আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখী মানুষের র‍্যাঙ্কিং এবং শুভঙ্করের ফাঁকি

জেগে, ঘুমিয়ে, আড্ডায়, গল্পে, প্রার্থনায়, কবিতায়, সিনেমায়- সবখানে শুধু স্বপ্ন দেখি। গতকাল থেকেই দেখলাম ভার্চুয়াল জগতে সবাই বেশ উত্তেজিত একটা র‍্যাঙ্কিং নিয়ে। র‍্যাঙ্কিং এ বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ নাকি বিশ্বের ১১তম সুখী দেশ !! বাংলাদেশ থেকে বেশ ভালোভাবেই পিছিয়ে আছে পৃথিবীর মহাপরাক্রমশালী দেশগুলো। যেমন- ভারত (৩২), যুক্তরাস্ট্র (১০৫), যুক্তরাজ্য(৩১), চীন (৫০), রাশিয়া (১২১) ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হল, আসলেই এই র‍্যাঙ্কিং আমাদের ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর।

বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং এর বিশ্লেষণে গেলে আমরা দেখতে পারি যে র‍্যাঙ্কিংটা করা হয়েছে তিনটা উপাত্তের গড় থেকে। প্রথম উপাত্তঃ কতটূকু ভালো আছে দেশের মানুষ (Experienced well being): এখানে বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং ১৫১টা দেশের মাঝে ৮৮তম। এ ব্যাপারে আসলে কিছু বলার নাই। কারণ বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে হাজার অনিয়ম আর কষ্টের মাঝেও মানুষজন আনন্দের সাথে জীবন পার করে। কিন্তু অধিকাংশ অধিবাসীর জীবনযাত্রার মান যেহেতু নিম্ন তাই বাংলাদেশ বেশি উপরে উঠতে পারেনি।

দ্বিতীয় উপাত্তঃ গড় আয়ু (Life expectancy): বাংলাদেশের অধিবাসীদের গড় আয়ু সারাবিশ্বের তুলনায় বেশ নিচের সারিতে। কিন্তু একেবারে খারাপ অবস্থায়ও নেই। তাই এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১টা দেশের মাঝে ৯৬তম। তৃতীয় উপাত্তঃ ব্যবহৃত প্রাকৃতিক শক্তি (Ecological footprint): এখানেই বাংলাদেশ ছক্কা মেরে দিলো। অনেক রথী-মহারথী দেশকে পিছনে ফেলে ৩ নম্বরে আসাটা চাট্টিখানি কথা না।

কিন্তু শুভংকরের ফাকিটা এখানেই। বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ। এখানে শিল্প কারখানা অনেক কম। তাই অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের মত প্রকৃতির উপর অত্যাচার এখানে হয় না। এর মানে এই না যে, আমাদের অবস্থা ভাল।

উন্নত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এতই বেশি যে, পৃথিবী গ্রীণ হাউজ এফেক্টের সম্মুখীন হচ্ছে। এবং এর কুফল ভোগ করছে আমাদের মত স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এবং অদুর ভবিষ্যতে এর জন্য আমাদের হয়তোবা চরম মূল্য দিতে হতে পারে। আমাদের নিজেদের দেশের অবস্থাও কিন্তু ভালো না। এক ঢাকা শহরেই পরিবেশ দূষণের মাত্রা এতই বেশি যে এটি এখন পৃথিবীর অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী নগরী হওয়ার দিকে ধাবমান।

তাহলে অবস্থা কি দাড়াল ?? আমরা যে র‍্যাঙ্কিং নিয়ে এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছি তা আসলে আমাদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে না। বরঞ্চ এটা আমাদের জন্য একটা অশনি সংকেত। এটা ঠিক যে জাতিগতভাবে আমরা অনেক অতিথিবৎসল এবং অল্পতেই তুষ্ট সম্প্রদায়। কিন্তু বাস্তবতা শুধু "সাদা মন" নিয়ে চলে না। নিজেকে সাময়িকভাবে সুখী ভাবলেও ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা নিয়ে ভাবাটা অত্যন্ত জরুরী।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।