কিছু পাওয়ার অপেক্ষা আছে বলেই এই পথ চলা... কল্পনা আছে বলেই বেচেঁ থাকা ''দুঃখিত,এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে একটু পর আবার ডায়াল করুন"
এইবার নিয়ে ২০ বার। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ এতো রাগ করতে পারে?না হয় আমার একটু দোষই ছিল,তাই বলে এত রাগ করতে হবে?মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হবে?দিয়া পারেও বটে। এত জেদি আর অভিমানি মেয়ে খুব কম ই আছে।
আজ বিকেলে দুজনের দেখা করার কথা ছিল। হঠাৎ একটা জরুরি কাজ পরে যাওয়াতে ওকে ফোন দিয়ে বলি
"জান,সরি। ইয়ে মানে আমার না একটা জরুরি কাজ পরে গেছে। আজ আর আসতে পারব না। সরি জান।
কিছু মনে করো না প্লিজ। "
একথা বলতে বলতে ওপাশে এতক্ষন কালবৈশাখী তৈরি হয়েছে। এবার তা ঝড়ো বেগে বইতে শুরু করলো।
"কি পাইছো তুমি,হে?আমাকে আসতে বলবে,আমি কষ্ট করে রেডি হবো,তারপর হঠাৎ ফোন দিয়ে বলবে যে আসতে পারবো না। বাহ বা বাহ!
আমার চেয়ে তোমার কাছে কাজই জরুরি হয়ে গেলো?আমি কিছুই না?আমার কোন দাম নেই?গুরুত্ত নেই?''
আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম,কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে কিছু বলার আর সাহস হলো না।
কারন ওর রাগ উঠলে তখন চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কথা বলতে গেলেই ওর রাগ দ্বিগুন বেড়ে যায়।
ও আবার শুরু করল,''কথা বলতেছ না কেন?আমার প্রশ্নের জবাব দাও। "
"ইয়ে মানে কি বলবো?আমি সত্যিই সরি জান''
"চুপ একদম চুপ। তোমার সাথে আর কোন কথা নাই।
তুমি আমাকে আর ফোন দিবে না। "
এই বলে লাইনটা কেটে দিল।
হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম যে রাত অনেক হয়ে গেছে। শেষবারের মতো চেষ্টা করলাম। নাহ আজ আর মোবাইল অন করবেনা।
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে ওর ভার্সিটির সামনে গিয়ে ওর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর ও আসল। আমি এগিয়ে গিয়ে সরি বললাম। জিজ্ঞেস করলাম মোবাইল বন্ধ কেন?
ও জাস্ট একটা কথাই বলল,"তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই"
এই বলে চলে গেল।
বুঝতে পারলাম মহারানী ভীষন রাগ করেছে।
কিছুই করার নাই। একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেতে লাগলাম আর মহারানীর ক্লাস শেষ হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ভাবলাম ওর কি কোনদিনই বোঝার ক্ষমতা হবে না যে একটা মানুষের জরুরি কাজ থাকতেই পারে। আমিতো ইচ্ছে করে এমনটা করিনি।
পরে ভাবলাম সব মেয়েই হয়তো এমন। আর আমারজনতো আরো একধাপ উপরে!
এ পর্যন্ত যতবার ঝগড়া হয়েছে সব সময়ই আমাকেই সরি বলে সব কিছু থামাতে হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে চা খেতে থাকলাম।
প্রথম ক্লাস এর সময় শেষ হতেই দেখি যে ও বের হয়ে এসেছে। কারন ও খুব ভালো করেই জানে যে আমি ওর জন্যে অপেক্ষা করতে থাকবো।
এই একটা জিনিসই মহারানী এতদিন এ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
আমার কাছে এসেই,"এখানে কি কর?আমি না বলছি তোমার সাথে আর কোন কথা নেই। তবুও কেন অপেক্ষা করতেছ?"
(যদিও দিয়া ভালো করেই জানে এবং নিজে থেকেই ক্লাস না করে বের হয়ে এসেছে। তবুও একটু ভাব নিলো। মানে পরাজয় মেনে নিবে না)
আমিও সুযোগের সদ্বব্যবহার করলাম।
এমন সুযোগ কমই পাওয়া যাবে।
"আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করতেছি কে বলল?আমিতো চা খাচ্চিলাম?"
একথা বলাতে খুব একটা লাভ হল না। নারী জাতি পরাজয় মানতে নারাজ।
"দেখ,বেশি ভাব নিবে না বলে দিলাম। আমি খুব ভালো করেই জানি যে তুমি আমর জন্যেই অপেক্ষা করতেছ"
কি আর করার।
আমিই পরাজয় বরন করে স্বীকার করে নিলাম।
তারপর ও বলল,"নাশতা করছো?নাকি রাগ করে করো নাই?"
"করছি"
"কী খাইছো?''
"চা"
"চা খেয়ে সকালের নাশতা হয়?এভাবে করলেতো শরীর খারাপ করবে। নিজের শরীরের প্রতি কোন যত্ন নাই। খালি আছে রাগ নিয়ে। আমি খেয়াল না রখলে এতদিনে তোমাকে হাসপাতালে থাকতে হতো,বুঝলা?"
আমি সুবোধ বালকের ন্যায় বললাম"বুঝেছি"।
এই হল আমার হবু বৌ। রাগ করে একবার বকবে। রাগ থামার পর আবার বকবে। মাঝখান থেকে আমি উভয় সংকটে। আমার 'ছুটি' গল্পের মাখনলালের কথা মনে পড়ে গেল।
সেও এইভাবে দুদিক থেকে তার ভাই ফটিককে বকা খাওয়াতো। বুঝলাম যে আমার হবু বৌ এর মাঝে মাখনলালের ন্যায় শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিয়ের পর না জানি আরও কত কি দেখতে হবে। আমার এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ বাধা পড়ল ওর কথায়,"কি হল,বসে আছ কেন?এভাবে দর্শনিকের মতো ভাবনা বাদ দিয়ে খেতে চলো। আমারও খিদে লেগেছে।
"
আমি মহারানীর কথামত উঠে পড়লাম এবং তাকে নিয়ে খেতে গেলাম। জানতাম সেও খায়নি।
বাইরে রাগ দেখালে কি হবে,ভেতরে ঠিকই আমার জন্যে অনেক ভালবাসা। কিন্তু সেটা ওভাবে প্রকাশ করে না। আমিও ঠিকই ওর মনের কথা বুঝতে পারি।
তাইতো সবসময় আগে সরি বলে রাগ ভাঙ্গাই।
আসলে ভালোবাসা জিনিসটাই এমন। দুজন দুজনকে বুঝতে পারা,কেয়ার নেয়া,আর দুজনের খুনসুটি। খুনসুটি না থাকলে মনে হয় ভালোবাসা জিনিসটা কি সেটা বোঝা হত না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।