মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোন সুযোগ নয়, অধিকার।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর পার করে নৌকায় ওঠার সমর্থ অর্জন করে; অনেক কৌশলে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ভাগিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই ঘোষণা দিলেন, “রেলর কালো বিড়াল খুঁজে বের করা হবে। ”
[ছবিতে সেই কাল বিড়াল]
অবশ্য এর আগেও বিভিন্ন আলোচনা সভায় তিনি “শুটকির নৌকায় বিড়াল চৌকিদার” টাইপের বক্তব্য দিতে কখনো ভুলেননি।
কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস; কালো বেড়াল খোঁজার ঘোষণা দিয়ে মনের অজান্তে নাকি জেনেশুনেই নিজেই যে কখন সেই কালো বিড়াল বনে গেলেন বুঝতে পারেননি নাকি বুঝেশুনেই হয়েছিলেন?)
৯ এপ্রিল, ২০১২ ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানার মূল ফটকে ৭০ লাখ টাকাসহ তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হক আটক হন। তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন।
তিনি ঘোষণা দিলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ। গণমাধ্যমকর্মীদের বললেন ‘আমি রাত ১০টায় ঘুমাই। মধ্যরাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করার কোনো সুযোগ নেই। ’ বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে পদত্যাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বললেন, ‘একজন রাজনীতিকের জন্য পদ গ্রহণ বড় কথা নয়। বর্জন করাও সহজ।
বিরোধী দলের কথায় আমি পদ পাইনি। তাই বিরোধী দলের কথায় তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। সিদ্ধান্ত যাঁরা নিতে পারেন, সেখান থেকেই আসবে। ’
মনে মনে বেলেছেন হয়তো, ‘জীবনের শেষ বেলায় এসে অনেক কৌশল করে প্রথমবার মন্ত্রিত্ব পেয়েছি; তোমরা আমাকে গালি দেও-মার-কাট যা খুশি কর – এই পদ আমি ছাড়তে পারবনা। ’
১২ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন, এপিএস ও রেল কর্মকর্তাদের বস্তাভরা ৭০ লাখ টাকাসহ বিজিবি’র হাতে ধরা পড়ার ঘটনা আমার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র।
’ আমি বিপদে পড়ে গেছি। তীর আমার দিকে। সামনেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ অবস্থায় সরকার ও মন্ত্রীদের বিব্রত করতে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে।
পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে ১৬ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন, ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত চলছে।
বহু ত্যাগ-তিতিক্ষায় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র এসেছে। সেই গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে পদত্যাগ করছি। ’
১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬-এর ধারা ৩(৪)-এর ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
আর এরই মাধ্যমেই কী সাদা হতে শুরু করলেন? প্রধানমন্ত্রী তাকে ব্লেচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিয়েছেন কী?
দেশের অবিরাম নীতিবাক্য শুনাচ্ছেন। এমনকি ৫ জুন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তার দাপটেতো এখন টেলিভিশনের খবর দেখা ও শোনা পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজের কৃতকর্মের জন্য কোন বিচারের মুখোমুখি না হয়ে আপন কারিশমায় মহান নীতিবান(???) এই বর্ষীয়ান(???) রাজনীতিক পুনরায় মন্ত্রিত্ব ভাগালেন ঠিকই তবে শপথ বাক্য পাঠ করলেন না। ৫৫ বছর ধরে রাজনীতি করে একজন রাজনীতিক যদি এইটুকুও না জানে যে, মন্ত্রী হওয়ার পর শপথ বাক্য পাঠ না করে মত্রীর আসনে বসে থাকা সংবিধান বহির্ভূত, তবে তাকে কেমন রাজনীতিক বলা যায়? সংবিধান বহির্ভূতভাবে একটি আসন দখল করে রেখে প্রায় প্রতিদিনই যে দেশবাসীকে কথায় কথায় সংবিধান দেখায় ও নীতিবাক্য শোনায় তার লজ্জা শরম বলতে আদৌ কিছু আছে কী?
গত ১১ জুন, ২০১২ দুপুরে পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে এক আলোঞ্চা সভায় বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে (এখনো কালো নাকি সাদা বলব) বিড়াল ঘোষণা দিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক হলেই আপনারা ক্ষমতায় যাবেন তা হবে না। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। ’
টেলিভিশে তাকে দেখে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া আমার ভাতিজা এসে বলল, কাকা, কালো বিড়ালের দাপাদাপির কারণে মনে হচ্ছে টেলিভিশন দেখা বন্ধ করে দিতে হবে।
জিজ্ঞাসা করলাম কেন? সে বলল, খবর দেখার জন্য টেলিভিশন চালু করলেই দেখি কালো বিড়াল দাঁত খিচিয়ে ও মাথা ঝাঁকিয়ে আমাদেরকেও নীতিবাক্য পর্যন্ত শেখানোর চেষ্টা করছে। সে আরও জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা কাকা- টিভির ক্যামেরার সামনে কথা বলা এমকি নীতিবাক্য পর্যন্ত শোনানোকে এই ব্যক্তিকে মানায়; এই লোকটার কী লজ্জা সরম বলতে কিছুই নাই; সে তো কালো বিড়াল ছিল সাদা হলো কখন?
[হুররে কী মজা কী মজা সাদা হয়ে গেছিরে............???????]
পদটীকাঃ যখন এই ব্লগ লিখছি সেই মুহূর্তে নতুন কোনো আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে দাঁত খিচিয়ে ও মাথা ঝাঁকিয়ে দেশবাসীকে নীতিবাক্য শোনানো হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।