আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোহিঙ্গা শরনার্থি : মানবতা বিষয়টা কৌশলগ

সুরেশ কুমার দাশ মানবতা বিষয়টা কৌশলগত কিনা। জাতিসংঘ থেকে ‘আমেরিকা সংঘ’ পর্যন্ত। দৃশ্যমান মানবিক বিপর্যয় আর পরোক্ষ মানবিক বিপর্যয় দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা আর জাতি সংঘ উভয়পক্ষই মানবতাকে নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। সংজ্ঞায়িত করছে।

জাতিসংঘের বয়ান হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা সবচেয়ে উদবাস্তু এবং বিপদাপন্ন একটা জনগোষ্টি। তারাই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এখন অবস্থা আরও খারাপ। এরমধ্যে মায়ানমার সরকারের হিংস্রতার কারণে শতশত রোহিঙ্গার নির্মম মৃত্যু হয়েছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে, বৌদ্ধদের ক্ষোভের মুখে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে বহু রোহিঙ্গাদের।

তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। সমস্যা এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত গেছে। রোহিঙ্গারা কোন রাষ্ট্রের নাগরিক। তাদের আদৌ কোন রাষ্ট্রীয় পরিচয় আছে কিনা। কারণ মায়ানমার সরকারের নাগরিক যোগ্যতার হিসাবে তারা আসছে না ।

এমন কথা বলে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে মায়ানমার থেকে। এমনি এমনি কেউ তাদের অবস্থান ছাড়ে না। অবস্থান ছাড়ানোর জন্য মায়ানমারের জনগণ জোর জুলুম অত্যাচার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। এটা হয়ে আসছে মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের চরম শাসনামলেও। এখনও জান্তা সরকারের শাসন চলছে।

তারপরও বাংলাদেশে বিভিন্ন কৌশলে বসবাসকারি রোহিঙ্গা শরনার্থিরা আশা করেছিল তারা নিজের দেশে ফিরে যাবে। এরমধ্যেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আবার সেই অবিসংবাদিত নেত্রী সূচির বিদেশ সফর। সূচি এ সময়ে বিদেশ সফরে না গিয়ে মায়ানমারে যে আগুন জ্বলছে সেটা সামাল দিলে বিশ্বের কাছে আরও অনেক বেশি নন্দিত হতেন। তিনি তা না করে বিদেশ যাওয়ার খবর শোনা গেল।

শান্তি ও মানবতার জন্য নোবেল পাওয়া একজন নেত্রীর দেশে যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলে তাহলে সেদেশের মানুষের মানবতা রক্ষার দায় কখনও প্রতিবেশি রাষ্ট্রের উপর চাপানো উচিত নয়। জাতিসংঘ অনেক কিছু বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে মানবতা শেখাচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। শুধু কয়েকশ মানুষ মারা যাবার খবরই নয়। এটা কয়েক হাজারও হতে পারে।

কারণ রোহিঙ্গা রাজ্যে যারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকার কথা জাতিসংঘ থেকে বিদেশি বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারিরা দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করছে। যারা থাকলে রোহিঙ্গারা সাহসী হবার কথা কিংবা সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধরা একটু সমীহ করার কথা তারাই পালাচ্ছে মায়ানমার থেকে। তাহলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এখন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানবতার চবক যারা দিচ্ছে তারা পালাচ্ছে কেন। তাদের তো দায়িত্বেও মধ্যে পড়ে ওখানে থাকা।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে নিই। জাতিসংঘ জানে। আমাদের দেশে একটা শান্তি চুক্তি হয়েছে পার্বত্য নৃগোষ্ঠির সঙ্গে সরকারের। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে পাহাড়ি জনগণ একতরফা বসবাস করবে। আর সেখানে আদি বাসিন্দা বাঙালিরা কেউ ভূমি মালিকানা পাবেনা।

এটা একটা ভয়ঙ্কর হিসাব। এরকম প্রচারণাই আছে সাধারণ জনগণের মাঝে। এ চুক্তিকে জাতিসংঘ সমর্থন করে। মানবিক দিক থেকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যদি এতটাই কৃপণ হয় তাহলে এমন চুক্তি হয় কিভাবে। এটার ভাল মন্দের বিষয়টা অন্যত্র আলোচনার বিষয়।

এখন এমন প্রচারণাও হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যদি মায়ানমারের না হয়ে ভারতের হিন্দুরা হতো তহিলে সরকার কি করত। এটা কি এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি নয়। অতি সাম্প্রদায়িক সহমর্মিতা। চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা। কারণ মানবতার বিষয়টা অন্য ভাবে বুঝানো যায়।

রাষ্ট্রের সুবিধা অসুবিধার বিষয়টাও। জাতিসংঘর বিবৃতি থেকে আরও একটি প্রসঙ্গ আসে সেটি হচ্ছে এ মুসলমানরা হচ্ছে চীন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের জনগন। যারা নানা কারণে উদবাস্তু হচ্ছে। তার মানে জাতিসংঘ কি বোঝাতে চায় -রোহিঙ্গাদের এক অংশের ভাগ বাংলাদেশকেও নিতে হবে। অনেকদিন পর জাতিসংঘের এমন বোধোদয় হবার কারণ বেশ রহস্যজনক।

যেখানে বেশ কিছু রোহিঙ্গা বংলাদেশে শরনার্থি হিসাবে বাস করছে। নাকি বাংলাদেশকে যা খুশি তা গেলানো সহজ। এটাই কি জাতি সংঘের মজার খোঁ খোঁ খেলা। জাতি সংঘের এত দরদ থাকলে তারা কেন বাংলাদেশ সরকারকে কোন রকম সহযোগিতা না করে দূর থেকে বিবৃতি দিয়ে দায় সারছে। তারা তো যারা নৌকায় করে বাংলাদেশের কাছে এসেছে সেই শরনার্থি রোহিঙ্গাদের খাদ্য, পানীয় ও তাঁবু খাটানোর ব্যবস্থাও করে দিতে পারে।

আজ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারকে রাজী করাতে পারেনি। তাহলে কোন আশায় বাংলাদেশ সরকার তাদের এখানে প্রবেশ করতে দেবে। এ অবস্থায় সরকারের বেশ হিসাবি হবার দরকার আছে। জাতি সংঘের এ বক্তব্য মানকিব নয় কৌশলগত। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতি কোন রাখঢাক না রেখেই দেয়া হয়েছে।

তবে সেটাই বাস্তবতা। ‘মায়ানমারের কোন রোহিঙ্গাদের আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া যাবেনা। ’ যারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে অতি দরদ দেখাচ্ছে তাদের জানা উচিত রোহিঙ্গাদের- তাদের পৈত্রিকা জমিতে থাকতে দেবে কিনা। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতা কি। কারণ তাদের কারণে ওই অঞ্চলের স্থানীয়দের অর্থনৈতিক ও সম্পদের উপর চাপ পড়েছে।

অন্যদিকে অপরাধ বেড়েছে। পরিবেশ দূষণের বিষয়টাও আছে। এত বিশাল অশিক্ষিত জনগোষ্ঠি নিয়ে সরকার কি করবে। যখন অভিবাসন কিংবা মাইগ্রেশনের কথা আসে তখন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির ক্ষর্মক্ষমতা বিবেচনায় ধরা হয়। রোহিঙ্গাদের আজকের পরিণতি শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে থাকাও বটে।

মায়ানমার সরকারের সঙ্গে তারা বুদ্ধি ও কৌশল দিয়ে কখনও তাদের নাগরিক অধিকার আদায় করতে পারেনি। পৃথিবীতে আজ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কমে আসছে। যতটা ভয়ঙ্কর- তা মনস্তাত্ত্বিক সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা কেউ মনে মনে পুষতে পারে। প্রকাশ্যে এটা লজ্জাকর।

এবং দাঙ্গা তো বর্বরতা। যেখানে মানবিক বোধ বাদ দিয়ে ধর্ম ব্যবসার জিগির তোলা হয়। অং সাং সূচিকে অবিসংবাদিত বলা হয়। যিনি যুগের পর যুগ কারাগারে ছিলেন। নোবেল পুরস্কার আনার জন্য যিনি এত দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন সেই তিনি কিছুটা অপেক্ষা করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সামাল দিয়ে কেন বিদেশ গেলেননা।

এ প্রশ্নটা সবাই চোখ খোলা রেখে অথবা চোখ বন্ধ করে ভাবুন। শুধু ধর্ষণের কারণে এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। হিলারি মায়ানমার থেকে এসেছেন বেশিদিন হয়নি। এখন দেখার বিষয় মায়ানমারের জান্তা সরকার মেয়াদ আর কতদিন। তবে বাংলাদেশ সরকারের চিন্তা করা দরকার- কোন কৌশলে সদয় হতে পারে কিনা।

কারণ একই বিপদের মুখে ব্যক্তি আমি থাকলে, বা আমার চোখের উপর আমার গর্ভবতী স্ত্রী,বোন কিংবা এমন যে কোন কারও দুর্ঘটনা সহ্য করা অসম্ভব। অন্যদিকে খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে অবুঝ শিশুটি চোখের উপর মৃত্যু ভয়ঙ্কর। ভাবলে এটা চরম অমানবিক। রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখ দিয়ে দেখলে এটা যান্ত্রিক। মানুষের মন দিয়ে ভাবলে অপার মানবিক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.