আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থহীন....

মন ভাল নেই... আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম লিবিয়া। একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, অন্যদিকে সাংস্কৃতিগত প্রাচুর্যতায় ভরপুর দেশটি। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। দীর্ঘ ৪১ বছর সামজতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতর দিয়ে দেশ শাসন করেছেন তিনি। সম্প্রতি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যে বিদ্রোহের আগুন লেগেছে তার আঁচ থেকে বাদ যায়নি সুখি-সমৃদ্ধ লিবিয়া।

দেশটির একাংশ সরাসরি বিদ্রোহে নেমে গেছে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে। আর তাদের সহায়তা করতে হাজির হয়েছে বিশ্ব মোড়েল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোট। বিভিন্ন পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলোতে গাদ্দাফিকে বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন দৃষ্টিকোন দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কোনোটাতে তিনি রক্তপিপাসু দৈত্য আবার কোনোটাতে তিনি জল্লাদ স্বৈরশাসক। লিবিয়ার আসল পরিস্থিতি কী এবং কিসের জন্যই বা এই যুদ্ধ তা গণমাধ্যমে ওঠে আসছে না বললেই চলে।

তবু কেউ কেউ সবসময়ই ঘটনার অন্তরালের ঘটনা নিয়ে লিখে যান। তেমনি একজন লেখক স্টিফেন গডসন। তিনি একাধারে যুদ্ধগবেষক এবং অধ্যাপক। সম্প্রতি লিবিয়ার যুদ্ধ নিয়ে লেখা একটা বিশ্লেষণ অনুবাদ করে দেওয়া হলো। মিডিয়াগুলো প্রায়ই কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ‘পাগল স্বৈরশাসক’ এবং ‘রক্তপিপাসু দৈত্য’ বলে অভিহিত করে আসছে।

কিন্তু এই অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে আর কেনইবা করা হচ্ছে? লিবিয়ায় বসবাসরত আদিবাসী গোষ্ঠির সংখ্যা একশ পঞ্চশেরও বেশি। এদের মধ্যে প্রধান দুটি গোষ্ঠী হলো মেঘারবা এবং ওয়াফাল্লাহ। মেঘাবরা গোষ্ঠি লিবিয়ার দক্ষিণের ত্রিপোলিতানিয়াতে বসবাস করে এবং ওয়াফাল্লাহ গোষ্ঠি বাস করে পূর্বের অংশে। মেঘাবরা ১৮৫৫-১৯১১ সাল পর্যন্ত তুর্কিশদের সহায়তায় সবগুলো আদিবাসী গোষ্ঠিকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। যার ফলে (১৯১১-৪৩) ইতালির কলোনিয়াল শাসকরা লিবিয়া ত্যাগে বাধ্য হয়।

লিবিয়াতে প্রথম তেল আবিস্কৃত হয় ১৯৫৯ সালে। সেসময় লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিল সেনুসি আদিবাসী গোষ্ঠীর রাজা ইদ্রিস। লিবিয়ার তেল সম্পদ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অধিকাংশই তেল কোম্পানিগুলোকে নিয়ে যেতো। ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার সাধারণ জনগণের সমর্থণ নিয়ে কর্নেল গাদ্দাফি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গাদ্দাফি বারগা আদিবাসী গোষ্ঠীর এক নারীকে বিয়ে করেন।

আর এই বিয়ের মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে একত্রিত করেন গাদ্দাফি। ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই গাদ্দাফি লিবিয়ার তেল সম্পদ হতে প্রাপ্ত মুনাফা জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দেন। একই সঙ্গে লিবিয়াতে সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো কায়েম করেন তিনি। লিবিয়াতে কোনো বেকারত্ব নেই। আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ জিডিপির দেশ লিবিয়া।

দেশটির মাত্র পাঁচ শতাংশেরও কম মানুষকে বলা যায় যে তারা দরিদ্র এবং তার চেয়েও কম মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। হল্যান্ডের চেয়েও দারিদ্যের হার কম লিবিয়াতে। লিবিয়ার মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৫ বছর। পুরো আফ্রিকার মধ্যে সর্বোচ্চ গড় আয়ুর দেশ এটি। বিশ্ব জনসংখ্যার গড় আয়ুর চেয়েও ১০ শতাংশ বেশি তাদের গড় আয়ু।

দেশটির জনগোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র যাযাবর বেদুঈন এবং তুয়ারেগ আদিবাসী গোষ্ঠীর লোকজন ছাড়া সব পরিবারেরই একটা করে বাড়ি এবং গাড়ি আছে। লিবিয়াতে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাসেবা ফ্রি। যার কারণে লিবিয়ার সাক্ষরতার হার ৮২ শতাংশ। গত বছর গাদ্দাফি তার দেশের প্রতিটি নাগরিককে (পুরুষ-নারী-শিশু) ৫০০ ডলার করে বণ্টন করেন। দেশে দেশে হানাহানির পরিমাণ ক্রমেই বাড়লেও লিবিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড খুবই সীমিত।

আন্তর্জাতিক কারাবরোধ নথি অনুযায়ী লিবিয়ার স্থান ৬১ তম। মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই জরিপটি চালানো হয়। এতে তালিকার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কারাবরোধ নথির জরিপ অনুযায়ী যে সকল দেশে মানবাধিকার সুরক্ষিত হয় সেসব দেশের রেটিং হয় শেষের দিকে। সে হিসেবে লিবিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা অনেক খারাপ।

যেকেউ গাদ্দাফির ছোটো গ্রিন বুক পড়লেই বুঝতে পারবে যে, গাদ্দাফি একজন চিন্তাশীল এবং আলোকিত নেতা। লিবিয়াকে এর আগে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এর বেশিরভাগই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাজ ছিল। লকারবি বোমাহামলা তেমনই একটি উদাহরণ। গত ৩০ বছর ধরেই দেশটির পূর্বদিকে সিআইএ এবং এম১৬ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ভিন্নমতাবলম্বীদের জড়ো করে এসেছে।

লিবিয়া সবচেয়ে ভালো মানের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে এবং প্রতি ব্যারেলে উৎপাদন খরচ মাত্র এক ডলার। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি ব্যারেল তেল উৎপাদন খরচ হলো ১১৫ ডলার। বিশ্বের মধ্যে লিবিয়ার তেল উৎপাদন খরচই সবচেয়ে কম। লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পূর্ণভাবেই লিবীয় সরকারের আওতাধীন এবং এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। কোনো প্রকার সুদ ছাড়াই সকল প্রকার লোন দেয় এই ব্যাংক।

এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে পশ্চিমের ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাণিজ্যিক সংঘাত বিদ্যমান অনেক আগে থেকেই। ভয়াবহ বোম্বিং থেকে লিবীয় নাগরিকদের বাঁচার মতো কিছু নেই। কতিপয় তেল কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকারদের খুশি করতে এই যুদ্ধ। লিবিয়ার সম্পদ লুট করে নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।