিচিত্র মানুষগুলোর কর্মকান্ডগুলোও মাঝে মাঝে বিচিত্র হয় । তেমনী একটি বিচিত্র ঘটনা আজ আপনাদের বর্ণনা করতে যাচ্ছি ।
অনেক দিন আগে তা প্রায় কুড়ি- বাইশ বছর আগের কথা ; যখন বয়স ছিল দশ কি বার ।
টেলিভিশনে এ টি এম শামছুজ্জামান অভীনিত একটি বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমার নামটা মনে নেই । যাই হোক, ঐ সিনেমাতে এ টি এম একটি কমেডি হকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । তাতে দেখা যায়- এটিএম চাচা রীতিমত বাদ্য বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে লোকজন জোগার করে নানা রকম হাস্য রস করে অবশেষে তার ব্যক্তিগত কারখানায় নিজের হাতে তৈরী মারাত্মক কার্যক্ষমতা যুক্ত গুলতি সাবার হাতে তুলে দেয় । সাধারণ মানুষ তার কথার জালে আটকা পড়ে ঐ ঔষধী গুণমুক্ত ঔষধ ক্রয়ে বাধ্য হয় ।
এর পরের দৃশ্যে যা দেখা গেল তা হল - পুলিশ ঐ হকারকে ধরে ফেলেছে । অভিযোগ বড় মারাত্মক! সে ডাক্তার না হয়েও মানুষকে ডাক্তারী পরামর্শ দেয় এবং ভূয়া ঔষধ বিক্রয় করে ! তখন হকারটি হাতজোড় করে ক্রন্দন করতে থাকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য । তবুও নাছোড় বান্দা পুলিশ ছাড়তে চায় না । অবশেষে হকারের স্বীকারুক্তি- স্যার, আমার তো কোন অপরাধ নাই কারণ- “আমার ঔষধ খেয়ে লোকে মরেও না বাঁচেও না”। আমি তো স্যার ওনাদের ঠকাই না লেনদেন করি মাত্র ! বেরসিক পুলিশ বলছে তাহলে ব্যাপারটা খুলে বল দেখি ।
হকার বলছে - স্যার, প্রথমে বাজার থেকে ভাল মানের গমের ময়দা কিনে তা গরম পানিতে গুলিয়ে সুন্দর করে ছোট ছোট বড়ি বানিয়ে রোদে শুকিয়ে সামান্য একটা দু’টা মিথ্যের মিনিময়ে আমি ওগুলো সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেই । যার জন্য আমার ঔষধ খেয়ে মানুষ মরেও না বাঁচেও না স্যার।
দক্ষ অভিনেতা এটি এম যখন কথাগুলো বলছিল তখন আমাদের মত ছোট দর্শক থেকে শুরু করে বড়রাও হাসিতে ফেটে পড়ল ।
ঐ সিনেমাতে উপরের ঘটনা টি নিছক হাসির উদ্দেশ্যে করা হলেও হয়ত জন সচেতনতা মূলক কিছু ছিল । কারণ সিনেমা তো সমাজে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার খা-িত রূপ, তাই নয় কি ?
সময় বদলেছে , মানুষের প্রতারণার ধরন পাল্টেছে ।
বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা বোতলজাত ফার্মেসিউটিক্যল গুলো হয়তো উপরের থিম / আইডিয়ার বাস্তব রূপ দিয়েছে - তা-ই প্রামাণ করে ।
শুধুমাত্র বোতলজাত করার উদ্দেশ্যে বোতলজাত ফার্মেসিউটিক্যল গুলো মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে হর হামেশাই । তার সাথে যোগ দিয়েছে আমাদের দেশের সার্টিফিকেট ধারী কিছু অসৎ, লোভী, বিবেক বিবর্জিত ডাক্তার ও ফার্মেসী ব্যবসায়ী ।
এই সবুজ দেশের সাধারণ মানুষ গুলো অশিক্ষিত হওয়ায় অসচেতনও; সহজ সরল হওয়ায় কিছুটা বোকাও । তাই এ বোকা অশিক্ষিত মানুষগুলোর সাথে প্রতিনিয়তই প্রতারণা করে যাচ্ছে কিছু শিক্ষিত বেশধারী প্রতারক ।
যাদের পেশার আসল উদ্দেশ্য মানব, মানবতা আর মনুষ্য সেবা হলেও ওরা সর্বদাই অমানবিক- মানবাতা লংঘন করে চলছে ।
দেখার কেউ নেই , সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ !
এবার আসুন সত্য ঘটনায় প্রবেশ করি :
কয়েকদিন হল আমার কলিগ জিমি অফিসে আসছে না, ফোনে খোঁজ নিয়ে জানাগেল উনি অসুস্থ । খবরটি শুনেই আমাদের বস (ডিরেক্টর অপারেশন) ছুটে গেলেন জিমিকে দেখতে এবং তাকে সাথে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ কিনতে গেলেন পি.জি হাসপাতালের ফার্মেসী বিভাগে । জিমিকে বিভিন্ন্ ঔষধের সাথে একটি ক্যালসিয়ামও প্রেসক্রাইব করা হয়েছে । সংক্ষিপ্ত নাম (রিভ) জবঠ এই নামের ক্যালসিয়াম ঔষধ টি হাতে নিয়ে আমাদের বস দেখল এটি ‘মেইড ইন চায়না’ লেখা, সাথে জিমিও দেখল; দেখা মাত্রই জিমি উৎকন্ঠাভরা কন্ঠে বলে উঠল স্যার এটি দুই নম্বর ঔষধ।
এটা খেয়ে কোন উপকার হবে না । অর্থাৎ রোগী মরবেও না বাঁচবেও না ! আমাদের বস অত্যান্ত সচেতন একজন মানুষ, উনি জিমির কথায় কোন কর্ণপাত করছে না । সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাশের দোকান থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এর একটি ক্যালসিয়াম ক্রয় করলেন এবং পূর্বের দোকান থেকে আনা তথাকথিত নাম সর্বস্ব (রিভ) জবঠ দেখাল দোকানে বসে থাকা ঔষধ বিশেজ্ঞকে । তার সোজা সুজি জবাব হ্যাঁ এটি গুণমানহীন ঔষধ।
তখনই জিমি বসের সামনে ওষধ কোং এর বোতলজাত ব্যবসার রহস্য উন্মোচন করতে শুরু করল ।
এখানে বলে রাখা ভাল, জিমি বর্তমান প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার আগে দেশের একটি নাম সর্বস্ব ঔষধ কোং তে কয়েক বছর চাকরি করেছে । জিমি বলছে- স্যার চাইলে আমরা আমাদের (মেট্রোডেস্ক, যদিও মেট্রোডেস্ক একটি আউট সোসিং প্রতিষ্ঠান) কোং এর নামে ঔষধ ফার্মেসী নিমিষেই বানাতে পারি !
বস বলছে- মানে ?
জিমি- খুব সহজেই !
বস- খুলে বল তো ।
জিমি- স্যার আপনি সদরঘাট এলাকার মিটফোর্ডের ঔষধের পাইকারী বাজারে গিয়ে পাইকারদের শুধু আপনার মনের ইচ্ছার কথা পোষন করবেন , ব্যাস দেখবেন, ওরা নিমিষেই আপনার ইচ্ছাকৃত নামের লেবেল প্রিন্ট করে বোতলের গায়ে সেঁটে দিবে । হয়ে গেল আপনার কোং তে দক্ষ ক্যামিস্ট দ্বারা আবিস্কৃত ঔষধ !!- জিমি বলতেই থাকে ।
এর পর আসুন ঔষধ বাজারজাত করা ।
এটিও খুব সহজ ! এ জন্য শুধু আপনাকে টাকাই ছাড়তে হবে, অন্য কোন টেনশনের দরকার নাই ।
বস আশ্চার্য হয়ে বোকার মত প্রশ্ন করেত থাকে জিমিকে,
- কেমন করে ??
জিমির চটপটে উত্তর- প্রথমে আপনাকে স্থির করতে হবে যে, আপনি বাংলাদেশের কোন এলাকায় আপনার ঔষধ বাজারজাত করতে চান । সেই এলাকা নির্ধারণ করা । সেই এলাকার তথাকথিত সার্টিফিকেটধারী ডাক্তারদের সাথে আপনার রিপ্রেজেন্টেটিভ গিয়ে মিস্টি একটু হাসির সাথে সামান্য কিছু অর্থ তাদের পকেটে পুরে দিয়ে বলবে- স্যার, আমার ঔষধটা একটু প্রেসক্রাইব করবেন প্লিজ । ব্যাস হয়ে গেল আপনার কোম্পানীর ঔষধের কার্যকরী বিজ্ঞাপন ! যা সরাসরি ভোক্তার কাছে ।
আর ডাক্তারদের সরল বিশ্বাসের ফাঁদে এদেশের হাজার হাজার অভাবগ্রস্থ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে ঐ নাম সর্বস্ব ঔষধ কিনতে বাধ্য !
জিমির মুখে এসব কথা শুনে বস তো “থ” বনে গেলেন । তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফ্যাক্টরি করা, লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্যামিস্ট রাখা, বিদেশ হতে ঔষধের কাঁচামাল আমদানি করার ঝক্কি-ঝামেলা এসব কিছুই পোহাতে হবে না ? এসবের কিচ্ছু দরকার নেই ??
জিমি উদ্দিগ্ন বসকে আশস্ত করতে বললেন- দেশের প্রধান কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যাতিত বেশ কিছু নাম সর্বস্ব ফার্মাসিউটিক্যাল ও কিছু অসৎ ব্যবসায়ীচক্র আর সেই সাথে অসৎ ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের যোগ সাজেশে প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে ।
বাংলাদেশ যেখানে, বিশ্বমানের ঔষধ প্রস্তুত করছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত অনুন্নত দেশে ( আফগানস্তিান, ভুটান, কাম্বোডযি়া, হংকং, ইরাক, ম্যাকাও, মালয়শেযি়া, মায়ানমার, নপোল, পাপুয়া নউি গনি,ি শ্রীলঙ্কা, তাজকিস্তিান, ফলিপিাইন, ভযি়তেনাম, ইমনে, কমোরোস দ্বীপ, ইরত্রিযি়া, গাম্বযি়া, ঘানা, কনেযি়া, লবিযি়া, মালাউই, মরটিানযি়া, মরশিাস, মোজাম্বকি, নাইজার, রুয়ান্ডা, সযি়রো লযি়ন, সোমালযি়া, সুদান, তাঞ্জানযি়া, বলেজি, কোস্টা রকিা, গুয়াটমোলা) এদেশের ঔষধের বড় সুনাম রয়েছে; যেখান থেকে বাংলাদেশ হাজার হাজার ডলার বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছে; সেই দেশেরই অভ্যন্তরে যদি ঔষধের গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে; কিছু অসৎ লোভী চক্রের জন্য যদি সমস্ত ঔষধ শিল্পের সুনাম ক্ষুন্ন হয় , তাহলে “বাতির নিচেই অন্ধকার”- এমন একটা ব্যাপার হয়ে গেল না ?
দেখার কেউ কি আছে ????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।