দ্যা ব্লগার অলসো.....
পালাচ্ছি আমি; হ্যাঁ, বাড়ি ছেড়ে পালাতে হচ্ছে আমাকে। কারণ, এখানে থাকলে নির্ঘাত মরতে হবে আমাকে। এতো তাড়াতাড়ি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যাবার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
গ্রাম থেকে শহরে এসছিলাম দু’ চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে হবে, ছোট-ভাই বোনগুলোকে মানুষ করতে হবে, এরকম আটপৌরে হাজারো স্বপ্ন নিয়েই ইট-পাথর, সিমেন্টের এ শহরে আসা।
আর এগুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে বেঁচে থাকতে হবে আমাকে।
অনেক কষ্টে এক কামরার এ ঘরটা ভাড়া নিয়েছিলাম। ব্যাচেলরদের জন্য এ শহরে রুম পাওয়া আর সোনার হরিণ হস্তগত করা একই কথা। বাড়িওয়ালাদের ভাব-সাব দেখলে রাগে পিত্তি জ্বলে যায়। যেন কম্মিনকালেও উনারা কুমার ছিলেন না!
এঘাট-ওঘাট, এ গলি-ও গলি ঘুরে, শেষে শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে এ কামরাটা মিলেছিলো।
হয়তো একপ্রান্তে বলেই ভাড়া তুলনামুলকভাবে সস্তা। আর তাতেই আমার এক কথায় রাজী হয়ে যাওয়া। কিন্তু বাড়িটার ইতিহাস জানা ছিলোনা তখনও আমার। আমার আগে যারাই এখানে থাকতে এসেছে তাদের সবাইকেই পালাতে হয়েছে। ইচ্ছে করে পৈত্রিক প্রাণটা কেই বা খোয়াতে চায় বলুন!
মোট চারটা ঘর এক সারিতে।
সাদা চুনকাম করা, রঙের বালাই নেই। এক রুম পাঁচশো টাকা ভাড়া। এক রুমের মধ্যেই থাকা-খাওয়া। প্রাকৃতিক কর্ম সারার জন্য চার কামরার জন্য একটু দুরে বাইরে একটা টয়লেট।
জায়গাটা নির্জন।
গাছ-গাছালি ঘেরা। চারিদিকে গা ছমছম করা নিস্তব্দতা। শহরের মধ্যে এরকম নির্জনতা কেমন যেন বেমানান। প্রথম দিকে আমি আমলে নিইনি এসব। তবে এখন মনে হচ্ছে এ নির্জনতাও রহস্যময়।
ব্যাপারটা শুরু হয় প্রথম দিনেই। চাকরির তালাশ করে ক্লান্ত হয়ে আমি যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম ঠিক তখনই। অন্ধকার হবার যা দেরি। তান্ডব শুরু হয় ওদের।
প্রতিরাতেই ঘটতে থাকে একই ঘটনা।
আঁধারের মধ্যেই বিচরণ শুরু হয় ওদের। আমাকে জেগে থাকতে বাধ্য করে। চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারিনা। । আমি দেখেছি আলোকে ভীষণ ভয় ওদের, আলো জ্বালালেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যায়না। তাই আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখি, আর সেই সাথে ঘুমেরও বারোটা বাজে।
স্নায়ুর উপর এটা যে কিরকম অসহ্য চাপ, বলে বোঝাতে পারবোনা। রাতে যখন প্রাণীগুলো আক্রমণ শুরু করে নিজেকে তখন এডগার অ্যালান পো'র রহস্য উপন্যাসের চরিত্র মনে হয়।
ভুতূরে বাড়ি আর......!
অনিদ্র্রায় চোখে কালি পড়ে গেলো আমার।
খুব ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করি। চট করে মনে হলো এটাই ওদের পদ্ধতি। একটা মানুষ একটানা অনেক দিন না ঘুমালে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঝিমিয়ে পড়তে বাধ্য। তাকে বিষন্নতায় পেয়ে বসবে, কাজে কর্মে উৎসাহ আসবেনা। এভাবেই আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
হ্যাঁ, এভাবেই মারতে চাইছে ওরা আমাকে। আর আমি যদি এখানে থাকি নির্ঘাত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে।
সুতরাং; সময় থাকতেই পালাতে হবে। কারণ, আমার বুক ভরা স্বপ্নগুলোকে সামান্য ‘‘ছারপোকা’’র কাছে জলাঞ্জলি দিতে পারিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।