আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজেট: প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বিদ্যুৎ ও জ্বালানীখাত

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বাজেট: প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বিদ্যুৎ ও জ্বালানীখাত হাসান কামরুল ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাজেটে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত বিদ্যুৎ খাতের রুপরেখামুলক প্রণিধানযোগ্য বাজেটের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সেক্টর নিয়ে বাজেটে কি থাকছে তা কৌতুহল যুগিয়েছে সাধারন মানুষের মধ্যে। টিভি স্ক্রিনে চোখ রেখেছে বিদ্যুৎ বঞ্চিত মানুষজন থেকে শুরু করে শিল্পমালিক ও সমালোচনাকারীরা। খেটে খাওয়া মানুষজন কাজ ফেলে রাস্তায় টিভির দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছে। এ সেক্টর নিয়ে মানুষের অফুরন্ত আগ্রহ।

সাধারন মানুষজনের কাছে কতো টাকার বাজেট আসলো কতো টাকার বাজেট গেলো তা খুব একটা গুরুত্ব বহন করেনা। পুরো বাজেটে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে কি থাকছে তা জানতে সমাজের নেহাত দরিদ্র জনগোষ্ঠিও ছুটেছে টিভির পর্দায়। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন মিলে ৯ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ৫ শতাংশের সমান। গেল অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৩১১ কোটি টাকা।

এ বছরে এ খাতে ১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামি অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৯ মেগাওয়াটের। যা গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অর্থমন্ত্রী বাজেট আলোচনায় উল্লেখ করেন এ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন মাথা পিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘন্টা। যা ৩ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২৬৫ কিলোওয়াটঘন্টায় উন্নত হয়েছে।

৩ বছরে সরকার ১ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহককে নতুন করে বিদ্যুতের আওতায় আনতে পেরেছে। যার ফলে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ বিদ্যুত ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ৪৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। বিশাল কর্মসাধনের পরও মানুষ লোডশ্যাডিংয়ের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি বলেও অর্থমন্ত্রীর আক্ষেপ ছিল বাজেট আলোচনায় । পুরো বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বার বার বিদ্যুৎ সেক্টরকে টেনে এনেছেন।

রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রলোর সাফাই গেয়েছেন। যারা এসবের সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রীর ভাষায় তারা অঙ্ঞতা বসতই করে। যদিও তিনি নিজেও বিভিন্ন সময়ে জ¦ালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পিছনে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দায়ী করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানী উপদেষ্টাতো রেন্টাল কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সমালোচনাকারীদের দেশবিরোধী বলতেও পিছপা হননি। তবে সত্যিকার অর্থেই ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই এ সেক্টরকে অ¯িহর করে তুলেছে।

আগামি বছরে বিদ্যুতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সরকার কিছু বিশেষ প্রকল্পের গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামনের বছরে আরো অত্যন্ত ৫ টি ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র যোগ হচ্ছে বলে বিদ্যুত বিভাগ নিশ্চিত করেছে। তবে আগামি বছরে কতো লক্ষ নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান অর্থমন্ত্রী দিতে পারেননি। ক্যাটাগরিক্যালি বিদ্যুত নিয়ে সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সংযোগেও সরকার নতুন ফর্মুলায় অগ্রসরমান।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে সরকার ডাবল হ্যাটট্রিকের পথে। একের পর বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগীতায় সরকার সাধারন মানুষজনকে বিবেচনায় নিচ্ছেনা। যা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে বলেই বিশ্বাস। আগামি অর্থবছরে কতোবার বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধি হবে তাও নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি রয়েছে। সরকারের উচিত বাজেট আলোচনায় তা নির্দিষ্ট করা।

ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে সরকারের যতো আগ্রহ। পুরাতন বড় বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো মেরামতে আগ্রহ নেই বললেই চলে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহনের পর আওয়ামীলীগ জনগনকে আশ্বস্ত করেছিল ২০১১ সালে লোডশেডিং কবল থেকে জাতির মুক্তি মিলবে। কিন্তু বাস্তবতা তার ধারে কাছেও নেই। তদপরি এ সেক্টরে কর্মরত কর্তাব্যক্তিদের অপরিপক্ক কথাবার্তা জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

দেশ সামনের দিকে অগ্রসরমান। মানুষ এখন পিছনের কথা চিন্তা করতে চায়না। বিএনপির আমলে কি হয়েছে না হয়েছে তা মানুষ ভুলে গেছে। বর্তমান নিয়ে সাধারন মানুষ আশ্বস্ত হতে চায়। তাই তুলনামুলক চিত্র নয়।

সত্যিকার অর্থেই বিদ্যুতের উন্নয়ন প্রয়োজন। মানুষ বিদ্যুত চায়। আর সেই চাহিদা সরকারকেই পুরণ করতে হবে। বিদ্যুত সংকট নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে সুষ্ঠ পরিকল্পনার প্রয়োজন। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিদ্যুতের প্রয়োজন ।

বিদ্যুত সংযোগ দিতে না পারলে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাবে। দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে গত কয়েক বছর আশানুরুপ শিল্পোৎপাদন হয়নি বা ব্যাহত হয়েছে। অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিনিয়োগে বন্ধাত্ব বা ¯হবির অব¯হা বিরাজ করছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যুতের যোগান দিতে এখনও সরকার এক রকমে ব্যর্থই বলতে হবে।

নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ী আওয়ামীলীগের নির্বাচনী বৈতরনীর অন্যতম অঙ্গিকার ছিল দেশে বিদ্যুত ও জ¦ালানী সমস্যা আশু নিরসন। কিন্তু সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ তা জনমনে সন্তুষ্টি জন্মাতে পারেনি। যদিও আওয়ামীলীগ হতাশাজনক এক বিদ্যুত সেক্টর নিয়েই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। পূর্ববর্তী সরকার বিদ্যুত খাতে লুটপাট করে ভঙ্গুর অব¯হা রেখে গেছে এ কথা যেমন সত্য। তেমনি বিদ্যুত খাতে লুটপাটের হরিলুট বন্ধ হয়নি এ কথাও সত্য বলে মেনে নিতে হচ্ছে।

ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে বিদ্যুত ব্যবসায়ীরা অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। কিন্তু দেশের বিদ্যুতের চেহারার হেরফের হয়নি। জ¦ালানী তেল ক্রয়ে সরকারকে প্রত্যেক মাসে ১২০০ থেকে ১৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হলো বিদ্যুত। সরকার সরাসরি বিনিয়োগকারীকে বিদ্যুত দিতে না পারলেও জ¦ালানী তেল দিতে হবে।

সেক্ষেত্রেও প্রতি লিটার জ¦ালানী তেলে সরকারের ভর্তুকি গুনতে হবে ক্ষেত্রভেদে ২০ থেকে ২৬ টাকা। তাহলে এতো বিশাল আর্থিক ক্ষতির বোঝা নিয়ে কতোদিন চলতে পারবে তাও প্রশ্নাতীত নয়। বিদ্যুতের সিস্টেম লস ও চুরি রোধ করাও জরুরি। ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে খুব আশাপ্রদ কিছু পাওয়া যাবেনা। বিদ্যুতের যোগান দিতে হলে বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হতে হবে।

কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বড় ধরনের সাফল্য আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারকে অভ্যন্তরীন কয়লা উত্তোলনে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটা বড় প্লান্ট ¯হাপনে তিন বছরের মতো সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সরকারের সময় খুব অল্প। এই অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুত নিয়ে সরকার সাময়িক পদক্ষেপ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ যে নিবেনা তা বলাই বাহুল্য।

গেলো তিনটি বছরে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের কারনে বেসরকারি বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সঠিক সিদ্ধান্তই বিদ্যুতের উন্নয়ন ঘটাতে পারে তাই সরকার সত্যিকার অর্থেই বিদ্যুতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে জাতিকে বিদ্যুতের ক্লান্তি থেকে মুক্তি দিবে এমন প্রত্যাশাই এদেশের সাধারন জনগনের। হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ । যধংধহশধসৎঁষমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.