লক্ষ্যহীন ব্যাক্তির অন্তহীন পথে ক্লান্তহীন হেঁটে চলা প্রচন্ড জ্বর নিয়েই কাজ করতে থাকে রিয়াজ । পিসির ফ্রন্ট গুলোকেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে । রিয়াজ বুঝতে পারছে তার পক্ষে কাজকরা সম্ভব না । তাই তাড়াতাড়ি একটা পেইন কিলার খেয়ে শুয়ে পড়লো । গাঁয়ে জ্বর আবার দুই দিনের মধ্যে এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে ।
কি করবে বুঝতে পারছে না রিয়াজ । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাঙা খাটটায় শুয়ে আছে । শুয়ে শুয়ে ভাবছে কাকে দিয়ে কাজটা করানো যায় ! তারেক , আরাফাত,উচ্ছ্বাস একের পর একনাম মাথায় আসতে লাখলো রিয়াজের । শেষপর্যন্ত রিয়াজ উচ্ছ্বাসকে দিয়ে কাজটা করাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো । আসলেই , বন্ধুরা আছে কোন দিনের জন্য !
উচ্ছ্বাসকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে গিয়েই মনে পড়লো মোবাইলটা আম্মার ঘরে ।
বাইরে গেলেই হেডফোনের একটা প্ল্যাগ কানে লাগানো থাকে আর হেভীমেটালের গান বাজতে থাকে । এমন কয়েকটা গানও আছে যা শুনলে মনে হবে গায়ককে মুগুর দিয়া পিটাচ্ছে। বাসায় আসলেই চার্জ দিতে হয় মোবাইলটা ।
এখন আম্মার ঘরে গেলেই কিছু বয়ান শুনতে হবে আর আরামের শুয়াটাও নষ্ট হবে । এই ভেবে রিয়াজ রিফাতকে ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।
রিফাত রিয়াজের ছোট ভাই , চরম বান্দর আর অসম্ভব মেধাবী একটা ছেলে ।
> রিফাত , আমার মোবাইলটা দে তো ।
> its quiet impossible for me to উইঠ্ঠা গিয়া মোবাইল আনোন ।
> ইংলিশ মারো , উইঠ্ঠা আইলে উশ্টা দিয়া বাইরে ফালাইয়া দিমু ।
> কপাল খালি আমারে উশ্টা , দিতাছি ।
> ইহাই তোমার জন্যে মঙ্গল জনক , বাছা ।
> নাও , এখন কোন মাইয়ার সাথে কথা কইবা ?
> যা ফুট , মাইয়া পাইনের লগে কথা কওয়নের টাইম নাই ।
> হঅ হঅ , আমি সবঅই জানি ।
> লাথি দিয়া চাঁফার দাঁত ফালাইয়াদিমু ।
যদিও রিয়াজ জানে লাথি দিয়ে চাপার দাঁত ফেলা সম্ভব না তবুও বৃথা চেষ্টার কল্পপা করা ।
উচ্ছ্বাসের নাম্বারে কল দেওয়ায় সুকন্ঠী মেয়ে বলে br />
"আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মূহর্তে বন্ধ আছে । আপনি যদি টেলিটক গ্রহক হয়ে থাকেন তাহলে ভয়েস এসএমএস পাঠাতে পারেন । "
ইশ্ কি মিষ্টি কন্ঠ ! যদি প্রেম করতে পারতাম ! আমি তো উচ্ছ্বাসকে না তোমাকে এসএমএস পাঠাতে চাই । মনে মনেই ভাবে রিয়াজ । ভাবতে ভাবতে কল্পনার রাজ্যে চলে যায় ।
সেখানে রিয়াজ আর সুকন্ঠী মেয়েটা পার্কে বসে বাদাম খাচ্ছে , রিকশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে , হাত ধরে রাস্তায় হাটচ্ছে ..........| কিন্তু মেয়েটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না । যতবার চেষ্টা করছে ততবারই মুখ লুকিয়ে নিচ্ছে ।
রিয়াজ বিড় বিড় করে বলতে থাকে -
"ওগো সুকন্ঠী , তোমারচাঁদ বদনখানি দেখিয়ে ধন্য করো আমায় , আলোকিত করো আমায় । "
হঠাত্ , nokia tune টা বেঁজে ওঠলো ।
মোবাইল স্কিনে ভেসে ওঠলো br />
RIA is calling
> হ্যালো ।
>হ্যালো , তুমি কই ?
> আসমানে পরীদের সাথে ডেইটে আছি ।
> তাড়াতাড়ি নেমে এসেবাগিচাগাঁও আসো ।
> এসাইনমেন্ট করতেছিলাম ।
> আমারটা শেষ , তোমার বাকীটা আমি করে দিবোনে ।
> কত্ত ভালো তুমি ! > কাজ করে দিলো তো ভালো হবোই ।
> হুহ , আমি মনে হয় কোন কাজ করে দেয় না ?
> দাও , তবে অপ্রয়োজনীয় কাজই বেশি করো ।
> ও আচ্ছা , তাই না ? আর তোমার কোন কাজ করে দিলে আমার নাম রিয়াজ না ।
> তাড়াতাড়ি অন্য নাম খোঁজো । দাড়িয়ে আছি তো......
জ্বরটাও কিছুটা কমে গেছে । তাই না করলো না ।
তারা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এসেছে কিন্তু কারও মুখে কোন কথা নাই । নিস্তবধতা ভাঙানোর সিদ্ধান্ত রিয়াজই নিলো ।
> এখন বলো , আমার তলব কেন পড়লো ?
>বিশেষ কোন কারণ নাই । এমনেই ঘুরতে মন চাইলো তাই ডাকলাম ।
> ইদানিং বেশি ফাজিল হয়ে গেছো তুমি |
> আমি ফাজিল না তুমি ফাজিল |
এই গরমে তর্ক করার কোন ইচ্ছা না থাকায় কথা না বাড়িয়ে রিয়াজচুপ করে থাকলো |
> আসলে একটা কথা বলার জন্যে তোমাকে ডেকেছি |
> তো আপনি এতক্ষণ পেটের ভিতর রাখলেন কেন ?
> বলি ?
> আরে অনুমতি নেওয়ারকি আছে!
> আচ্ছা , শোন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালবাসে ।
কিন্তু ছেলেটা বুঝে না ।
> না জানাইলে বুঝবে ক্যামনে ?
> আরে আগে শুনোই না ।
> এসব ফালতু গল্প শোনানোর জন্যে আমাকে ডাকসো ?
> ওই জানো , আমি যে তোমাকে ভালবাসি ।
কিছুটা রাগান্বিত স্বরেই বললো রিয়া । পৃথিবীতে কখনও কেউ মনে হয় এভাবে প্রোপজকরে নি ।
রিয়াজ অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে । যে ছেলেটা কোন মেয়ের দিকে তাকালে মেয়ে বাসায় গিয়ে গোসল করতো , ওই ছেলেকে আবার কোন মেয়ে ভালবাসতে পারে !
সিগারেটটার দিকে খেয়ালই নেই রিয়াজের । তার হঠাত্ পাওয়া ভালবাসা হঠাত্ই যেন মিলিয়ে গেছে আকাশে । কত সুন্দরই না ছিলো তাদের পূথিবী । বিধাতার বিধি তাদের সুন্দর থাকতে দেয় নি ।
রিয়া চলে গেছে না ফেরার দেশে । আর রিয়াজ যেন জীবিত থেকেও মৃত ।
কোন এক বিবর্ণ বিকেলে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে গাঁ ঘেষে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।