১৯৭৭ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসাবে ক্রিকেটে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স তাতে নুতন আশার সঞ্চার করেছে। দেশে এবং বিদেশে আমাদের ক্রিকেটারদের জয় জয়কার এরই মধ্যে মেয়েদের ক্রিকেটেও ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জিত হয়েছে। অভিভাবকদের মাঝেও মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এখন তারা তাদের ছেলে মেয়েদের পেশাদারি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহিত বোধ করছেন। ক্রিকেট এখন শুধু খেলাই না রোজগারের একটি ভাল ক্ষেত্রও বটে। ক্রিকেটাররা এখন শুধু বড় অংকের ম্যাচ ফিই পাচ্ছেন না অধিকাংশ খেলোয়াড় এখন মাসিক বেতন ভুক্ত, সেই সাথে আইপিএল, বিপিএল, জাতীয় ক্রিকেট, ক্লাব ক্রিকেট আর খেলার সরঞ্জাম ব্যাবহার থেকে ভালই উপার্জন করছেন।
তার উপর কেউ কেউ আবার টিভি বিজ্ঞাপনেও ভাল সময় দিচ্ছেন। একসময় শৌখিন খেলোয়ারদের আগ্রহেই ঢাকা তথা পুরা দেশের ক্রিকেট পরিচালিত হত এখন অনেকটা পেশাদারি মনোভাব এসেছে।
খেলোয়াড়রা টি-২০, ওয়ানডে আর টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহন ফি বা ম্যাচ ফি বাবদ যথাক্রমে ৩৫ হাজার, ৬০ হাজার এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন। ওয়ানডে রেঙ্কিং এর ১ থেকে ৩নং দলকে হারালে ১ লাখ ২০ হাজার; ৪ থেকে ৭নং দলকে হারালে ৮০ হাজার আর তারপরের দলগুলিকে হারালে ৬০ হাজার টাকার মত করে বোনাস দেয়া হয়। সঙ্গত কারনে টেস্টের বোনাসের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াই সমীচীন মনে করছি! দ্বাদশ খেলোয়াড়কে যারা খেলেন তাদের অর্ধেক দেয়া হয়, শুধু পানি বহন করে ভালই আয়, কি বলেন? একসময় অস্ট্রেলিয়ান এ. বিকেলকে বলা হত সব চেয়ে বেশি আয় করা দ্বাদশ খেলোয়াড়, মূল একাদশে তার স্থান হতনা কিন্তু দ্বাদশ ব্যাক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
সে যাই হোক ফিরে আসি বিসিবির সাথে খেলোয়াড়দের বাৎসরিক চুক্তির ব্যাপারে, ২০১২ সালে ১৫ জন খেলোয়াড়কে এ+, এ, বি, সি ও রুকি এই ৫ ক্যাটাগরিতে চুক্তিভুক্ত করা হয়েছে, এখন খেলা হউক বা না হউক তারা মাস শেষে ন্যূনতম প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার করে পাবেন (চুক্তির ব্যাপারটি মিডিয়ায় আলোচনা না হওয়ায় সঠিক হিসাব দেয়া গেল না)।
পাশের দেশের আইপিএল কিছু ক্রিকেটারের কপাল খুলে দিয়েছে, এখন পর্যন্ত রাজ্জাক, আশরাফুল, তামিম আর সাকিবই এর স্বাদ নিতে পেরেছেন। না খেলেও তামিম যেখানে প্রায় ৪০ লাখ টাকা (ভিত্তি মূল্যের হিসাবে) টাকার মত কামিয়েছেন সেখানে সাকিবের আয় প্রায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় দলের অন্যান্য তারকা খেলোয়াড়দের ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন না। কয়েকদিন আগে গাটের পয়সা খরচ করে নাসির একটি প্রদর্শনী ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন কানাডা শোনা যায় তিনি এখন পর্যন্ত পারিশ্রমিকই পান নাই, আশরাফুল মাইনর লীগ খেলতে ইংল্যান্ড আছেন তবে তার আয় সাকিব তামিমদের কাছে নস্যি।
এবার আসি বিপিএল সমাচারে, নাফিস, সাকিব, তামিম, আশরাফুল, মুশফিক ও কাপালি এই ৬ জন ছিলেন আইকন প্লেয়ার, নিয়ম অনুযায়ী তারা সর্বোচচ পারিশ্রমিক পাওয়া স্থানীয় খেলোয়াড়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি টাকা পাবেন, সে হিসাবে তাদের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। এত গেল আইকনদের কথা বিপিএল এ ৮০ জন বাংলাদেশি খেলোয়ারকে নিলামে তোলা হয়েছিল তার মধ্যে প্রায় সবাই কোন না কোনও দলে ভিড়তে পেরেছেন এমনকি সর্বনিম্ন 'সি' ক্যাটাগরির খেলোয়াড়রাও স্থানীয় মুদ্রায় ১৮ লাখ করে পেয়েছেন!
এখন দেখা যাক জাতীয় ক্রিকেটে আয় রোজগার, ১ম ২য় আর ৩য় রাউন্ডে ম্যাচ প্রতি খেলোয়াড়রা ১০, ১৫ ও ২০ হাজার টাকা করে পান। যদিও এই ফরম্যাটে খেলোয়াড়দের আরও প্রণোদনা দিয়ে লম্বা ম্যাচের জন্য তৈরি করার কথা তথাপি অর্থনৈতিক কারনে জাতীয় ক্রিকেটে বিসিবির রয়েছে চরম অনিহা। ক্লাব ক্রিকেটে কিছু মুখ চেনা তারকারা ভাল অংকের টাকা কামাই করে থাকেন, প্রতিযোগিতা শুধু আবাহনী বা মোহামেডানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না, ভিক্টোরিয়ায়, গাজী ট্যাংক, ওল্ড ডিওএইছএস(প্রাইম ব্যাংক) ও এখন শিরোপার দাবীদার আর এতেই খেলোয়াড়দের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে, একসময় লীগ থেকে তারা আয় করতেন ৮-১০ লাখ টাকা এখন তাদেরই আয় ৩০ লাখের ঘরে। তারকা খেলোয়াড়রা যে সরঞ্জাম ব্যাবহার করেন তার থেকেও টাকা আসে, সরঞ্জাম প্রস্তুতকারীদের সাথে ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মত চুক্তি থাকে, ৫০ বা ১০০ রান করলে বোনাস টোনাসও থাকে সাথে ফ্রি সরঞ্জামত আছেই।
আইপিএল, লীগ ক্রিকেট বা সরঞ্জাম ব্যাবহার থেকে আয় সবাই করতে পারেন না তারপরেও তাদের আয় মোটেও ফেলনা না। এদানিং বিজ্ঞাপনেও ভাল সময় দিচ্ছেন হাল আমলের ক্রিকেটাররা তবে এ থেকে তাদের আয় রোজগার অজ্ঞাত। ভাল খেললে বোনাসের ব্যাবস্থা থাকাই উচিত কিন্তু খারাপ খেললে কোনও জরিমানার ব্যাবস্থা কি রাখা উচিত না? হয়ত এটা করা হয় না খেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে। আবার এটাও ভাবা দরকার তারা যে পরিমান আয় করছেন তা অন্যান্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের তুলনায় যৎ সামান্য।
দেশে এখন সবাই ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থাকতে চায় কারন এটি আর শুধু খেলা না তরুন তরুণীদের জন্য ভাল একটি ক্যারিয়ারও বটে।
কিন্তু দেশের ক্রিকেট পরিসীমাটা কি আদৌ পেশাদার? ঘরোয়া লিগে খেলোয়াড় আর কর্মকর্তাদের মাঝে অহেতুক মাখামাখি; মাঠে খেলোয়াড়, আম্পায়ারদের একে অন্যের সাথে বচসা; স্লেজিংয়ের নামে দুরব্যাবহার; দলা দলি আর আঞ্চলিকতা; রাজনৈতিক সখ্যতা; অহেতুক টাকার ঝনঝনানি; অক্রিকেটিও লোকদের অনুপ্রবেশ এই সব কিছুই খেলার পরিবেশকে দিন দিন বিষাক্ত করছে। সব ক্ষেত্রেই যে খেলোয়াড়রা দায়ি তা বলা যাবেনা তারপরেও এটা বলা যায় যে এত টাকা কামানো খেলোয়াড়রা মাঠে সংযত আচরণ দেখাতে পারছেনা। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত দিন শেষে ক্রিকেট কিন্তু টাকার খেলানা এটা ভদ্র লোকদের খেলা।
সুনামগঞ্জ, ৯ জুন, ২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।