আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জীবন পুণ্য করো দহন দানে.....

কোথায় যাবো? কি করবো আমি? জানিনা ........ ভাবনাগুলো সব এলোমেলো, তালগোল পাঁকিয়ে যায়.. যেদিকে তাকাই , ধু ধু অন্ধকার!! কোথাও কেউ নেই......... শূন্যতার শূন্যদ্যানে ক্রম নিমজ্জিত হয়ে চলেছি.... পায়ের তলায় মাটি নেই...... জীবনের সেই চরম অন্তিম মূহুর্তটিতে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো মিলি। হলের সিট ছেড়ে দেবার পর, ওদের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। মিলি আমাকে আশ্রয় দিলো। হয়তো সুপ্তের প্রতি আত্মিক টান থেকেই, নয়তো শুধুই বন্ধুত্বের টানে। এত কিছুর হিসেব কষতে যাইনি আমি কখনও, চাইওনি।

শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছিলো। মানষিক ধকল, অদূর ভবিষ্যতের মুহুর্মূহু চিন্তা, দিনকে দিন মুষড়ে পড়ছিলাম আমি। এত বড় পৃথিবীতে কেউ নেই আমার আপনজন। অসীমের মাঝে সহায় সম্বলহীন ক্ষুদ্র এক আমি। নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে.... রাতের খাবারের পর মিলির মা আমাকে ডেকে পাঠালেন উনার রুমে।

ভারী পর্দা সরিয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। রাশভারী চেহারার মহিলাটি শান্ত স্থির চোখ দুটি তুলে তাকালেন আমার দিকে। চমকে উঠলাম আমি!!! বুকের ভেতর হাজারো জলপ্রপাতের কলতান। সেই চোখ, সেই চাউনী..... হুবুহু এক! যে চোখের দিকে তাকিয়ে একদিন আমার পুরো পৃথিবী হয়েছিলো ওলোট পালট!!!! মিলির মায়ের চোখে সুপ্তের অবিকল আদল। আমি জানি, জানতাম খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিলো সেটা।

উনি তো সুপ্তের ফুপু হোন। চেহারায় আদলে মিল থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ কিযে হলো আমার! সুপ্তের মৃত্যুর পর আমার দুচোখে ঝরেনি এক ফোঁটা জল পর্যন্ত, সেই চোখে হঠাৎ শুরু অবিরাম বর্ষন ধারা। উনি একটা কথাও বললেন না, আমাকে কাঁদতে দিলেন। মিলির মা, সুপ্তের ফুপু উনার পরামর্শে পরদিন বিকেলে গেলাম উনার পরিচিত একজন লেডি ডক্টরের কাছে।

উনি সবকিছু দেখেশুনে কয়েকটি টেস্ট দিলেন, জানতে চাইলেন বাচ্চার বাবার কথা । সে সাথে নেই কেনো, ইত্যাদি ইত্যাদি? আমি জানালাম, আমি অবিবাহিতা। কথাটা জানাবার সাথে সাথেইএকরাশ বিরক্তি ঝরে পড়লো তার চেহারায়। স্পস্ট করে জানিয়ে দিলেন, কোনো রকম অনৈতিক কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। মুক্তি চাইলে অন্য কোথাও পথ দেখতে পারি।

ক্লান্তি, শ্রান্তি, অপমান, অবষন্নতায় পুরো পৃথিবী তখন আমার সামনে দোদুল্যমান । উঠে দাড়ানোর মত শক্তিও অবশিষ্ঠ ছিলোনা দুপায়ে। তবুও চাইলাম বের হয়ে আসতে । উঠে দাড়াতে গিয়ে পুরো পৃথিবী টলে উঠলো সামনে। কতক্ষণ, কিভাবে, কোথায় ছিলাম জানিনা।

কপালে পরম মমতাময়ী এক স্নেহস্পর্শে জেগে উঠলাম এক সময়, চোখ মেলে চাইলাম না। মন চাইছিলোনা না এমন মধুর একটি স্বপ্ন ভেঙে দিতে। কবে কোনদিন ঠিক ঠিক শেষবার এমন একটি স্নেহস্পর্শী হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙেছিলো আমার মনে পড়ে না! প্রাণপণে চোখ বুজে রইলাম আমি। বেশ বুঝতে পারছিলাম, দুচোখ বেয়ে প্রবাহিত জলধারায় বালিশ ভিজে যাচ্ছে। অসম্ভব কোমল কন্ঠে নাম ধরে ডাকলেন আমায়।

চোখ মেলে চাইতেই দেখলাম, সেই কঠোর কঠিন মুখখানিতে স্নেহময়ী জননীর ছায়া। আশ্বাস, নির্ভরতার প্রতিচ্ছবির এক মমতাময়ী নারী। সেই লেডি ডক্টর!!! সব রকমের সহযোগীতার আশ্বাস দিলেন তিনি। জানালেন তার জীবনের অতীত কাহিনী। হাজার হাজার শিশুর জন্মদাত্রী তিনি আজ অথচ নিজের কোল চিরশূন্য জীবনের কোনো এক অতীত ভুলে।

তিনি বললেন, খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে। আমার সিদ্ধান্তকেই যে কোনো মূল্যে স্বাগত জানাবেন তিনি। অনেক ভাবনার পরেও আমি কিছুতেই পারলাম না, নিজের কাছে হেরে যেতে। আমি খুব ভেবেচিন্তেই ডিসিশান নিলাম। আমার সন্তানকে আমার জঠরে বড় করে তুলবো আমি।

ওকে দেখাবো পৃথিবীর আলো। সুপ্ত নেই , খুব অবিবেচকের মত চলে গেছে সে আমাকে একা ফেলে, সাথে ফেলে গেছে তার ভালোবাসার অর্পন, অমূল্য অর্ঘ্য!!! সেই অর্ঘ্যটুকু নিয়েই বাকীটা জীবন বেঁচে থাকবো আমি। আমি মানিনা কোনো নিয়ম, সংস্কার, সমাজের রীতিনীতি ভূতভবিষ্যৎ। এ সমাজ, সংসার, নিষ্ঠুর পৃথিবী কি দিয়েছে আমাকে? উত্তরে শুধুই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন! তোমার ওপর কোনো অভিমান নেই আমার সুপ্ত! তোমাকে আমি মুক্তি দিলাম সকল দায়বদ্ধতা থেকে। খুব ভোরে, চেনা শহরটা ছেড়ে পা বাড়ালাম দূরের অজানায়।

চেনা, পরিচিত গন্ডি, মানুষজন, লোকালয়, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া সব কিছু ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা। সঙ্গী শুধু আমার ভেতরে বেড়ে ওঠা একটি ক্ষুদ্র সত্বা, বিধাতার অমূল্য অর্ঘ্য, তিল তিল করে নিজের মাঝে বেড়ে ওঠা আত্নজ। তাকে নিয়ে লড়বো আমি !! জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই!!!! শেষ.... আমার গল্পের নায়িকার নাম বলা হয়নি। ধরা যাক ওর নাম রাত্রী! আর রাত্রীর জন্য একটা গান ....... যে কটাদিন তুমি ছিলে পাশে আর আমার এই লেখাটা উৎসর্গ করছি আমার এক প্রিয় পাগলাভাইয়া মাইনাচ ভাইয়াকে । ভাইয়া সব সময় ভালো থেকো তোমার মজার মজার পাগলামীগুলো নিয়ে।

আর এইটা কামরুল হাসান শাহী ভাইয়ার জন্য আমার গাওয়া দুই লাইন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.