মধ্যবিত্তের খোলস
মধ্যবিত্তের খোলসে আমি এক সর্বহারা,
কাঁধে ভিক্ষার ঝুলি নেই, পরণে মলিন বস্ত্র নেই,
হাতে মাটির সানকি নেই, হাত পাতিনা রাস্তার মোড়ে মোড়ে
কিংবা ট্রাফিক সিগনালে, ঘুরিনা মানুষের দ্বারে দ্বারে,
তবুও- নিজেকে বড্ড বেশী ভিক্ষুক মনে হয়।
জায়নামাজে মাথা ন্যুইয়ে নয়, ইবাদত-বন্দেগিতে নয়,
জিকির করেও নয়- অথচ প্রতিপালকের কাছে আমি
কেবলই ভিক্ষা চাইছি প্রতি মুহূর্তে। নাহ্ অর্থ-কড়ি নয়,
সম্পদ-ঐশ্বর্য নয়, অন্ন-ব্স্ত্র-বাসস্থানও নয়-
মৌলিক অধিকারের সকল দাবী পরিত্যাগ করে-
একটু শান্তি, একটু স্বস্তি ভিক্ষা চাইছি সৃষ্টিকর্তার দরবারে।
মধ্যবিত্তের এই লেবাসে সবাই জানে আমি বেশ আছি,
কেতাদুরস্ত পরিধান বস্ত্র, একটা ভাল চাকরি, মাস শেষে বেতন,
দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পুঁজি, আলমারিতে সযত্নে রাখা ভার্সিটির সর্বোচ্চ ডিগ্রী,
সর্বোপরি- নামসর্বস্ব একটা জাতীয় পরিচয় পত্র।
সেখানে কোথাও লেখা নেই আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য।
এই শহরে বেঁচে থাকার চলমান সংকটে নিতান্তই অনভিজ্ঞ আমি,
বিকল্প কোন পথ জানা নেই।
বোধের বিচারে পারিনা নিজেকে কলুষিত করতে। তাইতো-
কর্পোরেট বাণিজ্যের লোভনীয় টোপ গিলেছি অনায়াসে,
পকেটে তুলে নিয়েছি ক্রেডিট কার্ড- গোল্ড স্ট্যাটাস পেয়ে
আমার ক্ষুদ্র পুঁজির চেনা বিশ্ব এখন ঋণের মাধ্যাকর্ষণ টানে
ক্রমশই নিম্নমুখী। স্বচ্ছলতার আলো পেতে জ্বেলেছি ঋণের প্রদীপ।
আয়-ব্যয়ের হিসেবে আমি এখন দারিদ্রসীমার নীচে।
জীবনের ব্যালান্সশীট খুলে দেখি- মধ্যবিত্তের খোলস ছেড়ে
কবেই আমি নেমে গেছি সর্বহারাদের দলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।