আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেঁচে আসা ১টি ও চিরতরে হারিয়ে যাওয়া ১০০ টি গুমের গল্প ...

টুকলিফাই মারাই আমাদের কাজ, চুরা ছেঁচা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। প্রথমে একব্যক্তি পেছন থেকে ডেকে বলেন, এই যে ভাই, আপনাকে স্যার ডাকে। সেলিম বলেন, কোন্ স্যার, আমাকে কেনো ডাকবে? একথা বলেই আবার সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। যাওয়ামাত্র ৬-৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক চারদিক ঘেরাও করে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসে তোলার পর একটু সামনে এগুতেই তার মাথায় চোখমুখ ঢাকা একটি কালো টুপি পরিয়ে দেয়া হয়।

আরেকটু এগিয়ে যেতেই দুই হাতে লাগানো হয় হ্যান্ডকাপ। এরপর পায়ে শিকল। মাইক্রোবাস চলছে মাইলের পর মাইল। এভাবে এসেছে খবরটি ইত্তেফাকেঃ রাজপথ থেকে তুলে নিয়ে মাথায় চোখমুখ ঢাকা জমটুপি, দুই হাতে হ্যান্ডকাপ ও পায়ে শিকল লাগিয়ে তিনদিন আটক রাখার পর অবশেষে মুক্তি মিলেছে এক পরিবহন শ্রমিক নেতার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুলিস্তান থেকে তুলে নিয়ে তিনদিন আটক রাখা হয় তাকে।

তিনদিনের মধ্যে দুইদিনই একাধিক মাইক্রোবাস ও জিপে করে মাইলের পর মাইল রাস্তা অতিক্রম শেষে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়। সেখানে আরো কয়েকটি ঘরে বেশ কয়েকজন আটক ছিলেন। প্রায় একদিন ঐ ঘরে আটক রাখার পর তাকে আরেকটি গাড়িতে তোলা হয়। ঐ গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে নেয়ার পর রাজধানীর কাফরুল থানায় এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তার পরিচিত লোকজন থানায় গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে নিজেদের জিম্মায় নেন।

গুম থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে আসা এই ব্যক্তির নাম সেলিম চৌধুরী (৫০) তিনি ঢাকা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি। ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের ধামরাই রোড কমিটির সভাপতি। গত ২২ জানুয়ারি সাদা পোশাক পরা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে অপহূত এবং শেষমেষ মুক্তি পাওয়ায় এই ব্যক্তি গতকাল এ প্রতিবেদকের কাছে তার গুম হওয়া ও ফিরে আসার বিস্তারিত বিবরণ দেন। অপহরণের পর তিনটি দিন তার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তা মনে হলে শিউরে ওঠেন তিনি।

তার চোখমুখে ফুটে ওঠে আতঙ্কের ছাপ। একবার বললেন, ‘ভাই এই অপহরণের বর্ণনা ছাপা হলে আবার ওরা ধরে নিয়ে যাবে নাতো? সেলিম চৌধুরী পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন জুরাইন এলাকায়। অন্যদিনের মতো ২২ জানুয়ারি রবিবার বেলা সাড়ে ১০টায় বাসযোগে পৌঁছেন গুলিস্তানের মুরগিটোলায়। এরপর পায়ে হেঁটেই ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে রওনা দেন। তখনই প্রথমে একব্যক্তি পেছন থেকে ডেকে বলেন, এই যে ভাই, আপনাকে স্যার ডাকে।

সেলিম বলেন, কোন্ স্যার, আমাকে কেনো ডাকবে? একথা বলেই আবার সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। যাওয়ামাত্র ৬-৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক চারদিক ঘেরাও করে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসে তোলার পর একটু সামনে এগুতেই তার মাথায় চোখমুখ ঢাকা একটি কালো টুপি পরিয়ে দেয়া হয়। আরেকটু এগিয়ে যেতেই দুই হাতে লাগানো হয় হ্যান্ডকাপ। এরপর পায়ে শিকল।

মাইক্রোবাস চলছে মাইলের পর মাইল। তিনি বলেন, এরপর তাকে কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে তিনি জানান, ‘আমি ৩-৪ জনকে চিনি। ইতিপূর্বে একসঙ্গে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এখন ওরা অন্য নেতৃত্বের সঙ্গে।

এখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ’ ২-৩ জনের নাম জিজ্ঞাসা করায় বলেছি, ‘নাম শুনেছি। তবে তাদের সঙ্গে পরিচয় নেই। আর কোন প্রশ্নও করেনি। জানতে চাইলাম, আমার কী অপরাধ, কীজন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

কোন জবাব মেলেনি। একজন বলে ওঠেন, চুপ থাকেন। কোন কথা বলবেন না। তিন-চার ঘণ্টা ভালো রাস্তা দিয়ে চলার পর ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে উঁচু-নীচু ঢালু পথে চলছে মাইক্রোবাস। এর মধ্যে তার মুখের কাপড় ওপরে তুলে দিয়ে একজন বলেন, আপেলটা খেয়ে নেন।

বেলা সাড়ে ১০টায় চলতে শুরু করে মাইক্রোবাসটি, সারাদিন চলতে চলতে মধ্যরাতের দিকে নির্জন একটি স্থানে গিয়ে থামলো। আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামানো হয়। আমাকে ছোট একটি কক্ষে আটক রেখে সবাই চলে যায়। কোন সাড়াশব্দ নেই। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আযান হলো।

বুঝতে পারলাম ফজরের আযান। এরপর আবার আমাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। এবারের গাড়িটি খুব আরামদায়ক। সম্ভবত পাজেরো জীপ হবে। শীতের সময় হলেও গাড়ির ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালু ছিল।

গাড়ি সারাদিন চলছে আবার কখনো থেমে থাকছে। মাঝে-মধ্যেই এক ব্যক্তি তার মুখে ফল দিচ্ছে। তবে পানি খেতে দেয়া হয়নি। রাতে আরেক স্থানে থামলো। গাড়ির পাশের সিটে বসা একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’ এরপর কিছু সময় সাড়া-শব্দ নেই।

কানের কাছে একজন এসে বলল, ‘তৈরি হয়ে নেন’ সেলিম চৌধুরী বললেন, ‘এরপর কি ঘটতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু আল্লাহকে স্মরণ করছি। সুরা আর কলেমা পড়ছি। ’ দীর্ঘশ্বাস টেনে সেলিম জানান, আরেকটি স্থানে এনে রাখা হলো। অন্ধকার ঘর।

এখানে চোখমুখ ঢাকা টুপি খুলে চোখ বেঁধে দেয়া হলো। ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়ার পর তিনি ধারণা করলেন যে, সামনেও কয়েকটি এরকম ঘর আছে। পায়ে শিকল রয়েছে বলে শব্দ হতেই কানে ভেসে আসল, ‘নতুন ভাই নাকি। ভাই এখানে কোথা থেকে এলে?’ একজন বলে উঠলেন, ‘আমি ১৬ দিন ধরে আছি। তবে বুঝতে পারছি না ১৬ দিন গেলো কিনা।

’ আরেকজন বলেন, ‘তিন মাস হবে হয়তো। অন্ধকারে জমটুপির কারণে কতদিন যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। ’ এর মধ্যে একজন টর্চলাইট জ্বালিয়ে অন্ধকার কক্ষের বাইরে থেকে একটি খাবারের প্লেট ঠেলে দেয়। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে কক্ষে প্রবেশের দরজায় গ্রিল লাগানো। এই অংশ দিয়েই খাবার ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

খাবার ঠেলে দিয়ে বলা হল, ‘খেয়ে নেন’। এভাবে প্রায় ৮/৯ ঘণ্টা পার হওয়ার পর আবার তোলা হলো গাড়িতে। এই গাড়ির পেছনে বেঞ্চের মতো সিট ছিল। গাড়ি চলার কিছু সময় পর যানবাহন চলাচলের শব্দ ও গাড়ির হর্ন কানে আসছিল। তার মনে হল, ঢাকার কোন রাস্তায় গাড়ি চলছে।

প্রায় ২০ মিনিট পর একটি বাজারে এসে গাড়ি থামলো। সেখানে লোকজনের কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। গাড়ি থেকে এক ব্যক্তি তাকে বললেন, ‘এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে গেলেন!’ এ কথা বলার খানিক পর প্রথমে খোলা হলো তার হ্যান্ডকাপ। কিছুক্ষণ পর পায়ের শিকল খুলে দেয়া হল। গাড়ি থেকে ধরে তাকে নামানো হল।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানো হল দোতলায়। একটি ঘরে নিয়ে তার চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হল। তিনদিন পর চোখে আলো দেখতে পেলেন। প্রথমে সবকিছু ঘোলা দেখাচ্ছিল। চোখ কচলে তিনি সামনের টেবিলে একজন পুলিশ অফিসারকে দেখতে পান।

যারা তার চোখ খুলে দিয়েছেন তারা ছিলেন সাদা পোশাকে। সাদা পোশাকের এক ব্যক্তি পুলিশ অফিসারকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি আসামি নিয়ে নেন। ’ একটা কাগজে পুলিশ অফিসার কি যেন লিখে নিলেন। সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা চলে যাওয়ার পর ঐ পুলিশ অফিসার একটু আশ্চর্য হয়ে গেলেন বলে সেলিমের মনে হল। বললেন,‘ভাই আপনাকে নিয়েই তো পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

আপনি বসেন। ওরা আপনাকে টর্চার করেনি তো?’ কিন্তু তারা কারা আমি বুঝতে পারছি না। ’ পুলিশও কোন উত্তর না দিয়ে তিনি মোবাইল ফোনে পরিবহন নেতাদের বিষয়টি জানালেন। রাত ১২টার দিকে পরিবহন নেতারা থানায় এসে তাকে নিয়ে যান। এক্ষেত্রে তার ব্যাপারে কোন মামলাও হয়নি।

সেদিন ছিলো মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি রাত প্রায় ১২টা। সেলিম আবারো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, কারা আমাকে ধরে নিয়ে গেলো? কী কারণে নিলো তাও বুঝতে পারছি না। আমার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা জিডি পর্যন্ত নেই। তবে তিনি ঐ সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানান। একপর্যায়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাকে মুক্ত করার জন্য গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।

রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু করে। আল্লাহর রহমতে তারাই তার প্রাণ ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছেন। সূত্র নিউজে কমেন্টগুলো দেখবেন। সম্প্রতীকালে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের অংশ বিশেষে দেখুন ১০০টি গুমের পরে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার গল্প *মাঝে-মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদের কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে, কেউ বা নিখোঁজই থেকে যাচ্ছে।

*তারা জানান, যত্রতত্র লাশ পড়ে থাকে। এগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়। অনেক সময় টোকাইরা পশুর হাড় মনে করে বিক্রির জন্য মানুষের হাড় কুড়িয়ে নিয়ে যায়। *তিনজনেরই হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়।

*ভাইয়ের লাশ পাওয়ায় তাঁরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। *গাজীপুরের দক্ষিণ শালনা এলাকায় গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। *লাশ পাওয়া যাচ্ছে নদী, খাল, ডোবায়। মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে গত মঙ্গলবার তিন জনের পচা লাশ পাওয়া যায়। *ওয়ালিউল্লাহর পরিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে যে, তাদের ছেলেদের আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ করেছে।

কিন্তু' র‌্যাব বাংলাদেশের পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে এই দুইজনকে আটকের অভিযোগ অস্বীকার করে। *রাজনৈতিক কারণে বেশির ভাগ গুমের ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলোও এতে জড়িত। *বাসটির কাছে ছোট একটি গাড়ি এসে থামে এবং সেটি থেকে ইউনিফর্ম পরিহিত সাত-আট ব্যক্তি নেমে আসেন। তারা নিজেদের আইনপ্রয়োগকারী বিশেষ বাহিনী র‌্যাব ও ডিবির সদস্য বলে পরিচয় দেন।

*আগে ড্রেস পরে নিয়ে গেছে, বিচারবহির্ভূত কিলিং হয়েছে, ক্রস ফায়ার হয়েছে। এখন অন্য ধরনের কিলিং হচ্ছে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির যশোর জেলার একজন নেতাসহ মোট চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। *ওই স্থানের মাটি তোলার পর ওই যুবকের হাড়, জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি বেরিয়ে আসে। *শামীমের স্ত্রী ঝর্ণা খানম বলেন, ‘আমরা তো অনেক দৌড়ালাম।

শামীম বেঁচে আছে না মরে গেছে, এখন আমরা শুধু সেই তথ্যটা জানতে চাই। কিন্তু আমাদের মামলার কোনো গুরুত্বই নেই। *১২ জুলাই সজলের লাশ পাওয়া যায় ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে সমর সিংহ গ্রামে। *বিরুলিয়ার বাসিন্দারা জানান, এর আগেও সেখানে এক যুবকের লাশ সিমেন্টের বস্তার সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। অজ্ঞাত ওই লাশের হাত পেছনে বাঁধা ছিল।

*মোহাম্মদপুর থানার কাছে সাদা পোশাকধারী লোকেরা তার গাড়ির গতিরোধ করেন। বন্দী করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। গাড়ির ভেতরের ‘বন্দিদশা' থেকে নাজমুল এক সহকর্মীকে শুধুই বলতে পারেন, ‘ভাই, আমাকে তো ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ' আর কোনো কথা বলতে পারেননি। উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তার স্ত্রী ও অন্যরা থানা-পুলিশ র‌্যাবের কাছে যান।

অসহায় পরিবারটির বুক ফাটা কান্নায় মন গলেনি তাদের। রাত না পোহালে কিছুই করার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয় তারা। রাত পোহানোর পর নাজমুলের মৃতদেহ মেলে গাজীপুর চৌরাস্তার অদূরে। *বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশির পর পাওয়া গেলো একটি নতুন মাটি খোঁড়া গর্তের ঠিকানা। গর্ত খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো প্রায় অর্ধগলিত বিকৃত এক তরুণের মৃতদেহ।

*আইনি জটিলতার আশঙ্কায় এসব লাশ দেখেও পুলিশকে খবর দেয় না স্থানীয় বাসিন্দারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশকে জানিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় স্থানীয়রা লাশ মাটিতে পুঁতে রেখেছে। *রাতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে মানুষ। একবার কেউ নিখোঁজ হলে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। *পরদিন ১৩ জুলাই ইমরানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ার একটি ইটভাটায়।

*রিপোর্টে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের একটি ব্রিজের নিচে অনেক দিন ধরে ভেসে আছে অজ্ঞাত পরিচয় একটি লাশ। স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে কচুরিপনা সরিয়ে লাশ দেখান। অনেক দিন পানিতে ভাসতে থাকায় লাশে পচন ধরেছে। *র‌্যাবের পোশাকে, পুলিশের পোশাকে কিংবা সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সব সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে তারা এমন কাউকে ধরেনি কিংবা এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে তারা জানে না।

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এসব ঘটনায়। *সাধারণভাবে মানুষের ধারণা, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে। এই ধারণা থেকে মানুষ অসহায়বোধ করতে শুরু করেছে। কারণ, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হলে তো সাধারণ মানুষের যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। ’ *বিচারবহির্ভূত হত্যা বা গুমের অনেক ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় অভিজাত বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‌্যাবকে।

এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সংস্থাগুলোর মতে, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু এবং নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা আছে এর মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে কাউকে গুলি করে হত্যার পর বন্দুকযুদ্ধের গল্প ফাঁদা হচ্ছে। *মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়, যাদের গুলি চালিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। কয়েকদিন আগেও ধলেশ্বরী নদী থেকে আরও তিনটি লাশ উদ্ধার হয়েছিল।

*রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের যত্রতত্র অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। দুই কিলোমিটার এলাকায় গত কয়েক মাসে অন্তত ৮টি লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আশুলিয়া, বিরুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ধান ক্ষেত, ব্রিজের নিচসহ বিভিন্নস্থানে লাশ পাওয়া গেছে। *আইনি জটিলতার আশঙ্কায় এসব লাশ দেখেও পুলিশকে খবর দেয় না স্থানীয় বাসিন্দারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশকে জানিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় স্থানীয়রা লাশ মাটিতে পুঁতে রেখেছে।

*পঞ্চবটি এলাকায় প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত এক যুববকে মাটিচাপা দেন কৃষক দ্বীন ইসলাম। তিনি জানান, ওই লাশ কেউ না নেয়ায় তিনি কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে মাটিচাপা দিয়েছেন। *পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে গত দেড় মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪৬৫টি। এর মধ্যে ৩৩৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৩ দিনে খুন হয়েছে ১২৯টি, ধর্ষণ ৪২টি।

এর মধ্যে আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ১০ জন। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ জন করে খুন হচ্ছে। অপমৃত্যু, গুম, হত্যা, ক্রসফায়ার, দুর্ঘটনায় দশ পনের জনের মৃত্যুর খবর আজ প্রতিদিনের ব্যাপার। অজ পাড়া গা থেকে শুরু করে রাজধানীর সুরক্ষিত বাসা থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বেমালুম অস্বীকার করা হচ্ছে। কি ভিষন ভয়ংকর ব্যাপার।

নাগরীকের নিরাপত্তার এরকম ভয়াবহ অবস্থা কোন গৃহযুদ্ধরত রাষ্ট্রেও গ্রহন যোগ্য না। বাতাসে কানপাতলে শোনা যায় আজম, আনসার, নাজমুল, করিম, শামীম, ইসমাইল, ইলিয়াস, মাসুম, জসীমউদ্দীন, কালাম, বাশার, রহিম, ইস্রাফিল, সারোয়ার, আকতার, নূর মোহাম্মদ, আবদুল মান্নান, ইকবাল, জুয়েল, রাজীব, মিজানুর, সজল, ইমরান, মুকাদ্দাস, ওয়ালিউল্লাহ, সোহাগ, রফিকুল সহ আরও নাম না জানা অসংখ্য গুমের প্রেতাত্মাদের নিরবে, নিশব্দে এই নিষ্ঠুর পশুর সমাজকে অভিশাপ দিয়ে যাওয়ার আর্তচিৎকার। এবার সবগুলো ঘটনা জোরা দিয়ে ভাবুন। উপরের শ্রমিক লীগের এই নেতার খবরটি ছয় মাস পরে প্রকাশ করে আসলে সূক্ষ ভাবে জনগণকে একটি প্রচ্ছন্ন ধমক দেয়া হলো। অথচ দেখুন আইনশৃংখলা বাহিনীর যে কাউকে গ্রেতার বা ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষত্রে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনেই ছিল, কোন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাক কাউকে আটক করতে পারবে না।

এমন কি সাদা পোশাকের কোন গোয়েন্দা সংস্থাও কাউকে আটক করার সময় সাথে পোশাকধারী বাহিনী রাখতে হবে এবং নিজেদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কোথায় নেয়া হবে তা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি ও তার আত্মীয়দের জানাতে হবে এবং আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ আদালতে হাজির করতে হবে। এটা সভ্য দেশের প্রাথমিক পূর্শবর্ত, আজ থেকে ২০০ বছর আগে বৃটিশ আমলেই আইনটি করা হয়েছিল, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সেদিন গুলিস্তানের আম জনতার কি কিছুই করার ছিল না ???? আইন কি বলে ? আইনও কিন্তু নীতিগত ভাবে অনেক সময় গণধোলাই সমর্থন করে ...তাই একমাত্র জনগণ ছাড়া জনগণকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। যেখানেই আইনের ব্যতিক্রম হবে সেখানেই গণপিটুনি শুরু করতে হবে। বাঙালী গণ পিটুনিতে অনেক নিরিহ ও ছিচকে চোরও মেরেছে।

এবার সময় এসেছে রিয়েল পরিক্ষা দেয়ার। সব কাপুরুষ না সত্যিকার পুরুষ ...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.