ভালো।
রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত পানি। বিশেষজ্ঞরা এসব বোতলজাত পানির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, ২/৩টি প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত পানি ছাড়া অন্যসব বোতলজাত পানি মানসম্পন্ন নয়। তথাকথিত ‘মিনারেল ওয়াটার’ পান করে অনেকে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। বর্তমানে বাজারে গঙ্গা, যমুনা, ইউরেকা, বর্ষা, নীল গিরি, লাইফ, মিম, ফ্রেশ, আইস মিনারেল নামে অসংখ্য মানহীন বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পানি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই খাদ্যপণ্যের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই’র। মিনারেল ওয়াটারের নামে প্রতিষ্ঠানগুলো কী মানের পানি বাজারজাত করছে তা খতিয়ে দেখছে না বিএসটিআই।
জানা গেছে, মিনারেল ওয়াটার বাজারজাত করার জন্য সারাদেশে ১১৪টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিলেও বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএসটিআই’র মনোগ্রাম ব্যবহার করে শুধু রাজধানীতেই শতাধিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ বাণিজ্য করছে। সারাদেশে এ সংখ্যা দুই শতাধিক বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জাতীয় সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বিএসটিআই সূত্র বলেছে, নিবন্ধনকৃত বোতলজাত (জারসহ) পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১৪টি। এর মধ্যে ৪০টি ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার ও ৭৪টি পিউরিফাইড ড্রিংকিং ওয়াটার প্রতিষ্ঠান।
গুণগত মান না রক্ষার কারণসহ নানা কারণে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাসা-বাড়ি ও আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিএসটিআই’র একজন কর্মকর্তা বলেন, অল্প পুঁজিতে বেশি মুনাফার লোভে ‘ওয়ান লাইন ফিল্টারেটেড হাউসহোল্ড টাইপ প্ল্যান্ট’ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে। এসব ছোট ছোট হাউস হোল্ড টাইপ প্ল্যান্টের পানির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, লোকবল সংকটের কারণে তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, এটি একটি খোঁড়া যুক্তি।
বিএসটিআই’র লোকবল আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন, অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে কিছু লোক রাতারাতি ধনী হয়ে উঠছে আর প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বোতলজাত পানির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর দিদারুল আলম। তিনি বলেন, পানির মতো অত্যন্ত কোমল এবং স্পর্শকাতর পণ্য নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ‘মিনারেল ওয়াটার’ না বলে এটিকে ‘বোতল ওয়াটার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির নামে আমরা এখন ‘বোতল পানি’ পান করছি।
কারণ এটা এখন কালচারে পরিণত হয়েছে। এক সময় গ্রামের মানুষ পুকুরের পানি পান করতেন নির্দ্বিধায় আর এখন টাকা দিয়ে এসব ‘বোতল পানি’ পান করে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বোতলজাত পানির ২/৩টি ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. শহিদুজ্জামান বলেছেন, যে অর্থে বোতলজাত পানিকে ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার বলা হচ্ছে, তা গ্রহণ করতে তিনি রাজি নন। তিনি বলেন, টিউবওয়েল তো বটেই, বৃষ্টির পানি ছাড়া নদীর পানিতেও মিনারেল আছে।
কিন্তু আমাদের দেশে বোতলজাত মিনারেল ওয়াটারে বাড়তি এমন কী আছে? তার মতে, ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার বলতে প্রকৃত অর্থে ঝরনার পানিকেই বোঝানো হয়। সাধারণ পানি থেকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অতিরিক্ত মিনারেল যোগ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মিনারেল ওয়াটার নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ‘আলট্রাভায়োলেট রে’ দিয়ে পানিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করে। অধিক লাভের আশায় এরপর তা বাজারজাত করে থাকে। তবে এসব পানি পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ হয়েছে এমন দাবি করা যাবে না।
পানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর দিদারুল আলম বলেন, এসব গুণাবলী অক্ষুণœ রেখে প্রতি লিটার পানি তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাড়ে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা খরচ হওয়ার কথা। বোতল, লেভেল ও বাজারজাতসহ আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে প্রতি লিটার পানিতে খরচ হয় সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকা। অথচ বাজারে এক লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ালেও দেখার কেউ নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।