আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দলীয়করণ ও বুয়েট

ঘটনার শুরুটা অনেক আগে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৎকালীন উপাচার্য ড: এ এম এম শফিউল্লাহকে মেয়াদ সম্পন্ন হবার পূর্বেই পদ থেকে সরিয়ে দেবার গুঞ্জন বাতাসে ভাসছিলো। ভিসি হবার জন্য আওয়ামী পন্থী শিক্ষক পুরকৌশল বিভাগের ডঃ জয়নাল আবেদীন, ডঃ হাবিবুর রহমান; যন্ত্রকৌশলের ডঃ নজরুল ইসলাম, ডঃ আমিনুল হক জোর তদবির চালান। এদের মধ্যে ডঃ আমিনুল হক , ডঃ হাবিবুর রহমান, ডঃ জয়নাল আবেদীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। অন্যদিকে ডঃ নজরুল ইসলামের সাথে বুয়েট ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহশিক্ষক হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম এ দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বেশ খানিকটা।

যদিও সবার নজর ছিলো উপাচার্য পদের দিকে, পদটিতে বসার পন্থার ব্যাপারে প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ছিলো। বুয়েটের একটা ঐতিহ্য হচ্ছে বিদায়ী উপাচার্য পদ ছাড়ার সময় কিছু নাম প্রস্তাব করে যান, প্রস্তাবকৃত তালিকার প্রথম নামটিই সাধারনত সরকার ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেন। একই এলাকার লোক হবার কারণে উপাচার্যের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার চারমাসের মাথায় বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এ নিয়োগে একই বিভাগের অধ্যাপক তৎকালীন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান অসন্তুষ্ট হন। রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বুয়েটের ষাট বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো হাবিবুর রহমান প্রোভিসি পদে নিয়োগ পান।

বুয়েটের এডমিনে প্রোভিসি পদের কোনো অস্তিত্ত্ব ছিলো না, শুধু দলীয় বিবেচনায় হাবিবুর রহমান গ্রুপকে সন্তুষ্ট রাখতে নতুন পদ সৃষ্টি কওরে এ নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ সিনিয়রিটির তালিকায় হাবিবুরের নাম ছিলো ঊনষাট নাম্বারে। সুতরাং দলবাজি করে নতুন পদ সৃষ্টি করে সরকার আটান্ন জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে হাবিবুর রহমানকে নিয়োগ দেন। শিক্ষকদের অরাজনৈতিক অংশটি এর বিরূদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে অনাস্থা দেয়ার উদ্যেগ নেয়। কিন্তু ভবিষ্যতে উপাচার্য পদে নিয়োগের পথ পরিষ্কার রাখতে আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকবৃন্দের হস্তক্ষেপে এ পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে।

নানা ডামাডোলের মধ্যে ঠাণ্ডা মাথার শফিউল্লাহ সাহেব তার মেয়াদ সম্পন্ন করেন। বিকল্প যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সরকার উপাচার্য নিয়োগের বয়সসীমা লঙ্ঘন করে ষাটোর্ধ্ব নজরুল ইসলাম কে উপাচার্য নিয়োগ দেয়। পদ বঞ্চিত আমিনুল হককে ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে বুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা এ তিনটি পদেই বর্তমানে সরকারের মোসাহেবদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত উপাচার্য পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে।

যার ফলে বুয়েটের জুনিয়র-সিনিয়র সম্পর্ক খারাপের চরমে উঠে। ছাত্রলীগের জুনিয়ররা সিনিয়র অরাজনৈতিক বা অন্য মতের ছাত্রদের ডমিনেট করার চেষ্টা কওরে। এরকম একটি ঘটনায় বুয়েট কয়েক মাস বন্ধ থাকে; হল খালি কওরে দেয়া হয়। বুয়েটে সেশন জট বাড়তে থাকে। অন্য মতের ছাত্রদের পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি আবার ঘটেছে।

ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের উপর দফায় দফায় হামলায় মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন ছাত্রফ্রন্টের গৌতম দে এবং মামুন মোর্শেদ খান। ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলার কয়েকদিন পূর্বে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়ার হুমকি দেয়, ক্যাম্পাস না ছাড়লে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। হুমকিপ্রাপ্ত ছাত্ররা ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা এবং উপাচার্যের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলে উনারা ছাত্রফ্রন্টের কর্মীদের হল ছেড়ে দেবার পরামর্শ দেন এবং ছাত্রলীগের কাছে নিজেদের অসহায় বলে দাবি করেন। পরবর্তীতে আহসান উল্লাহ হলের ক্যান্টিনে নৃশংস হামলা করে গৌতমকে ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ স্মৃতি হলের বারান্দায় ফেলে রাখে। এ প্রভাব প্রতিষ্ঠার মূল কারণ চাঁদাবাজি ।

বুয়েটের নানা সংস্থাপন কাজের টেণ্ডার, হল ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া সব জায়গা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার বিরূদ্ধে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে পলাশী মোড়ে নির্মিতব্য বহুতল বুয়েট বাজারের দোকানগুলোতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়মিত বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা একেকজন সনি হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা হয়। বুয়েটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ রেজিষ্ট্রার পদে দলীয় নিয়োগ-প্রচেষ্টায় অতি সম্প্রতি আওয়ামীমদদপুষ্ট এ উপাচার্যের আরেকটি কীর্তি বেরিয়ে এসেছে। যার প্রতিকার চেয়ে শিক্ষকরা অবিরাম কর্মবিরতিতে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.