আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভঙ্করের ফাঁকি ( ডিজিটাল ফাঁকি) !!

এ আকাশ এমন আকাশ, কখনো ছায় মেঘে- সে আবার সুখেই ভাসে, দখিন হাওয়া লেগে বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল অনেক দিনের হালচাল। ইদানীং পণ্য ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত নতুন ভাওতামি আর ধোঁকার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেন তেন দোকান নয়, খোদ ব্র্যান্ডেড এবং চেইন শপ গুলোতে প্রতারণার ভুরি ভুরি নমুনা লক্ষণীয়। আমিই বিভিন্ন সময় একাধিকবার সম্মুখীন হয়েছি এসব ঘটনার। ১/ সাম্প্রতিক হরলিক্স এর বিজ্ঞাপনঃ বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট বিবিধ যৌক্তিক নীতিমালা আছে, যা অনুসরণ করে বিজ্ঞাপন তৈরি বাঞ্ছনীয়।

তবে আজকাল মনে হচ্ছে, নীতিমালা শুধু পুঁথিগত। হরলিক্সের সাম্প্রতিক বিতর্কিত বিজ্ঞাপন নীতিমালা অনুসৃত নয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিধি-বিধানের সংকলন- এর অন্তর্গত বিজ্ঞাপন নীতিমালায় (২.১৫) উল্লেখ আছে (১৬ অনুচ্ছেদ)- বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত পণ্য বা তার কাঁচামাল সম্পর্কিত এমন কোন গুণের কথা দাবি করা যাবেনা, যা আদতে প্রমাণ করা অসম্ভব। এতে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রতারিত হয়। আবার ২৭ অনুচ্ছেদ মতে- শিশুদের স্বাভাবিক বিশ্বাস ও স্বভাবসুলভ সরলতা কাজে লাগিয়ে চতুর কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রয়াস গ্রহণযোগ্য নয়।

এদেশে হরলিক্স বহুদিন যাবত সুনামধারী পণ্য হিসেবে ব্যবসা করে আসছে, দ্বিমত নেই। তবে সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে এতো অপেশাদারী চেতনা আগে কখনো চোখে পড়েনি। চতুর্দিকেই বিতর্কের কানাঘুষা। ২ গ্লাস হরলিক্স =৬৬৬ গ্রাম ইলিশ মাছের সমান আয়রন, ছয়টি লেবুর সমান ভিটামিন সি, কিংবা এক কেজি পালং শাকের গুনাগুণ- এ সমকক্ষতা মনুষ্য প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত কাঁচামালের অর্জন করা অসম্ভব। মেডিক্যাল সায়েন্সও তাই বলে।

চটকদার বিজ্ঞাপনে কোমলমতি শিশু আর আবেগী মায়েদের ধোঁকা না দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কথাটি শুধু হরলিক্সের জন্য নয়, সব বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ২/ চেইন শপ+ ব্র্যান্ড বেকারিঃ আধুনিক সাজসজ্জা আর নান্দনিকতার পরিবেশ প্রশংসনীয়। তবে পণ্য মূল্য নিয়ে কারচুপি নিশ্চিত ভাবে আইনের পরিপন্থী। বিএসটিআই বিধান অনুযায়ী, কোন খাদ্য পণ্যে ৬ টি বিষয়ের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক- ক) উৎপাদন তারিখ খ) মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ গ) সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ঘ) উপাদান ঙ) নীট ওজন চ) উৎপাদন ঠিকানা।

আদতে দেখা যাচ্ছে, কোন না কোন পণ্যে উক্ত এক বা একাধিক বিষয়ের অসামঞ্জস্যতা থাকছেই। কম বেশী সব চেইনশপ গুলোর খাদ্যপণ্যের গায়ে অনেক সময়ই দাম লেখা থাকে না, ফলে ক্রেতাদের ফাঁকিতে পড়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণ করে, কম্পিউটারে অত্যধিক দাম ইনপুট করে দেদারসে ব্যবসা চলছে। অথচ দাম উল্লেখ থাকলে অসামঞ্জস্য অবস্থার অবতারণা হয় না। এ অর্ধে দেখা যাচ্ছে, বিএসটিআই নীতিমালায় কানুন ও শাস্তির বিধান ঠিকই আছে, সে অনুযায়ী বাস্তব প্রয়োগ নেই।

৩/ ফ্যাশন হাউজঃ লুবনান ফতুয়া, পাঞ্জাবী নিয়ে তাদের কারবার। তবে দাম-দর নিয়ে ভীষণ অসঙ্গতি। একে তো দাম নির্ধারিত (ফিক্সড) তার উপর ৮-১০% ভ্যাটের ঘা। পোশাকে দামের যে ট্যাগ থাকে সেখানে স্পষ্ট লেখা (inclusive of vat) অর্থাৎ ভ্যাট সংযুক্ত মূল্য। সেক্ষেত্রে আর ভ্যাট নেওয়ার কথা নয়।

অথচ বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। ভ্যাটযুক্ত চড়া দামের উপর আবারো ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে একেকটি পোশাকে দেড়-দুইশ টাকা বেশি গুনতে হয়। যেটি রীতিমত ভোক্তা সংরক্ষণ আইন বিরোধী। কিছুদিন আগে একটি ফতুয়া কিনতে গিয়ে বহুক্ষণ বাকবিতণ্ডা করে অতিরিক্ত টাকা ফেরাতে সমর্থ হয়েছিলাম। কিন্তু পরিষ্কার হয়রানি ও জবরদস্তি জনসাধারণের বোধগম্য নাও হতে পারে।

সুতরাং, সাধারণ জনগণ অন্তত কেনার সময় সচেতন থাকবেন। চোখ-কান খোলা রেখে ক্রয় বিক্রয় করা সময়ের দাবী। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ বাস্তবায়নে এ সব ফাঁকির সুরাহা করা জরুরী। সংশ্লিষ্ট সুধিজনদের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।