গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ইস্যুতে সরকার এখনও নীরব। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাসের পর এক মাস পার হলেও শিক্ষকদের ১৬ অভিযোগের ভিত্তিতে ভিসি-প্রোভিসির পদচ্যুতি দাবি পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের দেয়া আলটিমেটামের সময়সীমাও শেষ হয়েছে। কিন্তু ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ-পদচ্যুতি হয়নি, আনীত অভিযোগেরও কোনো সমাধান হয়নি। শিক্ষকরাও এখন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটছেন।
আপাতত কর্মরতি বা কঠোর কোনো আন্দোলনে যাচ্ছেন না তারা। বুয়েট শিক্ষক সমিতি ১৭ দফা অভিযোগ তুলে ধরে ভিসি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে ৭ এপ্রিল থেকে কর্মবিরতি শুরু করে। এরপর থেকে প্রশাসন-শিক্ষক সমিতি পাল্টাপাল্টি পরস্পরকে দোষারোপ করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রশাসন-শিক্ষক সমিতির অনড় অবস্থানের কারণে অস্থিরতা ও অচলাবস্থা না কাটায় শেষ পর্যন্ত কর্মবিরতির প্রায় এক মাস পর ৪ মে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন।
ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন ৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করে ৫ মে থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন বুয়েট শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর এক মাস পার হলেও দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের বিষয়ে জানতে ৪ জুন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতারা সাক্ষাত্ করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের কাছে আরও সময় চেয়েছেন বলে সমিতির নেতারা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, বুয়েট ভিসির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
এছাড়া সরকার সমর্থক শিক্ষকরা সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ কখনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে নিজ আদর্শের ভিসি নিয়োগ দিতে পারেনি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও বুয়েটে এ সরকারের সমর্থিত ভিসি ছিল না। বুয়েট ইস্যুতে আপাতত সরকারের জাহাঙ্গীরনগর কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা-ভাবনা নেই। এ বিষয়ে সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে শিক্ষক সমিতির নেতারাও বুঝতে পেরেছেন ভিসি ও প্রো-ভিসিকে সরাতে সরকারের কোনো সদিচ্ছা নেই।
সরকার তাদের বোঝাচ্ছে, অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে। শিক্ষকদের কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি ভবিষ্যতে না দেয়ার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিক্ষকদের ম্যানেজ করারও চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার। আর এসব কারণেই আপাতত কর্মবিরতি কিংবা কঠোর কোনো আন্দোলনে যাচ্ছে না শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের দাবি থেকে পিছু হটছি না। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা আপাতত কর্মবিরতিতে যাচ্ছি না। মাঝে মধ্যে মানববন্ধনসহ নিয়তান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। একই সঙ্গে আমরা এখনও প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি।
প্রসঙ্গত, বুয়েট শিক্ষক সমিতি ১৬টি অভিযোগ এনে ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
অভিযোগগুলো হলো বুয়েটের ঐতিহ্য ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভঙ্গ করে অর্ধশতাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম হাবিবুর রহমানকে প্রো-ভিসি নিয়োগ, ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. এসএম নজরুল ইসলাম যোগদানের পরই বিশেষ উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রার পদে ভূতাপেক্ষ নিয়োগসহ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল, বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পদে বদলি ও একজন শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব বাতিল, রেজিস্ট্রিকৃত বিষয়ে পরীক্ষা না দেয়া দুই ছাত্রকে পরীক্ষায় কৃতকার্য করা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও বুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, আশপাশের এলাকার দোকান ও বাজার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্ত, নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রো-ভিসিকে সিলেকশন গ্রেড প্রদান এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেড, টাইমস্কেল প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানেরও অভিযোগ তোলেন শিক্ষক সমিতি নেতারা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।